ধামরাইয়ে অবৈধ ব্যাটারি কারখানায় বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি
রুহুল আমিন, ধামরাই (ঢাকা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৯ নভেম্বর ২০২০, ২১:২২
ঢাকার ধামরাইয়ে অবৈধভাবে পুরাতন ব্যাটারি পুড়িয়ে সীসা তৈরি করা হচ্ছে। বিষাক্ত ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্টসহ নানা জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষজন। ঝুঁকির মুখে পড়ছে জনস্বাস্থ্য। এমনটাই এলাকাবাসীর দাবি।
এছাড়া ব্যাটারি পুড়িয়ে সীসা তৈরির ফলে ফসলি জমিসহ বিভিন্ন গাছের মুকুল ঝরে পড়ে যাচ্ছে। আবার ফল ধরলেও তা বড় হওয়ার আগেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে এলাকায় গাছের ফলও কম ধরছে এবং কোন গাছে ফল দেখাই যায় না। আবার ফল ধরলেও তা ঝরে পড়ছে। শুধু তাই নয়, কয়লা তৈরি করার জন্য এলাকার গাছপালা উজাড় করা হচ্ছে বলেও জানায় এলাকাবাসী।
অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে আইনের তোয়াক্কা না করে ধামরাই উপজেলার ভাড়ারিয়া ইউনিয়নের বাঙ্গালপারা গ্রামে গড়ে উঠেছে সীসা তৈরির অনুমোদনহীন কারখানা। স্থানীয় ব্যক্তিদের প্রভাব খাটিয়ে আইনের তোয়াক্কা না করে অবৈধ ব্যবসা করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে কিছু লোক।
পুরাতন ব্যাটারি পুড়িয়ে সীসা তৈরির ফলে পরিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে বলে এলাকাবাসীর দাবি। ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা তৈরি এবং কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি করার ফলে কালো ধোঁয়ায় আশপাশের এলাকায় লোকজনের দেখা দিয়েছে বিভিন্ন ধরনের অজানা রোগ। ছোট বড় সকলের দেখা দিয়েছে শ্বাসকষ্ট। এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করার ফলে উল্টো হামলা মামলার ভয় দেখিয়ে এলাকাছাড়ার হুমকি দেয়া হয়। ভয়ে কেউ কিছুই বলে না। ফলে অসহায় হয়ে পড়েছে সাধারণ লোকজন।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ওই কারখানার চারপাশের বাড়ি টিনের তৈরি। সীসা তৈরির কারণে টিনগুলো ছিদ্র হয়ে গেছে। পুরাতন ব্যাটারি তৈরি করার ফলে যে কালো ধোঁয়ার সৃষ্টি হয়, তার ফলে ঘরের টিন ছিদ্র হয়ে যাচ্ছে। যার ফলে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে জমির ফসল। ছড়াচ্ছে নানা রোগবালাই।
অনুসন্ধানে আরও দেখা গেছে, রাতের আঁধারে ২০ থেকে ২২ জন শ্রমিক কোন ধরণের নিরাপত্তার বালাই না রেখে, হাতে মুখে গ্লাবস ও মাস্ক না পরে আগুন জ্বালিয়ে পুরাতন ব্যাটারি পুড়িয়ে সীসা তৈরি করছে।
শ্রমিকদের জিঞ্জাসাবাদ করে জানা যায়, এভাবে রাতে একই চুল্লিতে পুরাতন ব্যাটারি পুড়িয়ে সেই ব্যাটারি থেকে সীসা বের করা হয়। সন্ধ্যার পর থেকে সীসা পোড়ানো শুরু হয়, চলে ভোর রাত পর্যন্ত। পরে সেই সীসা আবার লোহার তৈরি কড়াইয়ে ঢেলে পাটা তৈরি করা হয়। প্রতিটি পাটার ওজন প্রায় ৩০ থেকে ৩২ কেজি। পরে সেগুলো বাজারে বিক্রি করা হয়।
তবে কারখানার অনুমোদন নিয়ে একাধিকবার প্রশ্ন করা হলেও মেলেনি কোন উত্তর।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, এই কারখানায় সারাদিন ও রাতে সীসা পোড়ানো হয়। হাঁচি-কাশি লেগেই থাকে, বিশেষ করে ছোট বাচ্ছাদের। এলাকার প্রভাবশালীদের প্রভাব দেখিয়ে এই অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। রাস্তার সাথে ব্যাটারি কারখানা থাকায় সীসার দুর্গন্ধে রাস্তা দিয়ে চলাচল করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ব্যাটারি কারখানার ম্যানেজার মজিদ বলেন, কারখানার বৈধ কাগজপত্র আছে কিনা আমি জানি না। সবই জানে কারকানার মালিক শরীফ।
জানা যায়, কিছুদিন আগে সীসা তৈরির কারখানায় আগুন লেগে কচমচ এলাকায় পাশের একটি স্কুলের একাংশ পুড়ে যায়। তবু থামছে না সীসা তৈরির কারখানা।
বিশেযজ্ঞ ডাক্তাররা বলছেন, ব্যাটারি কারখানার ধোঁয়া ও বিষাক্ত বর্জ্যের কারণে সকল বয়সী লোকের জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্বাবনা রয়েছে। এছাড়াও ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগ হতে পারে।
এ বিষয়ে ব্যাটারি কারখানার মালিক শরীফ হোসেন বলেন, এলাকার অনেকইে আমার এই কারখানার সাথে জড়িত। কিন্তু এখন তারা কেউ সাড়া দিচ্ছে না। কারখানার ব্যাপারে ভাড়ারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ আলম জানেন।
তবে কাগজপত্রের কথা জিঙ্গাসা করায় তিনি শুধু বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের ছাড়পত্র আছে।
তবে ভাড়ারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ আলম বলেন, আমার বাড়ির পাশে যে ব্যাটারি কারখানা রয়েছে, তা আমার জানা নেই। এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আমি ইউনিয়ন পরিষদের কোন ছাড়পত্রও দেইনি। তবে এতটুকু জানি, দ্রুতই এই কারখানা চলে যাবে।
তবে প্রভাবশালীদের অনেকেই এই অবৈধ ব্যাটারি কারখানার সাথে জড়িত বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে ধামরাই উপজেলা কৃষি অফিসার মো. আরিফুল হাসান বলেন, সীসা এমনি এক খারাপ পদার্থ, যেখানে পড়বে সেখানে কোন ধরণের ফসল হবে না। হলেও সেটা মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর। লোকালয়ে এসব কারখানা না থাকাই ভালো।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সামিউল আলম বলেন, অবৈধ সীসা কারখানা ও মালিকের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। যা মানবদেহের জন্য হুমকিস্বরুপ ও জমির ফসলের জন্য ক্ষতিকর, সেই কারখানা বন্ধ করে দেয়া হবে।
বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে