ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩২ মিনিট আগে
শিরোনাম

কালের সাক্ষী রতনপুর জমিদার বাড়ি

  দিনাজপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৯:৩৫

কালের সাক্ষী রতনপুর জমিদার বাড়ি

দিনাজপুরের বিরামপুরে ইতিহাস ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ বহু দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এর মধ্যে উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের রতনপুর বাজারের উত্তর পার্শ্বে অবস্থিত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনস্বরূপ জমিদার বংশের বাড়িটি যুগ যুগ ধরে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তবে অযত্ন আর অবহেলায় তা আজ ধ্বংসের শেষ প্রান্তে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, বিরামপুরসহ আশেপাশের এলাকাগুলোতে প্রজাদের নিকট থেকে খাজনা আদায় করার জন্য অষ্টাদশ শতকে ব্রিটিশরা ফুলবাড়ি জমিদারের পক্ষে রাজকুমার সরকারকে রতনপুর কাছারিতে প্রেরণ করেন। কিন্তু রাজকুমারের মেধা চতুরতা আর কৌশলতা তার ভাগ্যের চাকা বদলে জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। অবাক ব্যাপার যে, রাজকুমারের খাজনা আদায়ের পারদর্শীতা ও নৈপুণ্যে জমিদার সাড়ে ছয়শ বিঘা জমি উপহারসহ তার নিজের বোনের সাথে রাজকুমারের বিয়ে দেন। এর ফলে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছের মত সৌভাগ্যক্রমে সাধারণ খাজনা আদায়কারী থেকে জমিদার বনে যান তিনি।

আরো জানা যায়, রাজকুমার অধিক অর্থ সম্পদের লিপ্সায় মেতে উঠে স্থানীয় রঘু হাসদা নামের এক অঢেল সম্পত্তির প্রতাপশালী সাঁওতালের কাছ থেকে ধার করে নেয়ার কথা বলে ৫ বস্তা কাঁচা টাকা দিয়ে অন্য জমিদারগণের নিকট ৩শ বিঘা জমি কিনে নেন। এ ঘটনার ২ বছর পর আবারো রঘু হাসদার আড়াইশো বিঘার ফলের বাগান চতুরতায় কয়েদ করে নিয়ে অত্যন্ত সুকৌশলে উপকারী রঘু হাসদাকে এলাকা থেকে বিতাড়িত করেন। মোট ১২শ বিঘার ফলদ, বনজ ঔষধি জমির মালিক ধূর্ত রাজকুমার নামের নব্য জমিদার আরাম আয়েশের জন্য বিলাস বহুল অভিজাত চমকপ্রদ এই সুদৃশ্য দ্বিতল অট্টালিকা নির্মাণ করেন।

কিন্তু তার এ সুখ বেশী দিন স্থায়ী হয়নি, জমিদারের দুইপুত্র রতন কুমার ও রখুনী কান্ত বাবুর মধ্যে বড় ছেলে রতন কুমার ১৬ বছর বয়সে মন্দিরের পুকুরে স্নান করতে গিয়ে ডুবে মরে। পুত্রের অনাকাঙ্খিত বিয়োগে জমিদার শোকে বিহব্বল হয় নির্বিকার হয়ে যান, মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন, যাতে তার নিজের জীবন প্রদীপও নিভে যায়। রতনপুর জমিদার বাড়ির পরবর্তী অধ্যায়ে উত্তরাধীকারী হিসেবে পিতার মৃত্যুর পর ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে একমাত্র পুত্র রখুনী কান্ত বাবুই পৈত্রিক সূত্রে জমিদারি লাভ করেন ও মালিক হন এই জমিদার বাড়িটির।

যতদূর জানা যায়, রখুনী কান্ত বাবু জমিদারি থাকাকালীন সময়ে তার বাড়িতে ১০০টি বিড়াল পুষেছিলেন, যে বিড়ালগুলোর দুধের বাটি দিলেও দুধ পান করত না যতক্ষন পর্যন্ত মালিকের হুকুম না হত। জমিদার রখুনী কান্তর দরবারে প্রতিবেশী কেউ গেলে প্রস্থানের পর উক্ত স্থান ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে নেয়া হত।

আরো জানো যায়, জমিদার রখুনী কান্ত বাবুর কোন সন্তান ছিলনা। কিন্তু ১৯৭১ সালে এদেশে স্বাধীনতার যুদ্ধ শুরু হলে রখুনী কান্ত বাবু স্বস্ত্রীক একটি মহিষের গাড়িতে চড়ে রাতের আঁধারে কলকাতার উদ্দ্যেশে তার বংশধরদের কাছে পাড়ি দেন।

জমিদার বাড়িটি ভূমি অফিস হিসেবে ব্যবহার হলেও ঝূঁকিপূর্ণ হওয়ায় উত্তর পাশে আর একটি নতুন ভবন তৈরি করা হয়েছে যেটি খানপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।

বর্তমানে রখুনী কান্ত বাবুর জমিদার বাড়ির পাশে রয়েছে ইসলামিক মিশন, মাদ্রাসা, মসজিদ, কয়েকটি প্রতিষ্ঠানসহ বিশাল একটি পুকুর। বর্তমানে রখুনী কান্ত বাবুর ১২শ বিঘা জমি ফলদ, বনজ ও ওষধি বাগান রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকির অভাবে অনেক সম্পত্তি বিলীন ও বেদখল হয়ে গেছে। যতটুকুর হদিস মিলেছে ততটুকুই দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মহোদয় জমিদার রখুনী কান্ত বাবুর সম্পত্তি ১নং খাস খতিয়ানে অন্তর্ভূক্ত করেছেন।

লতায় পাতায় ছেঁয়ে যাওয়া জীর্ণ জঙ্গলময় ভূতুড়ে পরিত্যক্ত এই জমিদার বাড়িটি ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার্থে সংস্কারের জন্য দিনাজপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এর আগে উদ্যোগ গ্রহন করা হয়।

বাড়িটি সম্পর্কে খানপুর ইউপি চেয়ারম্যান ইয়াকুব আলী মন্ডল বলেন, কয়েকবছর আগে শামীম আল রাজী, জেলা প্রসাশক (প্রাক্তন) এর পক্ষ থেকে সাবেক ইউএনও এসএম মনিরুজ্জামান আল মাসউদ এর মাধ্যমে রক্ষুনি কান্তর জমিদার বাড়িটির সংস্কারের জন্য বরাদ্দ এসেছিল। পরে সংস্কারও করা হয়। কিন্তু বর্তমানে আগের মতই পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে বাড়িটি। দিন দিন ভবনটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এটি পুনরায় সংস্কার করলে সরকারি কার্যক্রমে ব্যবহার করা যেতে পারে।

দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মাহমুদুল আলম জানান, দিনাজপুর জেলায় কয়েকটি রাজবাড়ী রয়েছে। এই রাজবাড়ী আমাদের ঐতিহ্য। এই রাজবাড়ী নতুন প্রজম্মের জন্য টিকিয়ে রাখার জন্য সরকার নতুন ভাবে ভাবতে শুরু করেছেন। আশা করি এই রাজবাড়ীগুলির জন্য মেরামত সংস্কারের জন্য অর্থ বরাদ্দ করলেই আবার তা মেরামত করা হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসবি

  • সর্বশেষ
  • পঠিত