ঢাকা, রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

মানবতা বিরোধী অপরাধ করছে মিয়ানমার: অ্যামনেস্টি

মানবতা বিরোধী অপরাধ করছে মিয়ানমার: অ্যামনেস্টি

রাখাইন রাজ্যের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করতে তাদের ওপর মিয়ানমার যে মানবতা বিরোধী অপরাধ করেছে তার জোরালো প্রমাণ রয়েছে । আজ এই অভিযোগ করেছে আন্তর্জার্তিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

বুধবার এই সঙ্কটের ওপর অ্যামনেস্টি একটি নতুন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর গণহত্যা, ধর্ষণ, নিপীড়ণ ও জোরপূর্বক দেশছাড়া করার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। একই সঙ্গে এ জাতীয় নিপীড়ণ বন্ধ করতে মিয়ানমারের ওপর অস্ত্র অবরোধ এবং দেশটির উধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ, স্যাটেলাইট ছবি, ফটো, ভিডিও এবং অন্যান্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে অ্যামনেস্টি বলছে, ‘এতে উপসংহারে পৌঁছানো যায় যে হাজার হাজার হাজার রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ এবং শিশু একটি ব্যাপক ও পরিকল্পিত আক্রমণের শিকার হয়েছেন, যা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের সমান।’

বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ১২০ জন রোহিঙ্গা নারী এবং পুরুষের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে বলে অ্যামনেস্টি বলছে।

তবে মানবতার বিরুদ্ধে এসব কথিত অভিযোগের ব্যাপারে মিয়ানমার সরকারের বক্তব্য তাৎক্ষণিকভাবে জানা সম্ভব হয়নি।

এক বিবৃতিতে অ্যামনেস্টি বলছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের রোম চুক্তিতে ১১ ধরনের অপরাধকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

রাখাইন রাজ্যের সহিংসতায় এধরনের ছয়টি অপরাধ চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে: খুন, বলপূর্বক নির্বাসন, নির্যাতন, ধর্ষণ, নিপীড়ন এবং অন্যান্য অমানবিক কর্মকাণ্ড। সবচেয়ে নৃশংস অপরাধের প্রত্যক্ষদর্শীরা এসব তৎপরতার জন্য মিয়ানমার সেনাবাহিনীর পশ্চিমাঞ্চলীয় কমান্ড, ৩৩ লাইট ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশন এবং সীমান্তরক্ষা বাহিনীকে দায়ী করেছে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের একজন পরিচালক টিরানা হাসান বলছেন, ‘এই নৃশংস অপরাধের বিরুদ্ধে ন্যায়বিচার পাওয়ার পথে প্রথম ধাপ হচ্ছে এসব অপরাধের কথা ফাঁস করে দেয়া। যারা এসব অপরাধ করেছে তাদের অবশ্যই বিচার করতে হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আরেকটি ভুয়া অভ্যন্তরীণ তদন্তের নামে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী এসব ঘটনাকে কোনমতেই ধামাচাপা দিতে পারে না’।

অ্যামনেস্টির মিয়ানমার বিষয়ক গবেষক লরা হেই বলেন, সংখ্যালঘু কচিন, শান ও পালাউং জনগোষ্ঠীর ওপরও একই ধরনের মানবতা বিরোধী অপরাধ করেছিলো মিয়ানমার। তিনি আল জাজিরাকে বলেন,‘মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী পুরোপুরি জবাদিহিতার বাইরে থাকে। তাদের ওপর সরকারের তেমন কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। যে কারণে তারা অপরাধ করেও পার পেয়ে যায়, প্রায়ই দোষী সাব্যস্ত হয় না। ফলে আবার একই অপরাধ করে। কিন্তু এবার তাদের থামতে হবে।’

গত ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি সেনা পোস্টের ওপর হামলঅর জের ধরে রোহিঙ্গাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে মিয়ানমার বাহিনী। তাদের হামলা থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে ৫ লাখ ৮২ হাজার রোহিঙ্গা। এখনও বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের ঢল অব্যাহত রয়েছে।

অ্যামনেস্টির নতুন রিপোর্টের পাতার পর পাতা জুড়ে রয়েছে রোহিঙ্গা নিপীড়ণের লোমহর্ষক বর্ণনা, যাকে মানবতা বিরোধী অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করেছে অ্যামনেস্টি।

অ্যামনেস্টির রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত ২৫ আগস্ট সশস্ত্র গোষ্ঠী আরসা’র (আরাকান রোহিঙ্গা সেলভেশন আর্মি) হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কমপক্ষে কয়েক শ রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশুকে হত্যা করেছে মিয়ানমার সেনারা। পলায়নরত লোকজনও তাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। গুলি করে হত্যা করা হয়েছে তাদের। অক্ষম ও বয়স্ক যাদের পালিয়ে আসার শক্তি ছিলো না তাদের ঘরবাড়িতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। এইসব হত্যাযজ্ঞ জাতিগত নিধনের প্রমাণ বহন করে বলে উল্লেখ করেছে অ্যামনেস্টি।

সূত্র: আল জাজিরা

এমএ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত