ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

শঙ্কায় রংপুরের কৃষক

বীজ আলুতেও আগুন, বাড়তি খরচ ৪৫০০ কোটি

  রফিকুল ইসলাম, রংপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৭ নভেম্বর ২০২০, ১৯:৩৬  
আপডেট :
 ১৭ নভেম্বর ২০২০, ২১:১৫

বীজ আলুতেও আগুন, বাড়তি খরচ ৪৫০০ কোটি

রংপুর অঞ্চলে এবার খাবার আলুর পাশাপাশি বীজ আলুর দাম রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। অতিরিক্ত দাম বাড়ায় বেশ ধকল সামলাতে হবে কৃষক এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগকে। বর্তমান দাম অনুযায়ী, আলু মৌসুমে দাম পড়ে গেলে সর্বনাশ হবে কৃষকের। এই সর্বনাশ থেকে আগামী কয়েক বছরেও ঘুড়ে দাঁড়াতে না পারার শঙ্কাও রয়েছে। তাই এখনই সরকার ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে সিদ্ধান্ত নেয়ার তাগিত কৃষকের। সেইসঙ্গে ঢালাওভাবে আলু চাষ না করে পরিকল্পিত আলু চাষে মনোযোগ দিতে পরামর্শ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের।

রংপুর আঞ্চলিক কৃষি অফিস সূত্র জানিয়েছে, রংপুর কৃষি অঞ্চলে ৯০ হাজার হেক্টর জমিতে আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। সেই হিসেবে বীজ আলুর চাহিদা ১ লাখ ৫৭ হাজার মেট্রিক টন।

বাজার ঘুরে এবং বিএডিসি সূত্রে জানা গেছে, এবার প্রতিকেজি বীজ আলু গড়ে ২৫ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। সেই অনুযায়ী প্রতি হেক্টর জমিতে আলু উৎপাদনে খরচ বাড়বে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। তাতে মোট অতিরিক্ত খরচ হবে ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

সূত্র বলছে, গত বছর সরকারিভাবে আলু বীজ বিক্রি করা হয়েছিলো কেজিপ্রতি ২৮ টাকা। এ বছর দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৭ টাকা। বেসরকারি কোম্পানিগুলো গত বছর বীজ বিক্রি করেছিলো কেজি প্রতি ৪৫ টাকা। এ বছর বিক্রি শুরু করেছে ৬০ টাকা দরে। সে হিসেবে হেক্টর প্রতি গত বছর আলু বীজে খরচ ছিলো ৭০ থেকে ৮৫ হাজার টাকা। আর এ বছর বেড়ে দাঁড়াবে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকায়।

রংপুর অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে আলুর দাম বেড়ে যাওয়ায় আলু চাষিরা মাঠে কোমর বেঁধে নেমেছেন। বিশেষ করে চরাঞ্চল এখন আলুর দখলে। পরিবার পরিজন নিয়ে আলু চাষে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন ক্ষেতমজুর ও চাষিরা; যা অতীতের রেকর্ড ভাঙার সম্ভাবনা রয়েছে। বাজারে আলুর দাম বেশি হলেও সেদিকে তোয়াক্কা নেই তাদের। তাদের আশা, বেশি দরে আলু কিনে বেশি দরে তা বিক্রি করা।

তবে ইতিহাস বলছে, এক বছর আলুর দাম বেশি হলে পরের বছর আলুর দামে ভাটা পরে। ঠিক এমনটা ঘটে গেলে সর্বনাশ হবে আলুতে স্বপ্ন দেখা চাষিদের। সেই বাস্তবতায় প্রয়োজনের চেয়ে বেশি আলু আবাদ করতে নিরুৎসাহিত করছে কৃষি বিভাগ।

রংপুর বীজ বিপণন বিভাগের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. আসাদুজ্জামান খান বলেন, বীজের দাম যদি ৩৫ টাকা বা এর নিচে থাকে, এটি কিন্তু খাদ্য হিসেবে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। খাদ্য হিসেবে চলে গেলে, এটিকে বীজ হিসেবে ব্যবহার করা না হলে, আগামী মৌসুমে অনেক ফলন কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আলু চাষে উৎসাহ পাওয়া কৃষকরা যাতে দামের ক্ষেত্রে ন্যায্যতা পায়, সেই বিষয়ে সরকারি পদক্ষেপের দাবি কৃষক আন্দোলনের নেতাদের।

রংপুর জেলা জাতীয় কৃষক সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলাম হক্কানি বলেন, কৃষি অঞ্চলের মানুষতো কৃষিতেই স্বপ্ন দেখবে। তাই এই স্বপ্ন ভঙ্গ না করে কৃষকদের ঝুঁকি মোকাবিলায় সরকারের প্রণোদনা দেয়ার পাশাপাশি আলু রপ্তানির ব্যবস্থা করতে হবে।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. সারোয়ারুল হক বলেন, আমাদের পরিকল্পিতভাবে আলু চাষ করা উচিৎ। চাহিদার অতিরিক্ত আলু উৎপাদন করার কোন প্রয়োজন নেই। দাম বেশি বলে খালি জমিতে আলু চাষ করতে হবে তা না। এমন করলে কৃষকরা উলটা লোকসানে পড়বে। আমরা এ বছর আলুর দাম পেয়েছি। এটা কতদিন স্থির থাকবে সেটা কিন্তু নিশ্চিত না। সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে আমাদের।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত