ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

অন্তরঙ্গ ছবি ভাইরাল, বরখাস্ত সেই দুই শিক্ষক

  বরিশাল প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২১ নভেম্বর ২০২০, ১৫:২৬  
আপডেট :
 ২২ নভেম্বর ২০২০, ০৮:২৫

অন্তরঙ্গ ছবি ভাইরাল, বরখাস্ত সেই দুই শিক্ষক
ছবি: মোক্তার হোসেন ও নার্গিস

ফেসবুকে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি ভাইরাল হওয়া দুই প্রধান শিক্ষককে (নারী-পুরুষ) সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার জরুরি সভায় তাদের সাময়িক বরখাস্ত করে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

বরখাস্ত হওয়া দুই শিক্ষক হলেন- বাবুগঞ্জ উপজেলার রহমতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোক্তার হোসেন। অপরজন একই উপজেলার মুশুরীকাঠী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামীমা নার্গিস।

মোক্তার হোসেন দেহেরগতি ইউনিয়নের ইদেলকাঠী গ্রামের বাসিন্দা। তার স্ত্রী ও দুই সন্তান রয়েছে। শামীমা নার্গিস পাংশা গ্রামের বাসিন্দা। সাত বছর আগে তার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। তারও দুই সন্তান রয়েছে।

জানা জায়, প্রধান শিক্ষক মোক্তার হোসেনের সঙ্গে শামীমা নার্গিসের দীর্ঘ ১৫ বছরের প্রেমের সম্পর্ক। এ জন্য নার্গিসের সঙ্গে তার স্বামীর বিরোধ শুরু হয়। এক পর্যায়ে নার্গিস ও তার স্বামীর ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। স্বামীকে তালাক দেওয়ার পর নার্গিস তার প্রেমিক মোক্তারকে বিয়ের জন্য চাপ দেয়। কিন্তু মোক্তার বিয়ের বিষয়ে সময় নিচ্ছিলেন। এরপর বিষয়টি নার্গিসের কলেজ পড়ুয়া সন্তানরা জানতে পেরে তাকে ঘর থেকে বের করে দেন।

ঘর থেকে বের করে দেয়ার পর নার্গিস বরিশাল নগরীর কাউনিয়ায় বাসা ভাড়া নেন। ওই বাসায় যাতায়াত ছিল মোক্তারের। দুই জন একইসঙ্গে বসবাস করলেও মোক্তার কোনোভাবেই বিয়ে করতে রাজি ছিলেন না।

মোক্তারের টালবাহানা বুঝতে পরে এ মাসের প্রথম দিকে কিছু লোক ঠিক করেন নার্গিস। মোক্তার তার বাসায় আসার পর রাতে ১০/১২ জনের একটি দল সেখানে প্রবেশ করে বিয়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করে। ১৫ লাখ টাকা দেনমোহরে তাদের বিয়ে দেয়া হয়। সেখানে উশুল দেখানো হয় তিন লাখ টাকা।

বিয়ের পরের দিন মোক্তার কৌশলে নার্গিসের ঘর থেকে বের হয়ে তার প্রথম স্ত্রীর বাড়িতে যান। কিন্তু তিনি মোবাইলফোন বন্ধ করে রাখায় কোনোভাবে মোক্তারের সঙ্গে নার্গিস যোগাযোগ করতে পারছিলেন না। এরপর মোক্তারের বাড়িতে যান নার্গিস। সেখানে যাওয়ার পর মোক্তারের অনুপস্থিতিতে তার স্ত্রী ও দুই সন্তান নার্গিসকে মারধর করেন। এরপর নার্গিস শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। খবর পেয়ে সেখানে যান মোক্তার।

মেডিকেল থেকে নার্গিসকে নিয়ে আসেন নিজ বাড়িতে। সেখানে আসার পর ফের মোক্তারের স্ত্রী ও দুই সন্তান মোক্তার ও নার্গিসকে মারধর করেন। পরে আবারও নার্গিসকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিয়ের চার দিনের মাথায় মোক্তার তালাকের নোটিশ পাঠান নার্গিসকে। মেডিকেলে চিকিৎসাধীন নার্গিস তালাকের নোটিশ পান।

তালাকের নোটিশ পাওয়ার পর হাসপাতাল থেকে ফিরে আবারও নার্গিস বাবুগঞ্জ উপজেলার কিছু লোকজনের কাছে মোক্তারের বিরুদ্ধে নালিশ করেন এবং মোক্তারের সঙ্গে মিলিয়ে স্ত্রীর মর্যাদা দেওয়ার দাবি জানান। এসময় মোক্তারের সঙ্গে তার বিয়ের কাবিননামা থেকে শুরু করে দীর্ঘ প্রেমের সম্পর্কের ছবি তাদের হাতে তুলে দেন নার্গিস। ওই ছবি কে বা কারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে ছেড়ে দিলে তা ভাইরাল হয়। এরপর নড়েচড়ে বসেন শিক্ষা কর্মকর্তারা।

সর্বশেষ গত ১৩ নভেম্বর উপজেলা প্রধান শিক্ষক সমিতির সভাপতি নুরুল হক ও উপজেলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ আহমদসহ একাধিক ব্যক্তির সমন্বয়ে বরিশাল নগরীর মুন্সি গ্যারেজ এলাকায় মোক্তার ও নার্গিসের উপস্থিতিতে সমঝোতা বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে তালাক দিতে হলে মোক্তারকে কাবিনের ১২ লাখ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেন সালিশদাররা। আর তা না পাড়লে নার্গিসকে ঘরে তুলতে বলেন।

সালিশদাররা আরও জানান, এ নিয়ে বেশি টালবাহানা করলে তাদের চাকরি থাকবে না। তাদের দু’জনের চাকরি বাঁচাতে সংসার করার বিকল্প নেই।

এক পর্যায়ে নার্গিসকে ঘরে তুলতে সম্মত হন মোক্তার। সপ্তাহের চার দিন নার্গিসের বাসায় এবং তিন দিন প্রথম স্ত্রীর বাসায় অবস্থান করবেন বলেও সিদ্ধান্ত হয়।

বাবুগঞ্জ শিক্ষক সমিতির সভাপতি জাহিদুর রহমান সিকদার ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন বলেন, তাদের প্রেমের সম্পর্ক উপজেলার এমন কোনও লোক নেই যারা জানেন না। তাদের থেকে শিক্ষার্থীরা কী শিখবে?

বাবুগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ইমদাদুল হক দুলাল বলেন, ওই শিক্ষিকা আমার কাছে এসে মোক্তারের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ দিয়েছেন। আমি তাকে জানিয়েছি তাদের দুই জনেরই সমস্যা আছে।

বাবুগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আকবর কবির বলেন, ওই দুই প্রধান শিক্ষকের ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/কেআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত