ঢাকা, শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : কিছুক্ষণ আগে
শিরোনাম

শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় জেলা-উপজেলা কোটা বাতিল করেছেন হাইকোর্ট

শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় জেলা-উপজেলা কোটা বাতিল করেছেন হাইকোর্ট

সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিবন্ধন সনদধারী শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে উপজেলা, জেলা কোটা পদ্ধতি বাতিল ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে নিবন্ধন সনদধারীদের শিক্ষকতার মেয়াদ আজীবন ঘোষণা করেছেন আদালত। এছাড়া রায় পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিবন্ধন সনদধারী শিক্ষকদের মেধা তালিকা এনটিআরসির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার (১৪ই ডিসেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি রেজা-উল হক এবং বিচারিপতি মোহাম্মদ উল্লাহর বেঞ্চ এমন আদেশ দিয়েছেন। হাইকোর্টের আদেশে নিবন্ধন সনদের মেয়াদ ৩ বছর না থাকার কথা বলা হয়েছে। আগের মতোই আজীবন মেয়াদ। জেলা ও উপজেলা ভিত্তিক নিয়োগ পদ্ধতিও বাতিল করতে বলা হয়েছে। রিটকারী ও নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের আইজীবীরা এ তথ্য জানিয়েছেন।

একজন রিটকারী জানান, ২০১৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে নিয়োগের দাবিতে বিভিন্ন সময়ে করা ১৬৬টি রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে শুনানী শেষে রায়ের দিন ধার্য ছিলো।

২০০৫ খ্রিস্টাব্দে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন করে আইন প্রণয়ন করে সরকার। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগগের প্রাক-যোগ্যতা হিসেবে নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সনদ অর্জন বাধ্যতামূলক করা হয়। ওই বছরই প্রথম নিবন্ধন পরীক্ষা হয়। চলতি বছর ত্রয়োদশ নিবন্ধন পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়। তবে, প্রথম থেকে দ্বাদশ নিবন্ধন পরীক্ষা ছিলো এন্ট্রি লেভেলে শিক্ষকতা পেশায় প্রবেশের প্রাক-যোগ্যতা নির্ধারণের।

অপরদিকে, ত্রয়োদশ নিবন্ধন পরীক্ষা হয় এন্ট্রি লেভেলে [সহকারী শিক্ষক, প্রভাষক, মৌলভী ইত্যাদি] নিয়োগের জন্য প্রার্থী বাছাইয়ের চূড়ান্ত পরীক্ষা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে প্রকাশিত গেজেট অনুযায়ী ত্রয়োদশ থেকে পরবর্তী পরীক্ষাসমূহে উত্তীর্ণ হলে আর কোনো পরীক্ষা দিতে হবে না প্রার্থীদের। শূন্যপদ থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরাসরি পাঠানো হবে উত্তীর্ণদের এবং প্রতিষ্ঠান কর্তৃক দেয়া নিয়োগপত্র নিয়ে যোগদান করতে হবে।

এর আগে গত ৮ নভেম্বর একই বেঞ্চে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিবন্ধন সনদধারী শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে উপজেলা, জেলা কোটা পদ্ধতি বাতিল ঘোষণা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। এছাড়া নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতি সংবিধানের সঙ্গে কেন সাংঘর্ষিক হবে না রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। ৭ দিনের মধ্যে শিক্ষা সচিব, এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

আইনজীবী সাহাবুদ্দিন লার্জ বলেন, বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা গ্রহণ-প্রত্যয়ন বিধিমালার ২০০৬ এর বিধি ৯ এর উপ-বিধি ২ (গ) চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। জামালপুরের সেলিম রেজাসহ ১৭২ জন নিবন্ধন সনদধারী এ রিট দায়ের করেন। ২ এর (গ) তে বলা আছে, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের উপজেলা, জেলা এবং জাতীয়ভিত্তিক মেধাক্রম অনুসারে ফলাফলের তালিকা প্রণয়ন ও প্রকাশ করা হবে।

তিনি জানান, আমরা আদালতকে বলেছি কোটা পদ্ধতির কারণে মেধাবী অনেকেই চাকরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এটা সংবিধানের ২৯ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ২৯ অনুচ্ছেদের ১ এ বলা হয়েছে, `প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকিবে।’ আদালত শুনানি শেষে এ রুল জারি করেন।

এদিন দেশের বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরি কাম প্রহরী পদে অস্থায়ী ভিত্তিতে কর্মরত একশ ৮৫ জনের চাকরি কেন রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার আলাদা দুটি রিট আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের পুথক দুটি বেঞ্চ এই রুল জারি করেন।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি আশিষ রঞ্জন দাসের হাইকোর্ট বেঞ্চ ঢাকার সুত্রাপুরের লালচান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মো. মজিবুর রহমানসহ একশ ৫৫ জন এবং বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি জাফর আহমেদের হাইকোর্ট বেঞ্চ পিরোজপুরের অনুতোস দাস, রাব্বী তালুকদারসহ ৩০ জনের বিষয়ে রুল জারি করেন।

রিট আবেদনকারীদের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া, নাসিরউদ্দিন খান সম্রাট।

সরকার ২০১২ সালে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরি কাম প্রহরী নিয়োগের জন্য নীতিমালা তৈরি করেন। এরপর সারাদেশে ৩৬ হাজার ৯৮৮টি পদ সৃষ্টির মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হয়। এ অবস্থায় রাজস্ব খাতে স্থানান্তর চেয়ে সংশ্লিষ্টরা রিট আবেদন করেন। ওই রিটের শুনানিতে আদালত এই আদেশ দিলেন।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত