ঢাকা, রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

কুসিক নির্বাচন, ইসির অগ্নিপরীক্ষা

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৫ জুন ২০২২, ০৯:৩৯

কুসিক নির্বাচন, ইসির অগ্নিপরীক্ষা
ছবি: বাংলাদেশ জার্নাল

তৃতীয়বারের মতো কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে (কুসিক) নির্বাচন হচ্ছে আজ। বুধবার সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।

এই নির্বাচনে শতভাগ ইভিএমে ১০৫টি কেন্দ্রের ৬৪০টি ভোটকক্ষে ভোটগ্রহণ চলছে। সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণের জন্য এবারই প্রথম সব কেন্দ্র ও ভোটকক্ষে বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা।

নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রথম ভোটগ্রহণ এটি, যে কারণে এটি কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশনের আস্থা অর্জনের অগ্নিপরীক্ষা। নতুন নির্বাচন কমিশনের অধীনে দলীয় প্রতীকের এ নির্বাচন ঘিরে এখন সবার নজর কুমিল্লায়।

ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, সুষ্ঠু ভোটের ‘সব ব্যবস্থাই’ নেয়া হয়েছে। কোনো ধরনের গোলযোগের শঙ্কাও তারা দেখছেন না।

এদিকে তফসিল ঘোষণার পর থেকেই এই নির্বাচনের ওপর দৃষ্টি আছে দেশবাসীর। মাঠের বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলেও দলটির দুই নেতা-সাক্কু ও নিজামউদ্দিন কায়সার ভোট করছেন। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করায় দুজনকেই আজীবন বহিষ্কার করেছে বিএনপি। অন্যদিকে টানা দুবার পরাজয়ের পর এবারের ভোটে জয় নিশ্চিতে নতুন প্রার্থী দিয়েছে ক্ষমতাসীনরা।

বিএনপি দলীয়ভাবে এ ভোটে না থাকলেও দল ছেড়ে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন এ দলের দুজন। আর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী তো আছেই। ফলে প্রতিদ্বন্দ্বিতার উত্তাপও আছে।

মেয়র পদে পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে আলোচনা মূলত তিনজনকে ঘিরে। গত দুবারের মেয়র বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা মনিরুল হক সাক্কুর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত। বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সারও নজর কেড়েছেন।

তবে সবকিছু ছাপিয়ে স্থানীয়দের প্রত্যাশা, অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমেই যেন তারা নগরপিতা নির্বাচিত করার সুযোগ পান।

নির্বাচনে পাঁচ মেয়র প্রার্থীসহ ২৭টি সাধারণ ও নয়টি সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে ১৪৯ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মোট ভোটার ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০ জন। ১০৫ কেন্দ্রের মধ্যে ৮৯টি ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ।

সবার কৌতূহল, কে হচ্ছেন গোমতী নদীপাড়ের ঐতিহ্যবাহী শহর কুমিল্লার নগরপিতা? দুবারের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু নাকি আরফানুল হক রিফাতকে নিয়ে জয়ের তীরে ভিড়তে পারবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ? এর বাইরে কী চমক দেখাবেন তরুণ প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার?

সাধারণ ভোটারদের ধারণা, তাদের মধ্যেই ত্রিমুখী লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর বাইরে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রাশেদুল ইসলাম (হাতপাখা) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী কুমিল্লা নাগরিক ফোরামের সভাপতি কামরুল আহসান বাবুল (হরিণ) নির্বাচনের মাঠে রয়েছেন।

ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে পরীক্ষামূলকভাবে কেন্দ্রে ও ভোটকক্ষে সিসি ক্যামেরা ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রতিটি কেন্দ্রে বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা।

অশোক কুমার দেবনাথ আরও জানান, নির্বাচনী এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়নি। তবে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকবে। নির্বাচনী দায়িত্বে যারা থাকবেন, তারা ভোট দিতে পারবেন।

এদিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ভোটের দিন বুধবার নির্বাচনী এলাকায় যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা ভোট কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হবে এবং নির্বাচনী কার্যক্রমের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে সেগুলো বন্ধ থাকবে।

তাছাড়া এসব এলাকার স্বাস্থ্য সেবা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মরত ভোটারদের ভোট দেয়ার সুযোগ দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছে মন্ত্রণালয়।

ইসি জনসংযেগ শাখার কর্মকর্তারা জানান, কুমিল্লায় সাতটি পর্যবেক্ষক সংস্থার ৯২ জনকে ভোট পর্যবেক্ষণের জন্য অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

জাতীয় নির্বাচন পযবেক্ষক পরিষদ-জানিপপ, সার্ক মানবাধিক ফাউন্ডেশন, তৃণমূল উন্নয়ন সংস্থা, রিহাব ফাউন্ডেশন, বিবি আছিয়া ফাউন্ডেশন, মানবাধিকার ও সমাজ উন্নয়ন সংস্থা-মওসুস এবং সমাজ উন্নয়ন প্রয়াসের প্রতিনিধিরা ভোট পর্যবেক্ষণ করবেন।

এছাড়া ঢাকার ইসি সচিবালয় ও কুমিল্লা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে কয়েকশ সাংবাদিক ভোটের সংবাদ সংগ্রহে কার্ড সংগ্রহ করেছেন।

ইসির নির্দেশনায় বলা হয়েছে- অনুমোদিত কার্ডধারী সাংবাদিকরা প্রিজাইডিং অফিসারকে জানিয়ে ভোটকক্ষে প্রবেশ করতে পারবেন, ভোট গণনার সময় ছবি তুলতে পারবেন, ভোটকক্ষ থেকে নিরাপদ দূরত্বে সংবাদ প্রচার করতে পারবেন। কোনোভাবেই ভোটকক্ষের গোপন কক্ষে প্রবেশ বা ছবি তোলা যাবে না।

কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান জানান, নির্বাচনকে সুষ্ঠু করতে যাবতীয় ব্যবস্থা তারা নিয়েছেন।

পুলিশ সুপার মো. ফারুক আহমেদ জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তিন হাজার ৬০৮ জন সদস্য নিয়োজিত থাকবেন সিটি নির্বাচনে। ৭৫টি চেকপোস্ট, ১০৫টি মোবাইল টিম, ১২ প্লাটুন বিজিবি, ৩০টি র‍্যাবের টিম, অর্ধশতাধিক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, নয়জন বিচারিক হাকিম ভোটের মাঠে থাকছেন।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর দুটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০১৭ সালের নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল দুই লাখ সাত হাজার ৫৬৬ জন। ভোট পড়েছিল এক লাখ ৩২ হাজার ৬৯০। এর মধ্যে ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপি প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু পেয়েছিলেন ৬৮ হাজার ৯৪৮ ভোট, আর আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনজুম সুলতানার নৌকা পেয়েছিল ৫৭ হাজার ৮৬৩ ভোট।

এর আগে সিটি করপোরেশন গঠন হওয়ার পর ২০১২ সালের প্রথম নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ আফজল খান। সেই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছিলেন মনিরুল হক সাক্কু।

বাংলাদেশ জার্নাল/ওএফ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত