ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

বরের বয়স ৯২, কনের ৮০

  দিনাজপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৭:৪৩  
আপডেট :
 ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ২১:৫৪

বরের বয়স ৯২, কনের ৮০
ছবিতে- দেবশর্মা ও পঞ্চবালা

দিনাজপুরের বিরল উপজেলায় ৯২ বছর বয়সী বৈদ্যনাথ দেবশর্মা ও তারই স্ত্রী ৮২ বছর বয়সি পঞ্চবালা দেবশর্মার পুনরায় বিয়ে হলো মহাধুমধামে। পঞ্চম প্রজন্ম দেখায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের রীতিনীতি অনুযায়ী ভবিষ্যত প্রজন্মের দীর্ঘায়ু ও মঙ্গল কামনায় এই বিয়ের আয়োজন করা হয়।

বৈদ্যনাথ ও পঞ্চবালার বিয়ে হয়েছিলো প্রায় ৭৪ বছর আগে। তার একমাত্র কন্যা ঝিলকো বালার ৩ ছেলে ও ৫ মেয়ে। প্রথম মেয়ে আদুরী রানী দেবশর্মার এক ছেলে এক মেয়ে। দ্বিতীয় মেয়ে যমুনা রানী দেবশর্মার ৩ ছেলে, তৃতীয় মেয়ে কুশলী রানী দেবশর্মার ২ মেয়ে, চতুর্থ মেয়ে পূর্নিমা রানী দেবশর্মার এক ছেলে ও এক মেয়ে এবং পঞ্চম মেয়ে লক্ষ্মী রানী দেবশর্মার এক ছেলে ও এক মেয়ে। তাদের ঘরেও আবার ছেলে-মেয়ে হয়েছে।

অর্থাৎ বিয়ের ‘পাঁচ পিঁড়ি’ অতিক্রম করেছেন বৈদ্যনাথ ও পঞ্চবালা। প্রচলিত আছে, যদি বিয়ের পর পাঁচ পিঁড়ি (প্রজন্ম) উত্তীর্ণ হয়, তাহলে ভগবানের তুষ্টির জন্য পুনরায় বিয়ের আয়োজন করতে হয়।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, বৈদ্যনাথ দেবশর্মার বয়স যখন ১৮, তখন তার বাবা স্বর্গীয় ভেলশু দেবশর্মা একই এলাকার স্বর্গীয় বিদ্যামন্ডল দেবশর্মার বাবার হাতে ১৩ টাকা তুলে দিয়ে ঘরে আনেন ৮ বছর বয়সী নববধূ পঞ্চবালাকে। এখন বিয়ের ৭৪ বছর পূর্ণ হয়েছে। ১৮ বছরের বৈদ্যনাথের বয়স ৯২ আর পঞ্চবালার বয়স ৮০ পেরিয়েছে।

এই ৭৪ বছরে তাদের একমাত্র মেয়ের বিয়ের পর সন্তান-নাতি-নাতনি এবং তাদের ঘরের সন্তান মিলে পাঁচ সিড়ি পেরিয়েছে। আর সেই অনুযায়ী গত এক মাস ধরেই চলছিল এই প্রবীণদের পুনঃবিবাহের আয়োজন। অবশেষে গত ২১ ফেব্রুয়ারি বিরলের ধর্মপুর ইউনিয়নে বাড়িভর্তি মেহমানের উপস্থিতিতে পঞ্জিকামতে বিবাহলগ্নে পুনঃবিবাহ সম্পন্ন হয়।

পাঁচ প্রজন্ম একসঙ্গে

সত্যনারায়ন পূজা, অধিবাস ও বরানুগমনসহ সব ধরণের আনুষ্ঠানিকতা ছিল তাদের বিয়েতে। আর এমন বিয়েকে ঘিরে আনন্দও কম ছিল না। আর এমন বিয়েতে আনন্দিত তারাও।

কৃষি পেশায় যুক্ত বৈদ্যনাথ ১৯৭২ সাল থেকে ৮৬ সাল পর্যন্ত স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত সদস্য ছিলেন। মেয়েকে বিয়ে দেয়ার পর ৮ নাতি-নাতনি হয়েছে এবং তাদের ঘরে ১৯ জন সদস্য। এখন তার পিড়ির মোট সদস্য সংখ্যা ৫৪ জন।

বর বৈদ্যনাথ দেবশর্মা বলেন, ১৩ টাকা পণ দিয়ে পঞ্চবালার সাথে বিয়ে হয়েছিল আমার। ব্রিটিশদের সময়ে এমন ধুমধাম ছিল না। এখন যে বিয়ে হলো, এখন পর্যন্ত যে আনন্দ পাচ্ছি, তা বলার মতো নয়। আমার নাতি-নাতনিরা যা করেছে, তা বলার মতো নয়।

‘এত বছরেও আমার স্ত্রীর গায়ে কখনও হাত তুলিনি। একবার হাত তুলেছিলাম, আর তখন মায়ের হাতে আমাকে মার খেতে হয়েছিল। এরপর কখনও আমি তাকে একদিনের জন্যও ছাড়িনি। আমি গয়া, কাশী, বৃন্দাবন, আগ্রা, ব্রহ্মপুত্রসহ বিভিন্ন তীর্থস্থানে গিয়েছি তাকে নিয়ে।’

বৈদ্যনাথ জানান, তার বাবার হাতের লেখা জন্মতারিখ অনুযায়ী তার বয়স ১০৭ বছর। স্ত্রীর বয়স একশ' বছরের কাছাকাছি।

নতুন করে বিয়ের এমন আয়োজনে বর-কনে দুজনেই অনেক আনন্দিত

কনে পঞ্চবালা দেবশর্মা বলেন, আমার যখন বিয়ে হয়েছে তখন আমি কিছুই বলতে পারি না। এখন আবার নাতি-পুতিরা বিয়ে দিলো। আমার স্বামী আমাকে অনেক ভালোবাসে, তাকে ছাড়া আমি থাকতে পারি না, আমাকে ছাড়াও সে থাকতে পারে না। এই আয়োজনের আগে বলছিলাম এই বিয়ে কেমন করে হবে। তবে এখন আমাকে খুব ভালো লাগছে।

তাদের একমাত্র কন্যা ঝিলকো বালা বলেন, এই আয়োজনে আমরা আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সবাইকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি, সবাই এসেছেন। এটা মূলত মঙ্গল ও পরিবারের ভালোর জন্য করেছি। আমরা যেন ভালোভাবে থাকতে পারি, ঈশ্বর কাছে এই প্রার্থনা।

বিয়ের আয়োজনের মূল উদ্যোক্তা নাতি ফটিক চন্দ্র সরকার বলেন, একমাস আগে এই আলোচনা করি। পরে পরিবারের সদস্যরা একমত হলে বিয়ের আয়োজন করি। এর আগে আমরা ধর্মীয় রীতিনীতির বিষয়গুলো নিয়ে পুরোহিতের সাথে কথা বলেছি। আমার দাদুর পাঁচ পিঁড়ি পার হয়ে গেছে। আমরা তার নাতি, আবার আমাদেরও নাতি হয়েছে। বিয়েতে অনেক লোকসমাগম হয়েছিল।

কাহারোল উপজেলা থেকে আসা আত্মীয় লিপা রানী দেবশর্মা বলেন, এখানে এসে খুব আনন্দ উপভোগ করেছি। আমার জীবনে প্রথম এমন আয়োজন দেখলাম। নেচে-গেয়ে আমি আনন্দে ভাগিদার হয়েছি।

বৈদ্যনাথের পুতি কবিতা দেব (১৪) ও লাভলী রানী (১৬) বলেন, আগে আমরা জানতাম না যে পাঁচ পিঁড়ি পার হলে আবারও বিয়ে ও মালাবদল হয়। এই অনুষ্ঠান দেখে আমাদের খুব ভালো লেগেছে। এমন আয়োজন শুনছি, জীবনে প্রথম দেখলাম।

বিবাহ কাজে পুরোহিতের দায়িত্বে থাকা মহাদেব ভট্টাচার্য বলেন, এর আগে এমন বিয়ে দেখিনি। তবে তারা যে এমন আয়োজন করেছেন, তা সত্যিই আনন্দের। এমন আয়োজন হলে মঙ্গল হয়। ধর্মীয় এমন বিশ্বাস থেকে তারা যে আয়োজন করেছে, তাতে বোঝাই যায় তাদের পরিবারের মধ্যে ভালোবাসা কতটুকু। শাস্ত্রে এমন কথা উল্লেখ না থাকলেও লোকাচারে রয়েছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত