ঢাকা, রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

স্কুলছাত্রী অপহরণকারীকে অন্য মামলায় চালান!

  কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৯:১১

স্কুলছাত্রী অপহরণকারীকে অন্য মামলায় চালান!

এবার কিশোরগঞ্জে স্কুল ছাত্রী অপহরণ চেষ্টার আসামিকে অন্য সাধারণ মামলায় কোর্টে সোপর্দের অভিযোগ উঠেছে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশের বিরুদ্ধে। আটকের একদিন পর জামিনে মুক্ত হয়ে অপহরণকারী বখাটে যুবক এলাকায় ফিরে আসায় ক্ষোভে-প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে স্কুলের শিক্ষার্থী-এলাকাবাসী। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী বৃহস্পতিবার দুপুরে স্কুলের সামনের সড়কে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছে। এ কর্মসূচি থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে অপহরণের মামলা নিয়ে অপহরণকারীকে গ্রেপ্তার এবং এ ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টায় লিপ্ত সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানানো হয়।

তবে পুলিশের দাবি, এ ঘটনায় কোন এজাহার না পাওয়ায় আটক যুবককে অন্য মামলায় কোর্টে পাঠানো হয়েছিলো।

এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, গত সোমবার বিকালে সদর উপজেলার কর্শ্বাকড়িয়াইল ইউনিয়নের আলহাজ্ব ওয়াজেদুল ইসলাম খান উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির এক ছাত্রী স্কুল কোচিং শেষে বাড়ি ফেরার পথে কয়েকজন বখাটে যুবক তার পথ আটকে তাকে জোরপূর্বক অটোরিকশায় তুলে অপহরণের চেষ্টা করে। এ সময় ওই স্কুলছাত্রীর ডাক-চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন ও গ্রাম পুলিশ এগিয়ে গিয়ে ওই স্কুল ছাত্রীকে উদ্ধার করে এবং ইসলাম উদ্দিন নামে এক যুবককে হাতেনাতে আটক করে থানা পুলিশে খবর দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ এসে ওই যুবককে থানায় নিয়ে গেলেও রহস্যজনক কারণে অপহরণ চেষ্টা মামলা না নিয়ে ঘটনার সাথে সম্পর্কিত নয় এমন একটি আজগুবি অন্য সাধারণ মামলায় তাকে পরের দিন কোর্টে পাঠালে সে একইদিন কোর্ট থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে বাড়ি ফিরে আসে।

পরে জানা গেছে, স্কুলছাত্রী অপহরণের চেষ্টা আড়াল করে ওই আটক যুবক পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার মামলায় কোর্টে সোপর্দ করার কারণে সে সহজেই জামিন পেয়ে যায়। এ ঘটনার প্রতিবাদ এবং বিচার দাবিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে আলহাজ্ব ওয়াজেদুল ইসলাম খান উচ্চ বিদ্যালয়ের সহস্রাধিক শিক্ষার্থীরা স্কুল এলাকায় কিশোরগঞ্জ-নিকলী সড়কের মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে। এ কর্মসূচিতে অভিভাবক ও এলাকাবাসীও অংশ নেয়।

এ কর্মসূচি থেকে আরো অভিযোগ করা হয়, একটি প্রভাবশালী মহলের যোগসাজশে পুলিশ অপহরণের শিকার ছাত্রী ও তার অভিভাবকের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে এবং অপহরণ চেষ্টা মামলা নিতে রাজি হয়নি।

এ ব্যাপারে কথা হলে অপহরণ চেষ্টার শিকার স্কুলছাত্রীর পিতার অভিযোগ করেন, তিনি এক প্রতিবেশীকে সঙ্গে নিয়ে মামলা করতে গেলে থানার ওসি আমার মেয়ে সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করেন এবং এ ঘটনায় কোন মামলা হবে না বলে জানিয়ে আমাদের ধমকিয়ে পাঠিয়ে দেয়। তার অভিযোগ, একটি প্রভাবশালী চক্রের যোগসাজশে পুলিশ আমার মেয়েকে অপহরণ চেষ্টার মামলা না নিয়ে তাকে বাঁচাতে আজব মামলায় কোর্টে পাঠালে সে সহজেই জামিন নিয়ে বুক ফুলিয়ে বাড়ি ফিরে আসে।

আলহাজ্ব ওয়াজেদুল ইসলাম খান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, প্রকাশ্য দিবালোকে আমাদের স্কুলের দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছাত্রীকে অপহরণের চেষ্টা হয়েছে। এটাতো মগের মুল্লুক না যে দুর্বৃত্তরা যা ইচ্ছা তাই করবে, তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা নিবে না। তিনি এ ঘটনায় অপহরণ চেষ্টার মামলা নিয়ে অপরাধীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানান।

কর্শ্বাকড়িয়াইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রভাষক শহীদুল ইসলাম ভূঁইয়া জানান, এ ধরণের জঘন্য ঘটনায় পুলিশের এমন ভূমিকা হতাশাজনক। তিনি প্রকৃত ঘটনার মামলা নিয়ে দ্রুত জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান।

কর্শ্বাকড়িয়াইল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. বদর উদ্দিন জানান, ওই স্কুলছাত্রীটিকে অটোরিকশায় তুলে অপহরণের চেষ্টার সময় ডাক-চিৎকার শুনে তার পরিষদের দুই গ্রাম পুলিশ ও এলাকাবাসী এগিয়ে গিয়ে উদ্ধার করে এবং অপহরণ চেষ্টার অন্যতম মূলহোতা ইসলাম উদ্দিনকে আটক করে। আর এ ঘটনা তিনি নিজে মোবাইল ফোনে ওসিকে জানালে পুলিশ এসে আটক বখাটে যুবককে নিয়ে যায়। কিন্তু এ অপহরণ চেষ্টা ঘটনার পরিবর্তে পুলিশী কাজে বাধা দেয়ার জামিনযোগ্য আজগুবি মামলা হওয়ায় তিনি হতবাক হয়েছেন বলেও জানান।

এ ব্যাপারে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি আবুশামা মো. ইকবাল হায়াতের সাথে যোগাযোগ করা হলে দাবি করেন, চেয়ারম্যানের ফোন পেয়ে পুলিশ পাঠিয়ে ওই যুবককে থানায় আনা হয় এ কথা সত্য। কিন্তু এরপর কেউ কোনো অভিযোগ নিয়ে না আসায় তাকে অন্য একটি আইনে মামলা রুজু করে কোর্টে পাঠানো হয়। এ সময় তিনি স্কুলছাত্রীকে অপহরণ চেষ্টার ঘটনা জানতেন না বলেও জানিয়ে বলেন, এখনও যদি এ ঘটনায় কেউ এজাহার নিয়ে আসে তাহলে মামলা নিয়ে আসামিকে গ্রেপ্তার করা হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত