ঢাবিতে মারামারি
ছাত্রলীগ ও ছাত্র অধিকার পরিষদের পাল্টাপাল্টি দোষারোপ
ঢাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৭ অক্টোবর ২০২২, ২১:১১
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী পালনকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) মারামারিতে জড়ায় ছাত্রলীগ ও ছাত্র অধিকার পরিষদ। ঘটনায় দুই দল পরস্পরকে প্রথমে হামলা করেছে বলে দোষারোপ করছে। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মামলা দায়ের করতে শাহবাগ থানায় যায় ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ।
শুক্রবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে ঢাবির সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদের ব্যানারে ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা স্মরণসভা করতে গেলে মারামারির ঘটনা ঘটে। আহতরা ঢাকা মেডিকেলে গেলে পুনরায় হাতাহাতিতে জড়ায় দুই সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
পরবর্তীতে ২০ জনকে আটক করে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। শাহবাগ থানার ওসি নূর মোহাম্মদ আটকের বিষয়টি বাংলাদেশ জার্নালকে নিশ্চিত করেন।
ঘটনার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আকরাম হুসাইন সিএফ বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ অনুষ্ঠান করতে আসলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমাদের ওপর হামলা করে। আমিসহ আমাদের মোট ১৩ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে। আমরা ঢাকা মেডিকেল চিকিৎসার জন্য আসি।’
এদিকে পুনরায় ঢাকা মেডিকেলে হাতাহাতিতে জড়ায় দুই দলের নেতাকর্মীরা। এ বিষয়ে ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, বিকেল সাড়ে তিনটায় রাজু ভাস্কর্যে আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদের ব্যানারে আয়োজিত স্মরণ সভায় ছাত্রলীগের হামলায় আমাদের ১০-১৫ নেতাকর্মী আহত হয়। তাদেরকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করানো হয়। পরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সেখানেও আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায়। এতে আমিসহ আমাদের বেশ কয়েকজন অসংখ্য নেতাকর্মী আহত হয়। ছাত্রলীগ আমাদের আটকে রাখলে পুলিশ এসে আমাদের ঢাবি শাখার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ প্রায় ১৫ জনকে শাহবাগ থানায় তুলে নিয়ে যায়।
তবে ঘটনাটি সম্পূর্ণ উল্টোভাবে বলছে ছাত্রলীগ। তাদের দাবি, ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা শুরুতে ছাত্রলীগের ওপর হামলা চালায়। মেডিকেলে দ্বিতীয় দফার মারামারির জন্যও তারা ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের দায়ী করে।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব খান গণমাধ্যমকে বলেন, ছাত্রলীগের কেউ তাদের ওপর হামলা করেনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যাচাই করতে এসেছে যারা প্রোগ্রাম করছে তারা ক্যাম্পাসের কি না। এরপর প্রক্টরিয়াল টিম সেটি যাচাই করতে গেলে তারা শুরুতে উস্কানিমূলক স্লোগান দেয় এবং হামলা চালায়।
দ্বিতীয় দফায় মেডিকেলে হাতাহাতির পর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি কামাল খান বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘ঢাকা মেডিকেলে আমাদের চিকিৎসারত নেতাকর্মীরা ছিলেন। ওইসময় তারা এসে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায়। তাদেরকে প্রটেক্ট করার জন্য আমরা এখানে এসেছি। আমাদের কেউ কারো ওপর হামলা করেনি। আমরা প্রশাসনকে সাহায্য করেছি।’
মারামারিতে আহত ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজিম উদ্দীন বলেন, ‘তারা (ছাত্র অধিকার পরিষদ) আবরারের নামে রাজু ভাস্কর্যে একটি প্রোগ্রাম করছিলো। তারা আবরারের নাম দিয়ে জামাত-শিবির ও জঙ্গিবাদসহ অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্য এ প্রোগ্রাম করছে। আমরা গিয়ে তাদেরকে বলি আপনারা যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী না এখানে আপনারা প্রোগ্রামটি করবেন না। আপনারা বুয়েটে গিয়ে এই প্রোগ্রামটি করতে পারেন।
তিনি বলেন, এ কথা বলার পর তারা নেত্রীকে (শেখ হাসিনা) নিয়ে এবং ছাত্রলীগকে নিয়ে আজেবাজে স্লোগান দিতে থাকে। আকতারকে ছাড়া আমরা কাউকেই চিনতে পারছিলাম না। তারা সবাই বহিরাগত ছিল। তারপর আকতারের নির্দেশে আমাদের ওপর তারা হামলা চালায়। আমিসহ আমাদের প্রায় ৮-১০ জন নেতাকর্মী আহত হয়। তারপর ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে গেলে তারা পুনরায় আমাদের ওপর হামলা করে।
ছাত্রলীগের মামলা: সন্ধ্যায় ছাত্র অধিকার পরিষদের হামলার প্রেক্ষিতে আহত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজিম উদ্দীনকে নিয়ে শাহবাগ থানায় মামলা করতে যায় সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীরা। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি কামাল খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব খান, সাংগঠনিক সম্পাদক বরিকুল ইসলাম বাঁধনস একাধিক নেতা মামলার বিষয়টি বাংলাদেশ জার্নালের নিশ্চিত করেন। তারা বলেন, ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা দুই দফায় হামলা চালিয়ে আমাদের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজিম উদ্দীনসহ ৮-১০ জনকে আহত করে। আমরা হামলার প্রেক্ষিতে মামলা করতে থানায় এসেছি।
তবে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মামলার কাজ এখনো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মামলার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে শাহবাগ থানার ওসি নূর মোহাম্মদ বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ছাত্রলীগের ওপর হামলার একটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরা কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। এরপরে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েক প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, একটা দল ক্যাম্পাসকে সবসময় অস্থিতিশীল করতে চায়। অনুমতি না নিয়ে প্রোগ্রাম করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কার্যাবলি বিঘ্ন ঘটালে এ ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে। এর দায় ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের নিতে হবে।
বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে