ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

আমার ভক্তদের অটোগ্রাফ দিতেন আম্মু: মীম

  ইমরুল নূর

প্রকাশ : ২৫ জুন ২০২০, ১৮:১৬

আমার ভক্তদের অটোগ্রাফ দিতেন আম্মু: মীম
সাবরীন শাকা মীম

নব্বই দশকের নন্দিত অভিনেত্রী সাবরীন শাকা মীম। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে কাজ করেছেন অসংখ্য নাটকে। এখনও পর্দায় নিয়মিত কিন্তু অভিনয়ে বিরতি টেনেছেন অনেক আগেই। বর্তমানে ‘অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ’ নামক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে একজন এনজিও কর্মী হিসেবে নিয়োজিত রয়েছেন। তার পাশাপাশি একটি বেসরকারি চ্যানেলে নিউজ প্রেজেন্টার হিসেবে সংবাদ উপস্থাপনা করে যাচ্ছেন।

আজ বৃহস্পতিবার জনপ্রিয় এই অভিনেত্রীর জন্মদিন। দিনের প্রথম প্রহরের শুরু থেকেই সহকর্মী ও ভক্ত অনুরাগীদের শুভেচ্ছা ও ভালোবাসায় সিক্ত হচ্ছেন তিনি। তবে জন্মদিন নিয়ে বিশেষ কোন আয়োজন নেই বলেই জানান তিনি।

বৃহস্পতিবার দুপুরে বাংলাদেশ জার্নালকে মীম জানান, আসলে তেমন কোন পরিকল্পনা নেই। বাসায় থেকে সবার শুভেচ্ছা ও ভালবাসা পাচ্ছি। সেই মধ্যরাত থেকে আমার পরিবার আমাকে নানানভাবে সারপ্রাইজ দিয়েই যাচ্ছেন। আমার ছোটবোন আমাকে সারপ্রাইজ হিসেবে আমাকে একটা চমক দিয়েছে। আমার নাটক,বিজ্ঞাপনের কিছু ফুটেজ সংগ্রহ করে এবং তার সাথে আমার বন্ধুদের শুভেচ্ছা বার্তা নিয়ে একটি ভিডিও বানিয়ে দিয়েছে আমাকে। আর নিজে কেক বানিয়েছে আমার জন্য। আমি সত্যি এমন ভালোবাসায় অভিভূত। শুধু তাই নয়, সকাল থেকে আমার বাসায় সব আমার পছন্দের খাবার রান্না করা হচ্ছে। পরিবারের সাথে বেশ আনন্দেই কেটে যাচ্ছে দিনটা।

জন্মদিনের মজার স্মৃতি জানিয়ে এই অভিনেত্রী বলেন, জন্মদিনে আমার অনেক অনেক স্মৃতি রয়েছে। আমার এক বছর বয়স থেকে সপ্তম শ্রেণীতে পড়াকালীন বয়স পর্যন্ত আমার ছোটবেলার জন্মদিনগুলো সবসময় আমার পরিবার ভিডিও করে রাখতো। প্রত্যেকবারই আমার পরিবার চাইতো আমাকে নতুন নতুন কিছু দিয়ে সারপ্রাইজ করতে। প্রতিবার রাত ১২টার সময় কেক কাঁটা তো থাকতোই। আর মেহমানদেরকে বাসায় দাওয়াত করা হতো আর আম্মু আমার সব পছন্দের খাবার রান্না করতো। আরেকটা বিষয় সবসময় করা হয়। প্রতি জন্মদিনে কোরআন খতম দেওয়া হয় আর গাছ লাগানো হয়। এগুলো খুব কমন থাকতো প্রতিবার।

একটা জন্মদিনের কথা বিশেষভাবে শেয়ার করতে চাই। সেটা হলো, তখন বিটিভির যুগ; এখনকার মতো এত ডিজিটালাইজড ছিলো না। তখন জন্মদিনে বিভিন্ন টিভি চ্যানেল, পত্রিকা ও দেশ-বিদেশ থেকে বিভিন্ন উপহার পাঠানো হতো বাসায়। আরেকবার খুব সারপ্রাইজড হয়েছিলাম। এটা সম্ভবত ২০০৫ কিংবা ২০০৬ হবে। তখন একসাথে ৮টা কেক কেটেছিলাম যেগুলো আমার ভক্তরা পাঠিয়েছিলো। সবাই কেক কিনে কুরিয়ারে বাসার ঠিকানায় পাঠিয়ে দিয়েছিলো। সেই সময়গুলো খুব মজার ছিলো। আমার জন্মদিনে প্রতিবারই চমকিত হয়েছি। সবই দর্শকদের ভালোবাসা ও দোয়ায়। আরও অনেক মজার মজার স্মৃতি রয়েছে আমার যেগুলো আমাকে এখনও পুলকিত করে।

১৯৯১ সালে বিটিভিতে গান দিয়েই শোবিজে যাত্রা শুরু সাবরীনা শাকা মীমের। এরপর ১৯৯২ সালে অভিনয়ে যোগ দেন শিশুশিল্পী হিসেবে। টানা কাজ করেন ২০১১ সাল পর্যন্ত। নাটক,বিজ্ঞাপনের প্রিয়মুখ ছিলেন। কাজ করেছেন প্রায় দুইশত'রও বেশি নাটক এবং একাধিক বিজ্ঞাপনে। এগারো সালের পরে খুব একটা অভিনয়ে দেখা যায়নি তাকে। মাঝে কিছুদিন একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে উপস্থাপনা করেছেন।

পর্দার সামনে থাকলেও অভিনয়ে অনিয়মিত কেন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, অভিনয় থেকে যখন সরে আসি তখন কিছু ব্যক্তিগত কারণ ছিল। আমি যেভাবে বা যে ধরণের কাজ করতে চাচ্ছিলাম সেগুলো মনের মতো করে পাচ্ছিলাম না আর তখন। তাই সরে এসেছিলাম। এর বাইরে কিছু অভিমানও ছিলো। অভিমানের কারণটা বলতে, যখন আমার কাছে মনে হয়েছে যে আমি আমার মত করে সিচুয়েশন পাচ্ছি না কাজ করার; তখন আর নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছি। আরেকটা কারণ ছিল, আমার তখন পড়াশোনার চাপটাও একটু বেশি ছিল। তখন আমার ভার্সিটিতে অনুপস্থিত থাকলে সমস্যা হয়ে যেতো। অনুপস্থিত থাকলে আমার সিজিপিএ কমে যাবে। দুইটা একসঙ্গে মিলাতেও পারছিলাম না। সবকিছু মিলিয়ে আসলে পারছিলাম না; যার কারণে সরে এসেছি।

একবার একটা জায়গা থেকে সরে আসলে সেখানে আবার যাওয়াটা কেমন জানি মনে হয় আমার কাছে। এখন কেউ যদি আমাকে বলে অভিনয় করার জন্য, আমার মনে হয় যে আমি অভিনয়ই ভুলে গেছি। এত বছর ধরে অভিনয় করছি না। এখন যখন কেউ প্রস্তাব দেয় আমি কনফিউশনে পড়ে যাই। তবে চাইলে হয়তো কিছু কাজ করতে পারি।

ছোটবেলা থেকেই গানের সঙ্গে জড়িত। অভিনয়ে খুব বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ার কারণে গানে তেমন মনযোগ দিতে পারেন নি। অভিনয় নিয়েই সময়টা কেটে যায়। ১৯৯৪ সালে বিটিভিতে ‘আত্মজা’ নামে একটা নাটক প্রচারিত হয়েছিল যেটি লিখেছিলেন অভিনেতা খায়রুল আলম সবুজ। শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় করা মীমের এ নাটকটি তখন বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। নাটকটি নির্মিত হয়েছিল সেই শিশুটিকে কেন্দ্র করেই। সেসময়ের মজার স্মৃতি শেয়ার করে এই অভিনেত্রী বলেন, এই নাটকটি তখন বিটিভিতে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। নাটকটি যেদিন প্রচার হয়েছিল তার পরেরদিন আমি শিশু পার্কে ঘুরতে গিয়েছিলাম পরিবারের সঙ্গে। আমি তখন চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ি। অনেক কিছুই বুঝতাম না। তখন দেখলাম সেখানে ঘুরতে আসা সবাই মাকে ঘিরে ধরেছিলো। বাচ্চাদের সাথে আসা অভিভাবকরা আমার সাথে ছবি তুলতে, অটোগ্রাফ নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তখন এত এত ক্যামেরা ছিল না এখনকার মত। আমি কিছুই বুঝতাম না তখন। অটোগ্রাফ চাইলে সেসময় আমার আমার আম্মু লিখে দিতেন।

দীর্ঘ ১৯ বছরের অভিনয়ের ক্যারিয়ারে আপনাকে সিনেমায় দেখা যায়নি কেন, এমন প্রশ্নে মীম বলেন, আমি যখন অভিনয় করতাম সেসময় সিনেমায় কাজ করার মত অবস্থা ছিলো না। সেসময় যে ধরনের সিনেমা হতো সেগুলোতে আমার পরিবার কখনওই সাপোর্ট করতো না। সিনেমার নানা ব্যারিকেড তো ছিলোই সাথে অশ্লীলতার একটা যুগ চলছিলো তখন। ওই অবস্থাতে সিনেমা করার ইচ্ছা জাগেনি কখনও। তবে এখন অনেক ভালো ভালো সিনেমা হচ্ছে। সিনেমা করার ইচ্ছা আর হয়নি পরে। তবে এখন সুন্দর সুন্দর সিনেমা দেখে ইচ্ছে করে কাজ করতে। তবে সেক্ষেত্রে গল্প ও পছন্দের চরিত্র হলে হয়তো বা করতেও পারি। যে চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ থাকবে।

অভিনয়ের জন্য গানে সময় দিতে না পারলেও এবার গান নিয়ে নতুন করে পরিকল্পনা করছেন নতুন কুঁড়ির এই অভিনয়শিল্পী। খুব শিগগিরই গান নিয়ে হাজির হবে বলে জানিয়েছেন মীম।

আইএন

  • সর্বশেষ
  • পঠিত