ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

রিফাত হত্যা

এবার অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জনের রায়ের অপেক্ষা

  বরগুনা প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০১ অক্টোবর ২০২০, ১৭:০৪  
আপডেট :
 ০১ অক্টোবর ২০২০, ১৭:৩২

এবার অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জনের রায়ের অপেক্ষা
ফাইল ছবি

আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক দশ আসামির মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে বুধবার। হোটেল রেস্তোরা কিংবা পাড়া-মহল্লা; যুবক থেকে বৃদ্ধ সকলের মুখে মুখে রিফাত শরীফ হত্যার রায়ের কথা। এক কথায় আলোচনা সমালোচনার তুঙ্গে উঠেছে এই মামলার রায়। এখন শুধু অপেক্ষা আইনের সংঘাতে জড়িত অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জনের রায় ঘোষণার।

টেলিভিশনের টকশো, ফেসবুক কিংবা ইউটিউবেও আলোচনার ঝড় বইছে। তবে এই মামলার রায়ে বাদী আবদুল হালিম দুলাল শরীফসহ সর্বস্তরের সাধারণ জনগণ সাধুবাদ জানিয়েছেন। যারা নিরপরাধ তাদের যেনো মুক্তি হয়, এমন প্রত্যাশাও রিফাত শরীফের বাবার। তিনি এই রায়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন আদালেতের প্রতি। মিন্নিসহ ছয় জনের মৃত্যুদণ্ড ও পঞ্চাশ হাজার টাকা করে জরিমানা করায় অধিকাংশই সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

কিন্তু মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হক মেয়ের বিয়ের খবর গোপন করে আবার বিয়ে দেয়ায় তারও বিচার হওয়া উচিৎ বলেও অনেকেই সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের অভিমত প্রকাশ করেছেন।

রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার পরে প্রধান আসামি নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে বরগুনা শহরসহ আশেপাশের এলাকার মানুষের মনে এক ধরণের স্বস্তি নেমে আসে। গতকাল ছয় আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি ঘোষণার খবরেও তেমনিই এক স্বস্তিদায়ক পরিবেশ বিরাজ করতে দেখা গেছে বরগুনাবাসীর মধ্যে।

তবে অনেকের আলোচনায় উঠে এসেছে একটু ভিন্ন প্রসঙ্গ। যে প্রসঙ্গটি অনেক আগেই আলোচনায় আশা দরকার ছিলো। “০০৭” বন্ড গ্রুপের শতাধীক সদস্য থাকা সত্ত্বেও কেনো মাত্র নয়ন বন্ডসহ পঁচিশ জনকে আসামি করা হলো? তাহলে কী বাকি সদস্যরা এ ঘটনার বাইরে ছিলো?

এমন হাজারো প্রশ্ন এখন সাধারণ মানুষের অন্তরে। তবে পুলিশের একাধীক কর্মকর্তা বলছেন, একটি ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে ফেসবুক ফ্রেন্ড থাকলে ইচ্ছে করলে বিদেশে থাকা বন্ধুটিকেও যুক্ত করা সম্ভব। তাছাড়া ওই সকল সদস্যদের কোন উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। মামলায় এক্টিভ সদস্য হয়ে প্রত্যক্ষ ও বাহিরে থেকে পরোক্ষভাবে কিংবা ওই কলেজ ও পাশে থাকা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সিসি টিভির ফুটেজে ওঠা ভিডিও দেখে আসামই করা হয়েছে।

অন্যদিকে গতকাল রায়ের পরে আর বাড়ি ফেরা হয়নি মিন্নির। কনডেম সেলে একাই রাত কাটিয়েছেন বলে জানা গেছে। বর্তমানে দেশে ৪৯ জন নারী ফাঁসির দণ্ড মাথায় নিয়ে বিভিন্ন কারাগারের কনডেম সেলের বাসিন্দা। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে এই সেলের সর্বশেষ বাসিন্দা হয়েছেন বরগুনার আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি।

বুধবার রিফাত শরীফ হত্যা মামলার রায় ঘোষণার পর মিন্নিকে বরগুনা কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই কারাগারে আর কোনো নারী ফাঁসির আসামি না থাকায় তিনি একাই হয়েছেন কনডেম সেলের বাসিন্দা।

জানতে চাইলে বরগুনা জেলা কারাগারের জেল সুপার মো. আনোয়ার হোসেন রায়ের রাতে বলেন, ফাঁসির আসামি হিসেবে তাকে (মিন্নি) কনডেম সেলে রাখা হয়েছে। এই কারাগারের নারী ইউনিটে ১৯ জন বন্দি ছিলো। মিন্নিকে নিয়ে বর্তমানে ২০ জন আসামি বন্দি রয়েছে।

কারা সূত্র জানায়, প্রতিটি কনডেম সেল কমবেশি ১০ হাত দৈর্ঘ্য ও ৬ হাত প্রস্থের হয়। প্রতি সেলে তিন থেকে চারজন করে ফাঁসির আসামিকে রাখা হয়। এখানে রয়েছে গ্রিলঘেরা বারান্দা। ওই বারান্দাতেই তাদের হাঁটার সুযোগ মেলে। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টাই তাদের থাকতে হয় সেলের ভেতর ও বারান্দায়।

এক কারা কর্মকর্তা জানান, প্রতিদিন দুপুরে গোসল করার জন্য তাদের বের হতে দেয়া হয়। গোসলের আগে সেলের আশপাশে ১৫ থেকে ২০ মিনিট হাঁটার সুযোগ দেয়া হয়। এভাবেই মাসের পর মাস, বছরের পর বছর পেরিয়ে যাবে তাদের।

ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তরা মাসে একদিন সুযোগ পায় তাদের আত্মীয়-স্বজনের সাথে দেখা করার। তখন তারা সেল থেকে বেরিয়ে কারাগারের গেটে স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন।

সূত্র জানায়, ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে একটি করে থালা, বাটি ও কম্বল। এর বাইরে আর কোনো ধরনের সুযোগ-সুবিধা নেই।

রিফাত হত্যার ঘটনায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- মো. রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজি (২৩), আল কাইউম ওরফে রাব্বি আকন (২১), মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত (১৯), রেজওয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয় (২২), মো. হাসান (১৯), মো. মুসা (২২), আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি (১৯), রাফিউল ইসলাম রাব্বি (২০), মো. সাগর (১৯) ও কামরুল ইসলাম সাইমুন (২১)।

মামলার বিবরণীতে বলা হয়েছে, প্রথমে মিন্নি নয়নকে বিয়ে করে। বিষয়টি গোপন রেখে ফের রিফাত শরীফকে বিয়ে করে মিন্নি এবং নয়ন বন্ডের সাথে গোপনে যোগাযোগ ও বাসায় যাতায়াত অব্যহত রাখে। এ নিয়ে রিফাত শরীফের সাথে মিন্নির দ্বন্দের সৃষ্টি হয়। সবশেষ হেলাল নামের এক যুবকের কাছ থেকে রিফাত শরীফের মুঠোফোন কেড়ে নেয়া থেকে নয়নের সাথে রিফাতের দ্বন্দ চূড়ান্ত রূপ নেয়। সব মিলিয়ে মিন্নি, নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজীসহ অন্যরা আগের দিন বিকেলে সরকারি কলেজের শহীদ মিনারের কাছে গোপন বৈঠক করে রিফাত শরীফকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে। তাদের পরিকল্পনা ও ছক মেতাবেক পরের দিন রিফাত শরীফকে হত্যা করা হয়।

এছাড়াও অভিযোগপত্রে রিফাতকে নয়ন বন্ডরা কুপিয়ে জখম করার পরও মুঠোফোনে যোগাযোগ ও নয়ন বন্ডের সাথে মুঠোফোনে ক্ষুদে বার্তা দেয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

তদন্তকারী কর্মকর্তার আদালতে দাখিল করা অভিযোগপত্রে মিন্নির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিপরীতে নয়ন বন্ডের মায়ের নামে নিবন্ধিত একটি সিম গোপনে মিন্নি ব্যবহার করত এমন অভিযোগ এনে ওই নম্বরের সাথে নয়ন বন্ডের বিভিন্ন সময়ে কল লিস্ট ও কল ডিটেইলস জমা দিয়েছেন।

এছাড়াও আলামত হিসেবে নিহত নয়ন বন্ডের বাসা থেকে জব্দ করা স্যালোয়ার কামিজ, আই ভ্রু, মিন্নির ছবি, মাথা আচড়ানো চিরুনি, চিরুনিতে প্যাঁচানো নারীদের চুল জমা দেয়া হয়েছে। অভিযোগপত্রের বিবরণীতে অধিকাংশ জায়গায় মিন্নির বিরুদ্ধে রিফাত হত্যায় ষড়যন্ত্রের কথা বলা হয়েছে।

গত বছরের ১৬ জুলাই মিনিকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২৯ আগস্ট মিন্নির জামিন মঞ্জুর করেন উচ্চ আদালত এবং ৩ সেপ্টেম্বর কারাগার থেকে মুক্ত হয় মিন্নি। মামলার একমাত্র জামিনে থাকা আসামি আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির বিরুদ্ধেও হত্যার পরিকল্পনা ও সরাসরি অংশ নেয়ার অভিযোগে ৩৪ ও ৩০২ ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়।

গত বছরের ২৬ জুন রিফাত শরীফ নিহত হওয়ার পর ২৭ জুলাই নিহত রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে বরগুনা থানায় ১২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৫/৬ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এতে নিহতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দীকা মিন্নিকে প্রধান সাক্ষী রাখা হয়। ২ জুলাই ভোরে পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় “০০৭” বন্ড গ্রুপের প্রধান নয়ন বন্ড। ১ সেপ্টেম্বর রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দুই ভাগে বিভক্ত অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেয় পুলিশ।

ঘটনায় জড়িত প্রাপ্তবয়স্ক ১০ জন ও কিশোর ১৪ জনের আলাদা বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়। প্রাপ্তবয়স্কদের অভিযোগপত্রে মিন্নিকে ৭ নম্বর আসামি রাখা হয়। বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ ৭৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ ও অন্যান্য তথ্য উপাত্ত উপস্থাপনসহ ৪৩ কার্যদিবসের মধ্যে বিচারিক কার্যক্রম শেষ করে ৩০ সেপ্টেম্বর রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ করেন এবং যার পরিসমাপ্তি ঘটেছে। রিফাত শরীফ হত্যার প্রথম রায়ে প্রাপ্তবয়স্কদের পর এবার অপ্রাপ্তবয়স্ক আইনের সংঘাতে জড়িত ১৪ আসামির দ্বিতীয় রায় ঘোষণা হলেই বহুল আলোচিত মামলার বিচার সমাপ্ত হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত