ঢাকা, রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১০ মিনিট আগে
শিরোনাম

‘ধর্ম অবমাননা’

ভোলায় আবারো সমাবেশের চেষ্টা

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২০ নভেম্বর ২০১৯, ১১:৪৭

ভোলায় আবারো সমাবেশের চেষ্টা

ভোলার বোরহানউদ্দিনে এক তরুণের ফেইসবুক আইডি ‘হ্যাক করে’ মেসেঞ্জারে কথিত ধর্ম অবমাননাকর বক্তব্য ছড়ানোর পর এক সমাবেশ থেকে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনার পর একটি সংগঠন আবারও সমাবেশ করার চেষ্টা করছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

গত ২০ অক্টোবর বোরহানউদ্দিন ঈদগাহ মাঠে ‘তাওহিদি জনতার’ ব্যানারে একটি সামবেশ থেকে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় নিহত হন চারজন। এ ঘটনায় আহত হন পুলিশসহ শতাধিক মানুষ।

যে হিন্দু তরুণের ফেইসবুক ‘হ্যাক করে’ মেসেঞ্জারে কথিত ধর্ম অবমাননাকর বক্তব্য ছড়ানো হয়েছিল, সেই বিপ্লব চন্দ্র বৈদ্য শুভ এখনও রয়েছেন কারাগারে।

পুলিশ জানিয়েছে, জেলার পরিস্থিতি এখন ভালো। তবে তাওহিদি জনতার নামে ২৩ নভেম্বর আবারও সমাবেশ করার জন্য আবেদন করেছে একটি সংগঠন। গত মাসের ঘটনায় নিহতদের স্মরণে ‘মোনাজাত’ করার কথা বলে ভোলা সদর হাই স্কুল মাঠে এই সমাবেশের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। জেলার বিভিন্ন এলাকার ‘হুজুররা’ ওই মোনাজাতে অংশ নেবেন বলে সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে পুলিশ প্রশাসন এখনও অনুমতি দেয়নি।

ওই সংঘর্ষের ঘটনার পর পুলিশ সদরদপ্তর বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলামকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। সেই কমিটি গত ২ নভেম্বর পুলিশ সদরদপ্তরে প্রতিবেদন জমা দেয়।

এদিকে তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মো. সোহেল রানা।

তদন্ত কমিটির সদস্য ভোলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মীর মো. সাফীন মাহমুদ জানান, ওই সংঘর্ষের ঘটনার পুলিশের কোনো গাফিলতি ছিল কিনা- সে বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ঘটনার সময়ের ভিডিওগুলো বিশ্লেষণ করা হয়েছে এবং পুলিশ কখন গুলি ছুড়তে বাধ্য হয়েছে, তাও তদন্ত করা হয়েছে। ফেইসবুকের কোনো ঘটনাকে কেন্দ্র করে আবারও যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটাতে পারে, সেজন্য সাত থেকে আটটি সুপারিশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

সে সময় ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানো, সংঘর্ষ এবং হিন্দু বাড়িতে হামলার ঘটনায় মোট তিনটি মামলা করা হয় থানায়, যার তদন্তে খুব বেশি অগ্রগতি নেই।

এর মধ্যে বিদ্বেষ ছড়ানোর ঘটনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় বিপ্লব চন্দ্র বৈদ্যের পাশাপাশি বোরহানউদ্দিনের কাচিয়া ইউনিয়নের মো. ইমন ও রাফসান ইসলাম শরীফ ওরফে শাকিলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা তিনজনই রয়েছেন কারাগারে।

বিপ্লবের বাড়ি বোরহানউদ্দিন উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডে। বাবা চন্দ্র মোহন বৈদ্য একজন কৃষক, মা বাসন্তী রানী বৈদ্য গৃহিনী। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে শুভ সবার ছোট। ২০১০ সালে মাধ্যমিক ও ২০১২ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করা বিপ্লব চলতি বছর ভোলা সদরের নাজিউর রহমান ডিগ্রি কলেজ থেকে ডিগ্রি (পাস কোর্স) পরীক্ষা দিয়েছেন। গত ১৮ অক্টোবর রাতে বোরহানউদ্দিন থানায় গিয়ে শুভ জানান, তার ফেইসবুক আইডি হ্যাকারের কবলে পড়েছে। তার করা জিডির ভিত্তিতে তদন্তে নেমে পুলিশ দেখতে পায়, ওই আইডি থেকে মেসেঞ্জারে ‘ধর্ম অবমাননাকর’ বক্তব্য ছড়ানো হয়েছে। আর সেই বক্তব্যের ‘স্ক্রিনশট’ ফেইসবুকে ছড়িয়ে তৈরি করা হয়েছে উত্তেজনা।

এরপর রোববার শুভর বিচারের দাবিতে বোরহানউদ্দিন ঈদগাহ ময়দানে ‘মুসলিম তৌহিদি জনতা’র ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে পুলিশের ওপর হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

সেদিনই পুলিশ সদরদপ্তরের এক বিবৃতিতে বলাহয়, দুই ঘণ্টা ধরে চলা হামলা-সংঘর্ষের মধ্যে পুলিশকে লক্ষ্য করেও গুলি চালানো হয়, তাতে এক পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হন। সংঘর্ষে যে চারজন নিহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে দুজনের মাথা ভোঁতা অস্ত্র দিয়ে থেঁতলানো ছিল বলেও চিকিৎসকের বরাতে জানায় পুলিশ সদরদপ্তর।

এদিকে বিপ্লবের ফেইসবুক আইডি হ্যাকড হয়েছে কি না, বা হলে কে বা কারা তা করেছে এ বিষয়ে পুলিশ এখনও কিছু জানাতে পারেনি।

এ ঘটনায় তিনটি মামলায় এ পর্যন্ত মোট ১৩ জনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে পুলিশ।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসবি

  • সর্বশেষ
  • পঠিত