ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ মিনিট আগে
শিরোনাম

ডিজে নেহার মোবাইলে ‘সাংকেতিক ক্লায়েন্ট’

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ২০:৫০

ডিজে নেহার মোবাইলে ‘সাংকেতিক ক্লায়েন্ট’
সংগৃহীত ছবি

রাজধানীতে ইউল্যাব বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর উত্তরার একটি রেস্টুরেন্টে পার্টিতে মদপানের রহস্যজনক মৃত্যুর জেরে বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। ডিজে নেহার ফোনবুকে পুলিশ ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্নস্থানের ডজনখানেক শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীর নাম্বার পেয়েছে। যেগুলো সাংকেতিকভাবে সংরক্ষণ করা। রিমান্ডের তৃতীয় দিনে গ্রেপ্তার ডিজে নেহাকে জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য পেয়েছে পুলিশ।

এ ঘটনায় নিহত ওই ছাত্রীর বান্ধবী ফারজানা জামান নেহা ওরফে ডিজে নেহাকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেয়। ঘটনার পাঁচ দিন পর গত বৃহস্পতিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর আজিমপুরের একটি বাসা থেকে নেহাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, ডিজে নেহার পছন্দের মোবাইল ফোনে (আইফোন) টার্গেট করা ব্যবসায়ী ও ধনী যুবকদের নম্বর ‘ক্লায়েন্ট-১’, ‘ক্লায়েন্ট-২’, ‘ক্লায়েন্ট-৩’ এমন ধারাবাহিকভাবেই সংরক্ষণ করা আছে। কারো কারো নাম সংক্ষেপে প্রথম বর্ণ দিয়েও সংরক্ষণ করা।

পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে নেহাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে নিজের অন্ধকার জগৎ সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিচ্ছেন তিনি।

এর আগে রোববার রিমান্ডের তৃতীয় দিনে ডিজে নেহার ফোনবুকে পুলিশ ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্নস্থানের ডজনখানেক শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীর নাম্বার পেয়েছে। যেগুলো সাংকেতিকভাবে সংরক্ষণ করা। এসব ধনাঢ্যের অনেকের কাছে মদ, মেয়ে সরবরাহ করতেন তিনি। কখনো কখনো নেহা নিজেই তাদের সঙ্গ দিয়েছেন। বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে পেয়েছেন মোটা অঙ্কের টাকা।

নেহার বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, গত বছরের মার্চে চট্টগ্রামের এক গাড়ি ব্যবসায়ীর সঙ্গে একটি পার্টিতে তার পরিচয় হয়। এরপর ওই ব্যবসায়ীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে কৌশলে ছয় মাসে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন নেহা। এরইমধ্যে ওই গাড়ি ব্যবসায়ীর এক ফেসবুক বন্ধুর সঙ্গেও পরিচয় হয় নেহার। সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত নেহা ঢাকার ওই গাড়ি ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকার বেশি হাতিয়েছেন। নেহার ব্যবহৃত এক লাখ ৩৭ হাজার টাকা দামের আইফোন টুয়েলভ প্রো ম্যাক্স ওই ব্যবসায়ীর কাছ থেকেই নেয়া। এভাবেই আরো অনেক ব্যবসায়ীকে মাদক ও নারী সঙ্গের জালে জড়িয়েছিলেন নেহা।

নেহার এসব কাজে সহযোগিতা করতেন তারই চাচাতো ভাই শাফায়াত জামিল বিশাল। বিশাল সার্বক্ষণিক নেহার সঙ্গেই থাকতেন।

গত ২৮ জানুয়ারি উত্তরার ব্যাম্বু স্যুট রেস্টুরেন্টে মদপান করাতে নেহা ও তার খুব কাছের বন্ধু আরাফাত পার্টির আয়োজন করেন। মদপানের পর অসুস্থ হয়ে আরাফাতও মারা গেছেন। সেদিন নেহার ফোনেই তার চাচাতো ভাই শাফায়াত জামিল ওরফে বিশাল এয়ারপোর্ট এলাকা থেকে মদ কিনে নিয়ে যায় ওই রেস্টুরেন্টে।

নেহা পুলিশকে জানিয়েছেন, ক্লায়েন্টদের তালিকা সংরক্ষণ করতেন বিশাল। এছাড়া অবৈধ দরদামে তিনি মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীর মৃত্যুর পর তার বাবার মামলায় অজ্ঞাত আসামি হিসেবে নিজেই আদালতে গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন বিশাল। পরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন। এছাড়া ওই ছাত্রীর ছেলে বন্ধু আরিফ এবং তাদের বাসায় আশ্রয়দাতা তাফসিরও কারাগারে আটক রয়েছেন।

এ বিষয়ে তেজগাঁ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, ‘ঢাকা শহরের অনেক মেয়ে বড় লোকের ছেলেদেরকে নিয়ে ডিজে পার্টিতে এবং বিভিন্ন ক্লাবে নিয়ে যায়। যেগুলোর কোন লাইসেন্স নেই এবং বসার অনুমতিও নাই। কিছু কিছু জায়গায় আবার তারা ভাড়া নিয়ে মদের পার্টি করে।’

এর আগে গত ৫ ফেব্রুয়ারি নেহা আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে বলেছেন, গত ২৮ জানুয়ারি আমার বন্ধু আরাফাতের নিমন্ত্রণে উত্তরার ব্যাম্বুসুট রেস্টুরেন্টে যাই। সেখানে গিয়ে আরো কয়েকজনকে দেখতে পাই। আমি আরাফাত ছাড়া অন্য কাউকে চিনতে পারিনি। সেখানে আমি মদপান করি। তিন প্যাক পান করার পর আমার মুখ দিয়ে রক্ত বের হয় এবং বমিও হয়। আমি তখন সেখান থেকে বাসায় চলে যাই। বাসায় যাওয়ার পরও আমার কয়েক দফা বমি হয়। এমন পরিস্থিতিতে আমি হাসপাতালে চিকিৎসা নিই।

এফজেড/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত