ঢাকা, রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

ব্লাস্টকর্মীর সাথে কী ঘটেছিল টেকনাফের সেই চেকপোস্টে?

  মনতোষ বেদজ্ঞ, কক্সবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১২ অক্টোবর ২০২০, ১৮:৪৩  
আপডেট :
 ১২ অক্টোবর ২০২০, ১৯:০৮

ব্লাস্টকর্মীর সাথে কী ঘটেছিল টেকনাফের সেই চেকপোস্টে?

কক্সবাজারের টেকনাফে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হাতে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) এর এক কর্মী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গণমাধ্যমে এ ধরনের একটি সংবাদ প্রকাশের পর ঘটনাটি নিয়ে তোলপাড় হয়। তবে ওই নারী আসলেই ওইদিন ধর্ষণের শিকার হয়েছেন কিনা তা নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে।

রোববার ঘটনাটি নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে। তবে ঘটনাটির সত্যতা নিয়ে ব্লাস্ট'র ওই নারী কর্মীর কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। ঘটনার ব্যাপারে ওই নারী এখনো কোন ধরনের আইনগত ব্যবস্থা নেননি।

ঘটনার দিন তল্লাশিচৌকিতে ব্লাস্ট'র কর্মীকে তল্লাশির পরমুহূর্তে ধারণ করা ৩৮ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফুটেজ বাংলাদেশে জার্নালের হাতে এসেছে। ওই ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একজন নারী সদস্য ব্লাস্ট'র ওই কর্মীকে জিজ্ঞেস করছেন, ‘আপনার মালামাল সব ঠিক আছে?’

জবাবে ব্লাস্ট'র কর্মী বলেন, ‘ঠিক আছে। কিন্তু যেটা করলেন সেটা খুব নিন্দনীয় একটা কাজ করলেন। আমি অতটুকু সন্দেহভাজন ছিলাম না। আপনি আমাকে যে আচরণটা করলেন।’ এ কথা বলার পর তিনি তল্লাশিকক্ষ থেকে জিনিসপত্র নিয়ে বেরিয়ে যান।

এ নিয়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) শাহীন মো. আব্দুর রহমান চৌধুরী বলেন, শুক্রবার সকালে ৩০ বছর বয়সী এক নারী হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসেন। তার সঙ্গে কথা বলার পর তাকে হাসপাতালে ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়।

চিকিৎসকদের ওই নারী জানিয়েছেন, তিনি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। এরপর তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়।

আরএমও শাহীন মো. আব্দুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘পরে ওই নারীর দেয়া বক্তব্যগুলো নিয়মানুযায়ী হাসপাতালের নথিতে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এরপর তার ডিএনএসহ অন্যান্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সেগুলো পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট পেলে প্রকৃত বিষয় জানানো সম্ভব হবে।’

তবে ওই নারীর দেয়া তথ্যমতে প্রাথমিকভাবে ঘটনাটি শ্লীলতাহানির পর্যায়ের বলে মন্তব্য করে ডা. শাহীন বলেন, ওই নারী শনিবার সকালে চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল ত্যাগ করেছেন।

রোববার একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত খবরের তথ্য মতে, ‘ওই নারীর বাড়ি রাঙ্গামাটিতে। তিনি বাংলাদেশে লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) টেকনাফের হ্নীলা শাখায় কাজ করছেন। তিনি হ্নীলাতেই অবস্থান করেন।’

আলোচিত এ ঘটনা নিয়ে ওই নারীর ব্যক্তিগত ফোন নম্বরে কথা বলতে বেশ কয়েকবার কল দেয়া হলেও সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়। তাই তার বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।

ওই নারীকে বহনকারী অটোরিকশার চালক আব্দুল আমিন বলেন, ব্লাস্ট'র কর্মীসহ পাঁচজনকে নিয়ে টেকনাফ যাওয়ার পথে যথানিয়মে তাকে তল্লাশি করে দমদমিয়া চেকপোস্টের বিজিবির নারী সদস্যরা। পাঁচজন যাত্রীর মধ্যে ২ জন ছিলেন নারী এবং ৩ জন ছিলেন পুরুষ।

রোববার প্রকাশিত জাতীয় দৈনিকের খবরে ব্লাস্টের কক্সবাজার প্রকল্প সমন্বয়কারি তুষার রায় বলেছিছেন, ‘ভিকটিম হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর মামলা করতে পারেন। তিনি মামলা করলে তাকে সব ধরণের আইনগত সহায়তা দেব।’

কিন্তু তুষার রায়ের ব্যক্তিগত মুঠোফোন নম্বরে কল দেয়া হলে বাংলাদেশ জার্নালকে জানান, এ বিষয়ে তিনি গণমাধ্যমের কথা বলতে রাজী নন। এ কথা বলেই ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

ঘটনার বিষয়ে বিজিবির টেকনাফ ২ ব্যাটালিয়ানের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. ফয়সল হাসান খান বলেন, ভিটকটিম নারী বিজিবির কাছে এখনো কোন অভিযোগ করেননি। এ ধরণের একটি বিষয় সরকারি গুরুত্বপূর্ণ একটি সংস্থার মাধ্যমে জেনেছেন তিনিও।

তবে এতে ধর্ষণের মতো যে ঘটনার কথা বলা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বনোয়াট বলে দাবি করেন বিজিবির এই কর্মকর্তা।

ফয়সল হাসান বলেন, ‘এ ধরণের তথ্য যে সত্য নয় সেটির স্বপক্ষে বিজিবির কাছে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। বিজিবির চেকপোস্টে দায়িত্বরত সদস্যদের তল্লাশিসহ দায়িত্ব পালনের ভিডিও ফুটেজ (সিসিটিভি) ধারণ করা আছে। অন্যান্য নারীদের যেভাবে তল্লাশি করা হয় ঠিক একইভাবে তাকেও তল্লাশি করে বিজিবির নারী সদস্যরা।’

বিজিবির এ অধিনায়ক জানান, অটোরিক্সায় থাকা যাত্রীদের তল্লাশি করতে করতে চাইলে ওই নারী বিজিবির সদস্যদের বাধা দেয়। এতে ওই নারী বিজিবির সদস্যদের সঙ্গে বাক-বিতণ্ডাতায় জড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে বিজিবির নারী সদস্যরা তাকে (ওই নারী) চেকপোস্টের একটি কক্ষে এনে তার সঙ্গে থাকা ব্যাগপত্র ও দেহ তল্লাশি করে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত