ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

বিজিএমইএ ভবন ভাঙার অনিশ্চয়তা কাটছেই না

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ০৭ নভেম্বর ২০১৯, ১১:০১

বিজিএমইএ ভবন ভাঙার অনিশ্চয়তা কাটছেই না

আবারও অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে রাজধানীর হাতিরঝিলের বুকে অবৈধভাবে গড়ে তোলা বিজিএমইএ ভবন ভাঙার কাজ।

ভবনটি ভাঙতে রাজউক ঠিকাদার মেসার্স ফোর স্টার এন্টারপ্রাইজকে দায়িত্ব দিয়েছে। কিন্তু তারা বলছে, ভবনের মালামাল বিজিএমইএ সরিয়ে নেওয়ায় এ কাজে তারা আর লাভবান হবেন না।

প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক মো. নছরুল্লাহ খান রাশেদ বলেন, বুধবার বিজিএমইএ ভবন দেখে এসে তারা দর পুনর্মূল্যায়নের আবেদন করেছেন।

তিনি বলেন, আমরা ভবনটি ঘুরে দেখি বিজিএমইএ সেখান থেকে তাদের মালামাল সরিয়ে নিয়েছে। নিলামের সময় যেসব মালামাল এখানে ছিল তার কিছুই এখন নেই। এখন শুধু ভবনের কাঠামোটা আছে। এই ভবনে যে মালামাল আছে তা বিক্রি করে ভাঙার খরচও উঠবে না।

রাজউক কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করে ভবনের দরপত্রে থাকা দর পুনর্মূল্যায়নের আবেদন করার কথা জানিয়ে রাশেদ বলেন, আমাদের মালামাল শর্ট। আমরা বলেছি তারা যেন বিষয়টি বিবেচনা করেন। তবে রাজউক জানিয়েছে, দরপত্রে থাকা দর কমানো সম্ভব না। এখন আমরা অপেক্ষায় আছি। সোমবার রাজউক আমাদের চিঠি দেবে, তারপর আমরা সিদ্ধান্ত নেব।

গত এপ্রিলে ভবনটি ভাঙা এবং ব্যবহারযোগ্য মালামাল কিনতে আগ্রহী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে দরপত্র আহ্বান করে বিজ্ঞপ্তি দেয় রাজউক। আগ্রহীদের ২৪ এপ্রিল বিকাল ৪টার মধ্যে রাজউক চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করতে বলা হয়।

দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভবন ভাঙার জন্য আলাদা কোনো অর্থ পাবে না। দুটি বেইজমেন্টসহ ১৫ তলা বিজিএমইএ ভবন ভাঙার পর ব্যবহারযোগ্য মালামাল বিক্রি করে তারা তাদের খরচ ও লাভ উঠিয়ে নেবে।

তিন মাসের মধ্যে ভবন ভাঙার শর্ত দিয়ে ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, আগ্রহী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে বহুতল ভবন ভাঙার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। ভাঙার ব্যাপারে ক্রেতাকে সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে।

রাজউকের ওই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর পাঁচটি কোম্পানি দরপ্রস্তাব জমা দেয়। এর মধ্যে মেসার্স সালাম অ্যান্ড ব্রাদার্স এক কোটি ৭০ লাখ টাকা, পিএনএস এন্টারপ্রাইজ ৫৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা, মেসার্স চন্দ্রপুরী এন্টারপ্রাইজ এক কোটি টাকা, ফোর স্টার এক কোটি ৫৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা এবং মেসার্স সামিরা এন্টারপ্রাইজ ৩০ লাখ টাকা দর প্রস্তাব করে।

প্রথমে সর্বোচ্চ দরদাতা মেসার্স সালাম অ্যান্ড ব্রাদার্সকে কাজটি দেওয়ার অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা অপারগতা জানালে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে চট্টগ্রামের ফোর স্টার এন্টারপ্রাইজ কাজটি পায়।

বিজিএমইএ ভবনকে হাতিরঝিল প্রকল্পের ‘ক্যান্সার’ আখ্যায়িত করে হাই কোর্ট ২০১১ সালে এক রায়ে ইমারতটি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেয়। পরে আপিল বিভাগেও তা বহাল থাকে।

সর্বোচ্চ আদালত বিজিএমইএ ভবন ভাঙার রায় দেওয়ার পর কয়েক দফা সময় নেয় বিজিএমইএ। সবশেষ আদালতের দেওয়া সাত মাস সময়সীমা গত ১২ এপ্রিল শেষ হয়।

এরপর ১৫ এপ্রিল বিজিএমইএ ভবনের মালামাল সরিয়ে নিতে একদিন সময় বেঁধে দেয় রাজউক। পরে সময় বাড়ানো হয় আরও। ভবনে থাকা ১৯টি কোম্পানি তাদের মালামাল সরিয়ে নিলে ভবন বন্ধ করে তালা ঝুলিয়ে দেয় রাজউক।

কিন্তু ভবন ভাঙার কাজ শুরুর আগে ২১ অক্টোবর আবার মালামাল সরিয়ে নিতে শুরু করে বিজিএমইএ। এ অবস্থায় ২২ অক্টোবর রাজউকের চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়ে আপত্তি জানায় ফোর স্টার।

চিঠিতে বলা হয়, বিজিএমইএ ভবন থেকে লিফট, এয়ার কন্ডিশনের কমপ্রেসার, সাব স্টেশন প্যানেল বোর্ড, তামার তারসহ বিক্রয়যোগ্য মালামাল রাজউকের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে বিজিএমইএর লোকজন নিয়ে যাচ্ছে। মালামাল যেন সরিয়ে নিতে না পারে, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে। তবে ঠিকাদারের আবেদনে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি রাজউক।

এ অবস্থায় প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক মো. নছরুল্লাহ খান রাশেদ ফোর স্টার এন্টারপ্রাইজ ভবন ভাঙার কাজ থেকে সরে আসতে পারে বলে আগেই আভাস দিয়েছিলেন।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত