ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

শিক্ষার্থীকে থুতু খাইয়েও থামেননি শিক্ষক

  পাবনা প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১০ অক্টোবর ২০২০, ১৪:৩৮  
আপডেট :
 ১০ অক্টোবর ২০২০, ১৪:৪৬

শিক্ষার্থীকে থুতু খাইয়েও থামেননি শিক্ষক
প্রতীকী ছবি

একজন শিক্ষার্থীর ভালো লেখাপড়ার পেছনে তার শিক্ষক ও অভিভাবকের গুরুত্ব সমান। এ কারণে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্কটাও সহজ হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু পাবনার এ ঘটনা সম্পূর্ণ উল্টো।

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়নের কদিমপাড়া বুড়া দেওয়ান নূরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক পিয়ারুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ, এক ছাত্রকে কোমড়ে শিকল পেঁচিয়ে খাটের সঙ্গে বেঁধে রাখেন তিনদিন। শুধু তাই নয় মেঝেতে থুতু ফেলে সেটাও খাওয়ান ছাত্র মোবারককে (১১)।

জানা যায়, শুক্রবার জুমার নামাজের জন্য ছাড়া পেয়ে শিশুটি পালিয়ে আসলে বিষয়টি ফাঁস হয়। এরপর রাতে ঈশ্বরদী থানায় এ ঘটনায় অভিযোগ করেন শিশুটির বাবা- মা। রাতেই পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তিনজনকে আটক করেছে।

নির্যাতনের শিকার মোবারক আটঘরিয়া উপজেলার চাঁদভা ইউনিয়নের বাঁচামরা গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে।

আটকরা হলেন- মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হাফেজ আব্দুল মোমিন, শিক্ষক পিয়ারুল ইসলাম ও হেফজ সম্পন্ন করা ছাত্র সাব্বির আহমেদ।

মোবারকের বাবা নজরুল ইসলাম ও মা মুর্শিদা খাতুন থানায় দায়ের করা অভিযোগে জানান, মাদ্রাসায় নির্যাতন করায় তাদের ছেলে মোবারক মাদ্রাসা থেকে কয়েকদিন আগে পালিয়ে যায়। সে ঈশ্বরদীর দাশুড়িয়ায় তার খালার বাড়ি গিয়ে ওঠে।

সেখান থেকে তাকে বুঝিয়ে গত বুধবার আবার মাদ্রাসায় পাঠানো হয়। মাদ্রাসায় যাওয়ার পর তার ওপর শুরু হয় নতুন করে নির্যাতন। মোবারককে লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে খাটের সঙ্গে আটকে রাখা হয়। এরপর পিটুনি দেয়া হয়। শুধু তাই নয় মেঝেতে একজন থুতু ফেলে সেটা তাকে দিয়ে সাতবার খাওয়ায়।

শুক্রবার সকালে স্থানীয় কয়েকজন শিকল বাঁধা অবস্থায় তাকে দেখেন ও প্রতিবাদ করেন। এরপর জুমার নামাজ পড়ার জন্য মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ তাকে ছেড়ে দেয়। জুমার নামাজ আদায়ের সময় মোবারক পালিয়ে আসে।

মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আব্দুল করিম জানান, তিনি ঘটনার সময় মাদ্রাসায় ছিলেন না, ছুটিতে ছিলেন। তবে তার ছুটিতে মাদ্রাসা কমিটির সভাপতির অনুমোদন ছিল কি-না জিজ্ঞেস করলে তখন তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি। তিনি জানান, এ ঘটনার জন্য শিক্ষক পিয়ারুল ইসলাম দায়ী।

অভিযুক্ত শিক্ষক পিয়ারুল ইসলাম বলেন, আমি তাকে বেঁধে রাখিনি। ওই শিক্ষার্থীর এক আত্মীয় হেফজ সম্পন্ন করা সিনিয়র ছাত্র সাব্বির আহমেদ বেঁধে রেখেছিলেন। তবে মারধরের বিষয় ও মেঝেতে ফেলা থুতু খাওয়ানোর বিষয়ে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

মাদ্রাসাটির সিনিয়র ছাত্র সাব্বির আহম্মেদ জানান, মোবারক পালিয়ে যাওয়ার কারণে তার দাদি বেঁধে রাখার কথা বলেছিলেন। তাই তাকে বেঁধে রাখা হয়েছিল। শিক্ষক পিয়ারুল ইসলাম তাকে বেদম মারধর করেছে।

এ ঘটনায় পাবনা আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আলহাজ মাওলানা মো. আনছারুল্লাহ বিস্ময় প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, খুবই অমানবিক কাজ করা হয়েছে শিশুটির সঙ্গে। মৃদু শাসন আর নির্যাতন ভিন্ন বিষয়।

এ ব্যাপারে ঈশ্বরদী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেখ নাসীর উদ্দিন জানান, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় আনা হয়েছে।

পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ঈশ্বরদী সার্কেল) ফিরোজ কবীর জানান, এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/কেআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত