ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২০ মিনিট আগে
শিরোনাম

কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকদের পরিবারে ‘নীরব দুর্ভিক্ষ’

  মো. রুহুল আমিন, ধামরাই

প্রকাশ : ২০ অক্টোবর ২০২০, ১৭:৪৫

কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকদের পরিবারে ‘নীরব দুর্ভিক্ষ’
প্রতীকী ছবি

কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষকরা করোনার প্রভাবে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন বলে জানা যায়। করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কর্মহীন হয়ে পড়া উপজেলার কিন্ডারগার্টেন স্কুলের (কেজি) শিক্ষকদের পরিবারে চলছে এখন নীরব দুর্ভিক্ষ। কারণ তাদের পরিবার চলে শিক্ষার্থীদের বেতনের টাকায়। অসচ্ছল পরিবারের এসব শিক্ষকদের সহায়তায় কেউ এগিয়ে না আসায় চরম বিপাকে পড়েছেন তারা। শিক্ষক হওয়ায় কারো কাছে হাতও পাততে পাড়ছে না।

সরেজমিনে জানা গেছে, ধামরাই উপজেলায় প্রায় ৮০টি কিন্ডারগার্টেন স্কুল রয়েছে। এতে কমপক্ষে ১২০০ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ৩ জনের মতো চতুর্থ পর্যায়ের কর্মচারী নিয়োজিত রয়েছেন। ৮০টি প্রতিষ্ঠানে প্রায় ২০-২২ হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন এই শিক্ষকরা। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধিকাংশই শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতনের টাকায় পরিচালিত হয়। তারপরও অনেক শিক্ষার্থী রয়েছে যারা নিয়মিত স্কুলের বেতন পরিশোধ করতে পারে না। শিক্ষার্থীদের বেতনের টাকায় শিক্ষকরা বেতন-ভাতা পেয়ে থাকেন। তা দিয়ে চলে শিক্ষকদের অসচ্ছল পরিবারের ভরণ-পোষণ।

করোনার ভাইরাসের প্রভাবে প্রতিষ্ঠানগুলো ছুটি থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের বেতনও বন্ধ রয়েছে। পাশাপাশি বন্ধ রয়েছে এসব শিক্ষকের প্রাইভেট টিউশন। ফলে কোনোদিক থেকেই তারা উপার্জন করতে পারছেন না। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের অর্থবিত্ত না থাকলেও সমাজে তারা শিক্ষক হিসেবেই সম্মানীয়। ফলে তারা না পারছেন লাইনে দাঁড়িয়ে ত্রাণ নিতে, না পারছেন মুখ ফুটে কাউকে কিছু বলতে। ফলে এখন তারা তাদের সংসারের ব্যয়ভার বহন করতে হিমশিম খাচ্ছেন।

একাধিক শিক্ষক বলেন, কেজি স্কুলে শিক্ষকতা ও প্রাইভেট পড়িয়ে কোনো রকমে পরিবারের খরচ সামাল দিয়েছি। এমনিতেই কেজি স্কুল থেকে ঠিকভাবে বেতন পাই না তারউপর করোনায় লকডাউন চলছে। ফলে অসচ্ছল শিক্ষকদের পরিবারে অভাব অনটন চলছে। শিক্ষিত মানুষ চক্ষুলজ্জার ভয়ে কাউকে বলতেও পারছি না আবার সইতেও পারছি না। তাই সরকার ও সমাজের বিত্তবান মানুষরা যেন আমাদের কষ্টটা একটু বোঝার চেষ্টা করেন।

ধামরাই উপজেলা কিন্ডারগার্টেন সমিতির সভাপতি হারুনর রশীদ বলেন, আমাদের কেজি স্কুলের শিক্ষকরা সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা পায় না। এই দুর্যোগ মুহূর্তে এখনও পর্যন্ত শিক্ষকরা সরকারি বা বেসরকারিভাবে কোনো ধরনের সহযোগিতা না পাওয়ায় তাদের পরিবারে হাহাকার বিরাজ করছে। তাই সরকারের কাছে চলমান দুর্যোগে কিন্ডারগার্টেন শিক্ষক-কর্মচারীদের সরকারি সহায়তার আবেদন জানাচ্ছি। কারণ আমাদের অবস্থা এমনি হয়েছে, এখন স্কুল বিক্রির উপক্রম। না নিজেরা চলতে পারি, না প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষকদের বেতন দিতে পারি। নাজুক অবস্থা।

তারা আরো জানান, আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে উপজেলা প্রায় ১২শ’ শিক্ষক-কর্মচারীর নাম পরিচয় মোবাইল নম্বরসহ তালিকা আছে। এতে করোনাকালে এসব শিক্ষক-কর্মচারীকে সরকারি অনুদান ও আর্থিক প্রাপ্তির প্রণোদনা দিলে আমরা কোন রকমে চলতে পারি।আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কোন বেতন আদায় করতে পারছি না।

বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকরা এখন স্কুলের চাকরি ছেড়ে অন্যত্র চাকরি খোঁজার চেষ্টা করছে। তারা ধার করে এখন সংসার চালাচ্ছে। কোনভাবেই তারা সংসার চালাতে পারছে না। পরিবার পরিজন নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে।

উপজেলার কিছু প্রাইভেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনলাইন ক্লাস চালু করে শুরুর দিকে কিছু বেতন আদায় করলেও এখন আর তা সম্ভব হচ্ছে না। কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অর্ধেক বেতন শিক্ষকদের পরিশোধ করলেও এখন তা আর পরিশোধ করতে পারছে না। ব্যক্তিগত ফান্ড থেকে কতদিন এভাবে চালানো যায়। ঔইসব শিক্ষকরা এখন অন্যত্র চাকরি খুঁজছেন।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত