৩ দিনে টাকা পরিশোধের নোটিশ, বিপাকে শিক্ষার্থীরা
জার্নাল ডেস্ক
প্রকাশ : ০১ মার্চ ২০২১, ২১:৪২
অতিমারি করোনার কারণে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রায় এক বছর যাবত বন্ধ রয়েছে। শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ১ বছর পর আগামী ২৪ মে থেকে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়া হবে। এরপরই ধারাবাহিকভাবে অনুষ্ঠিত হবে চলমান ১৭-১৮, ১৮-১৯, ১৯-২০ সেশনের ফাইনাল পরীক্ষা।
ফাইনাল পরীক্ষার প্রস্তুতি হিসেবে ২০১৭-১৮ সেশনের ফরম পূরণ ও সেশন ফি দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সাত কলেজ প্রশাসন। করোনাকালীন সময়ে উক্ত সেশন ফি নিয়ে বিপাকে পড়েছে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। করোনাভাইরাসের প্রভাবে আর্থিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় একসঙ্গে সেশন ফি ও ফরম পূরণের টাকা প্রদান করতে অসার্মথ্যতার প্রকাশ করছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের দাবি, করোনাকালীন সময়ে টিউশন ফি, পরিবহন ফি, বিদ্যুৎ সুবিধাগুলো ব্যবহার করেননি শিক্ষার্থীরা তাই আনুষঙ্গিক এ ফি মওকুফ করা। যদিও শিক্ষার্থীরা টিউশন ফি মওকুফের জন্য লিখিতভাবে নিজ কলেজের প্রশাসনের কাছে কোন আবেদন করেনি তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা প্রকাশ করছেন অসার্মথ্যতার কথা।
চলমান ২০১৭-১৮ সেশনের ফরমপূরণ ও সেশন ফি প্রায় ৭ হাজার টাকা ধার্য করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে অফিসিয়াল নোটিশে জানানো হয়, ফরম পূরণ ও সেশন ফি মার্চের ৮ তারিখের মধ্যে জমা দিতে হবে। পরিবারের আর্থিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় স্বল্প এ সময়ে এক সাথে এত টাকা সংগ্রহ করতে হিমশিম খাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির পরিবারের শিক্ষার্থীরা।
এ সম্পর্কে তিতুমীর কলেজের ১৭-১৮ সেশনের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান অভিযোগ করে বলেন, ‘বাবা নাই, ঘরে মা অসুস্থ তাই ছোট একটা চাকরি করে কষ্ট করে সংসার চালাতে হয়। মায়ের জন্য ওষুধ লাগে প্রতি মাসে প্রায় ২/৩ হাজার টাকা। ১০ হাজার টাকার চাকরি করে সংসার চালানোই দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে করোনা ভাইরাসে সব কিছু এলোমেলো। আর হুট করেই তিন দিন আগে সেশন ফি, ভর্তির নোটিশ। এতগুলো টাকা এক সাথে কীভাবে দিবো বুঝতে পারছি না। ঘর ভাড়া থাকা খাওয়া মায়ের ওষুধ সব মিলিয়ে চলতেই কষ্ট হয়। করোনায় টাকার অভাবে সবগুলো বইও এখনো কিনতে পারিনি। করোনায় যেহেতু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ছিল তাই সেশন ফি মওকুফ করার দাবি জানাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ফলে না চরেছি বাসে, না ক্লাসের বিদ্যুৎ সুবিধা নিয়েছি। অন্তত এই ফি গুলো মওকুফ করা হোক। স্বল্প এ সময়ে এতগুলো টাকা পরিশোধ করবো না মায়ের জন্য ওষুধ কিনবো না সংসার চালাবো।’
ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী তানমিয়া হক বলেন, করোনার সময়ে হুট করেই ৩য় বর্ষে সেশন ফি পরিশোধের নোটিশ দেয়া হয়। সময়ও দেয়া হয় মাত্র ৩ দিন। এমনিতেই করোনায় পরিবারের আর্থিক অবস্থা শোচনীয় তারপর এতগুলো টাকা! একসঙ্গে মাত্র তিনদিনে এতগুলো টাকা দেয়া প্রায় অসম্ভব। কলেজের প্রশাসন থেকে অন্তত কিছু টাকা মওকুফ করা উচিত। আমাদের মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদের পরিস্থিতি একটু বিবেচনা করা উচিত।
তিতুমীর কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আলাউদ্দিন বলেন, করোনা ভাইরাসে আমার পরিবারের অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়ে। আব্বুর একটা ছোট চাকরি ছিল সেটাও হারিয়ে ফেলে। অনেক কষ্ট একটা চাকরি ম্যানেজ করলে পরিবারের ভরণ পোষণ করতে কষ্ট হয়। ছোট একটা টিউশনি করে নিজের হাত খরচ চালিয়ে থাকি কোন রকমে। কিন্তু হঠাৎ সেশন ফি ও ফরম পূরণের এতগুলো টাকা প্রদান করার নির্দেশ দেয়াতে মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে। না পারছি বাসায় বলতে না পারছি টাকা ম্যানেজ করতে। এমনিতেই করোনার ফলে আর্থিক অবস্থা গিয়ে ঠেকেছে তলানিতে। হুট করে এতগুলো টাকা যোগাড় করা প্রায় অসম্ভব। এখন কী করবো বুঝতেছি না। কলেজ প্রশাসনের কাছে আবেদন আমাদের দিকটি একটু বিবেচনা করা উচিত।
এ সম্পর্কে তিতুমীর কলেজের শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক প্রফেসর এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার বলেন, আসলে সেশন ফি কলেজের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। এটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই নির্ধারিত। আমাদের এখানে কোন হাত নেই। তবে ম্যানেজমেন্ট ফি আমরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে তা নিচ্ছি না। সেশন ফি, ফরম পূরণের টাকা মওকুফ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব না। ঢাবির নির্দেশমতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নিদিষ্ট তারিখেই আদায় করতে হচ্ছে। একান্ত যার পক্ষে সম্ভব নয় কলেজের লিখিত আবেদন করলে হয়তো দুই একজনকে বিবেচনা যায়।
করোনার ফলে যেহেতু কলেজের পরিবহণ, বিদ্যুৎ, ল্যাব ইত্যাদি সুবিধা ব্যবহার করা হয়নি তার ফি পরিশোধ করা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কলেজ খোলার পরই বাস আবার চলবে। এতদিন যেহেতু বাস অচল অবস্থায় ছিল তার ফলে বাসের প্রচুর যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়েছে এগুলো ঠিক করাতে হবে। তারপর বাস, ল্যাব ইত্যাদি দেখভাল করার জন্য সব সময় লোকবল ছিল তাদের বেতন ও পরিশোধ করতে হবে। এই বিষয়গুলোও শিক্ষার্থীদের ভাবতে হবে। আমরা চাই শিক্ষার্থীদের অবস্থা বুঝতে কিন্তু আমাদের কিছু করার নেই। যতটুকু পেরেছি আমরা করার চেষ্টা করেছি।
বাংলাদেশ জার্নাল/এনএইচ/এমএস