ঢাকা, শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

শিক্ষকের হয়রানিতে মানসিক বিপর্যস্ত ছাত্রী

  ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৬ জুলাই ২০১৮, ১৫:৫২

শিক্ষকের হয়রানিতে মানসিক বিপর্যস্ত ছাত্রী

প্রতিষ্ঠার পর থেকে একের পর এক কেলেঙ্কারির জন্ম দিয়ে যাচ্ছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স এ্যন্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষকরা। কখনো নিয়োগ বাণিজ্য, যৌন নিপিড়ন আবার কখনো ছাত্রী হয়রানির মতো ঘটনার কারণে শুরু থেকেই সমালোচিত বিভাগটি। বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকার শিরোনাম হওয়া এ সকল শিক্ষকদের মধ্যে কারো কারো শাস্তি হলেও অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তাব্যক্তিদের আস্থাভাজন হওয়ায় যেনতেন ভাবে পার পেয়ে যান।

এসব সমালোচনার জের কাটতে না কাটতেই আবারো বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সঞ্জয় কুমার সরকারের বিরুদ্ধে তারই এক ছাত্রী অভিযোগ উঠেছে করেছেন। ওই ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষা বর্ষ অধ্যায়ন করছেন। হয়রানি ও হুমকি-ধামকির ফলে ওই ছাত্রী এখন মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছেন।

ক্যাম্পাস সূত্র ও ওই ছাত্রীর সহপাঠীরা জানান, ২০১৭ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ম শেখ হাসিনা হলে যৌন নির্যাতন, হয়রানি, ইভটিজিং বদ্ধে শিক্ষার্থীদের জন্য সচেতনতামূলক কর্মসূচির আয়োজন করে যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ সেল। ওই কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন উর রশিদ আসকারীসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন। এসময় হলের ছাত্রীরা ক্যাম্পাসে তাদের বিভিন্ন হয়রানিমূলক সমস্যার কথা তুলে ধরেন। উপাচার্য যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ সেলের মাধ্যমে এ সব সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন ছাত্রীদের। সেখানে ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের এক ছাত্রী নাম পরিচয় গোপন রেখে বিভাগের শিক্ষক সঞ্জয় কুমার সরকারের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানিমূলক অভিযোগ পেশ করেন। পরে উপাচার্য বিভাগের শিক্ষকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় সঞ্জয়কে এ বিষয়ে সতর্ক করে দেন।

ছাত্রীর সহপাঠীরা আরো জানান, এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে সঞ্জয় কুমার ওই ছাত্রীকে তার রুমে ডেকে বিভিন্ন হুমকি দেন। এছাড়া ওইদিনের পর থেকে সঞ্জয় কুমার ওই ছাত্রীটিকে চোখে চোখে রাখেন। ২য় সেমিস্টারে সঞ্জয়ের পড়ানো ১২৩ নং ও ১২৫ নং কোর্সে ওই ছাত্রী অকৃতকার্য করানো হয় বলে অভিযোগ। পরে পুণরায় পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেন তিনি।

গত ১ জুলাই ৩য় সেমিস্টারের মৌখিক পরীক্ষাতে এক্সর্টানাল প্রশ্ন করলে ওই ছাত্রী সঠিক ভাবে উত্তর দিতে না পারায় সঞ্জয় তাকে অপমান করেন। পরে বিভিন্ন প্রশ্ন করে হেনেস্থা করেন। গত ৩ জুলাই পরীক্ষার বিষয়ে সঞ্জয়ের কাছে গেলে ওই ছাত্রীকে তিনি পুরনরায় হেনস্থা ও হুমকি দেন বলে জানিয়েছে তার সহপাঠীরা। এরপর থেকে ওই ছাত্রী মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। সবার সাথে অসংলগ্ন আচরণ করছেন। আর সঞ্জয়ের নাম উল্লেখ করে, ‘সে আমাকে হত্যা করবে, আমার পরিবারকে হত্যা করবে’ বলে বিলাপ করছে।

ওই ছাত্রীর বিলাপ আর আহাজারিতে হলের ছাত্রীদের থেকে ঘটনাটি ধীরে ধীরে পুরো ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে এর সমাধানের জন্য দফায় দফায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান, হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. অশোক কুমার চক্রবর্তীসহ সকল আবাসিক শিক্ষক ওই ছাত্রীর সাথে কথা বলে তাকে শান্ত করার চেষ্টা করেন বলেও জানা গেছে। গভীর রাত পর্যন্ত এসকল কর্তা ব্যাক্তিদেও ওই হলে অবস্থান করতে দেখা গেছে। এদিকে খবর পেয়ে মেয়ের ভাই তারেক ঢাকা থেকে ওই রাতেই ক্যাম্পাসে এসেছেন বলে জানা গেছে।

এবিষয়ে ওই ছাত্রীর ভাই তারেক জানান, ‘আমার বোন কুমিল্লা বোর্ডের স্টার্ন্ডধারী ছাত্রী। সে বড় ধরনের কোন কারণ ছাড়া মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ার কথা না।’

ওই ছাত্রীর বড় বোন জানান, ‘সে ডিসেম্বরে বাড়িতে এসে তাকে জানায় বিভাগের শিক্ষক সঞ্জয় মেয়েদের দিকে কেমন কু-নজরে তাকায়। আমার বোনকে হয়রানিকারী ওই শিক্ষকের বিচার চাই। যে আর কোন ছাত্রী হেনেস্থার শিকার না হয়।’

এবিষয়ে হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. অশোক কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘ওই ছাত্রীকে তার ভাইয়ের মাধ্যমে বাড়িতে পাঠানো হয়েছে।’

এর আগে কুষ্টিয়া শহরের স্থানীয় এক মেয়েকে উত্যক্ত করার দায়ে চলতি বছর সঞ্চয়ের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেতাদের কাছে অভিযোগ করেন ওই মেয়ের অভিভাবকরা। পরে শিক্ষক নেতারা কুষ্টিয়াতে ঘটনাটির একটি সুরাহা করেন বলে খবর পাওয়া যায়।

একইভাবে ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন এক ভর্তি পরীক্ষার্থীকে যৌন হয়রানি করার অভিযোগ ওঠে ওই সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে। কিন্তু তখনো কৌশলে পার পেয়ে যান তিনি।

এবিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক সঞ্জয় কুমার সরকার জানান, ‘কোর্স দুটিতে ওই ছাত্রীসহ কয়েকজন ফেল করেছে। আর মৌখিক পরীক্ষায় আমি একটু বেশি প্রশ্ন করেছিলাম।’ তবে হুমকির বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন উর রশিদ আসাকরী বলেন, ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস নারীদের অভয়ারণ্য। এখানে যেকোন যৌন নিপিড়ন, নির্যাতন, হেনেস্থার বিরুদ্ধে জিরো টল্যারেন্স জারি আছে। তবে এ রকম কোন বিষয়ে অভিযোগ আসলে তদন্তের মাধ্যমে দোষী প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে এবং সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করা হবে।’

উল্লেখ্য, এর আগেও ছাত্রীকে যৌন হয়রানির দায়ে এই বিভাগের আসাদুজ্জামান নামের এক শিক্ষক স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত হয়েছেন। এছাড়া রুহুল আমীন নামের অন্য আরেক শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্যে জড়িত থাকার দায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাস্তি ভোগ করছেন। একই সাথে তার বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগে জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। আব্দুল হালিম নামের আরেক শিক্ষকের বাসভবনের আলমারি থেকেও এক ছাত্রীকে উলঙ্গাবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয়রা উত্তম মাধ্যম দিয়ে বিষয়টির সমাধান করেন। তবে আব্দুল হালিম ও রুহুল আমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রক্টরের আস্থাভাজন হওয়ায় তারা কৌশলে ছাড় পেয়ে যান। এছাড়া বর্তমানে অভিযুক্ত সঞ্জয়ও প্রক্টরের অনুগত শিক্ষক হওয়ায় তিনিও পার পেয়ে যেতে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন প্রতগতিশীল শিক্ষক নেতারা।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত