ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

সুন্দরবন বাঁচাল বাংলাদেশকে, সুন্দরবনকে বাঁচাবে কে?

  রবিন আকরাম

প্রকাশ : ১০ নভেম্বর ২০১৯, ১৩:৪৭  
আপডেট :
 ১০ নভেম্বর ২০১৯, ১৯:২৫

সুন্দরবন বাঁচাল বাংলাদেশকে, সুন্দরবনকে বাঁচাবে কে?

ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ যে ভয়াল রূপ নিয়ে এগিয়ে আসছিল তাতে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছিলো। তবে সে অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড়টি থাবা বিস্তার করতে পারেনি।

তবে এর প্রভাবে দেশের বিভিন্ন জেলায় বাড়িঘর, গাছপালাসহ সম্পদের ক্ষতি হলেও ব্যাপকভাবে হয়নি। এর মূল কারণ, ভয়ংকর রূপ নিয়ে এগিয়ে আসা ঘূর্ণিঝড়টির সামনে অনেকটা বাধার প্রাচীর হয়ে দাঁড়ায় সুন্দরবন। ফলে ঘূর্ণিঝড়টির গতি কমে অনেকটা দুর্বল হয়ে খুলনা উপকূলে আঘাত হানে।

ঘূর্ণিঝড়ের ৩ দিকেই সুন্দরবন জুড়ে ছিল। যেহেতু ঘূর্ণিঝড় উত্তর দিকে অগ্রসর হচ্ছিল, সুন্দরবনের কারণে তার অবস্থানের পরিবর্তন কমে এসেছে। ঘূর্ণিঝড়ের নিজস্ব শক্তিও কমে আসে। ফলে বাংলাদেশ বড় ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়াবিদরা।

চলতি বছর যতগুলো ঘূর্ণিঝড় হয়েছে, তার অধিকাংশই সুন্দরবনকেন্দ্রিক হওয়ায় রক্ষা পেয়েছে বাংলাদেশ। অতীতেও সুন্দরবন বহুবার নিজে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে রক্ষা করেছে দক্ষিণ জনপদকে। সাম্প্রতিক সময়ে ২০০৭ সালের ‘সিডর’ ও ২০০৯ সালের ঘূর্ণিঝড় ‘আইলা’র গতি-শক্তিও অনেকটাই কমে গিয়েছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই ম্যানগ্রোভ বনের কারণে।

২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঘণ্টায় ২২৩ কিলোমিটার বেগে ধেয়ে আসা সিডরে প্রাণ হারান ৩৪০৬ জন। আহত হন প্রায় আধলাখ মানুষ। এছাড়া, ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত, ফসল নষ্টসহ কোনো না কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন প্রায় ৮৯ লাখ মানুষ।

পরে আন্তর্জাতিক এক গবেষণায় জানানো হয়, সিডরের সময় সুন্দরবন না থাকলে অন্তত ৪৮৫ দশমিক ২৯ মিলিয়ন ডলার বা ৩ হাজার ৮৮২ কোটি ৩২ লাখ টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতি হতো।

এছাড়া, ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলার আঘাতে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ মিলিয়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন ৩৩৯ জন। জলোচ্ছ্বাসে ঘরবাড়ি হারিয়ে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছিলেন প্রায় ১০ লাখ মানুষ। সেবারও সুন্দরবনের কারণে ক্ষয়ক্ষতি অনেক কম হয়েছিল বলে জানিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞরা।

অথচ অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি এই সুন্দরবনের অস্তিত্ব প্রাকৃতিক ও মানব সৃষ্ট নানা দুর্বিপাকে বিপন্ন। তার উপর এখন মড়ার উপর খাড়ার ঘা হিসেবে যুক্ত হয়েছে বিশাল এক কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদুৎ প্রকল্প। ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে নির্মিতব্য ১৩২০ মেগাওয়াট রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র।

বাংলাদেশের বিভিন্ন স্তরের মানুষসহ বিদেশি বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ, ব্যক্তি ও সংগঠনের আপত্তিস্বত্ত্বেও ভারত-বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগের এই প্রকল্প থেকে সরে আসছে না সরকার।

মূলত কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র মারাত্মক পরিবেশ দূষণকারী বলে সাধারণত কোন সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও জনবসতির ১৫-২০ কিমি এর মধ্যে এ ধরণের বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয় না। এসব কিছু জানার পরেও সেখানে তাপ বিদুৎ প্রকল্পের কাজ চলছে।

বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের জন্য একটি গৌরব এই সুন্দরবন। এই বনের কারণেই বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে বারবার রক্ষা পেয়ে থাকে। অথচ এই সুন্দরবনকে আজ ধ্বংসের পথে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে সুন্দরবনে ঢুকে গাছ কেটে কাঠ সংগ্রহ করছে। এসব কুচক্রী মহল সুন্দরবনের বৃক্ষ নিধনে নেমে পড়েছে।

যে সুন্দরী গাছের জন্য সুন্দরবন বিখ্যাত, সেই সুন্দরী গাছও আজ ধ্বংসের পথে। এক সময় সুন্দরবনে অনেক বাঘ ছিল। এখন হাতেগোনা কয়েকটি বাঘের সন্ধান মিলতে পারে। মাঝেমধ্যে বাঘের অকালমৃত্যুর খবর আমাদের ভাবিয়ে তোলে। কেউ কেউ বাঘ শিকার করছে বাঘের চামড়া পাচার করে অর্থ উপার্জন করছে। শুধু তাই নয় এরা বাঘের ছোট বাচ্চাদেরও রেহাই দিচ্ছে না।

সুন্দরবনে মাছ ধরতে গিয়ে হরিণ শিকার করছে। একসময় সুন্দরবনে এমন ভীতিকর পরিবেশ ছিল যে, যদি কেউ সুন্দরবনে প্রবেশ করত গাছপালার ভিড়ে চারদিক অন্ধকার দেখাত ও প্রাণীদের পায়ের আওয়াজে শরীরে শিহরণ সৃষ্টি হতো। এখন সুন্দরবনে প্রবেশ করলে প্রাণিকুলের সন্ধান পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।

শুধু তাই নয় সুন্দরবনে নদী দিয়ে প্রবেশ করা তেলবাহী জাহাজ ডুবে গিয়ে নদীর পানির সঙ্গে তেল মিশে মৎস্য প্রজাতির বিচরণক্ষেত্রে মারাত্মক বাধা সৃষ্টি করছে। এভাবে চলতে থাকলে পরবর্তী প্রজন্ম সুন্দরবনের ইতিহাস-ঐতিহ্য জানতে পারবে না। সুন্দরবন যে পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন, তা তারা বিশ্বাসই করতে পারবে না। তাই সুন্দরবন রক্ষায় যথাযথ কর্তৃপক্ষকে কঠোর আইন প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

আরএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত