খাশোগি হত্যা: যেভাবে ভোল পাল্টাচ্ছে সৌদি
সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগির নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে গত কয়েক দিনে এ ঘটনার অনেক তথ্যই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তুরস্কের কর্তৃপক্ষ এ ঘটনার অডিও ও ভিডিও হাতে পাবার কথাও বলেছে - যদিও তা এখনো বের হয়নি। এ নিয়ে সৌদি আরবের ভূমিকা ছিল সবচাইতে রহস্যজনক।
তারা প্রথমদিকে খাশোগি নিখোঁজের দায় এড়িয়ে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু পরে তুর্কি কর্মকর্তাদের তদন্তে ওই সাংবাদিককে হত্যার বিষয়টি সামনে আসার পর একটু একটু করে ঘটনার অনেক কিছুই স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে রিয়াদ।
এখানে দেখা যাক কিভাবে সৌদি আরব একেক দিন একেক রকম বিবরণ দিয়েছে।
২ অক্টোবর: খাশোগি কনস্যুলেটে নেই
গত ২ অক্টোবর আগের স্ত্রীর সাথে বিবাহবিচ্ছেদের কাগজপত্র নিতে ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে যান খাশোগি। এরপর আর তাকে দেখা যায়নি।
পর দিন এক সৌদি কর্মকর্তা বলেন, খাশোগি কনস্যুলেট থেকে কাগজপত্র নিয়ে একটু পরই বেরিয়ে গেছেন। তিনি কনস্যুলেটে নেই, বা সৌদি হেফাজতেও নেই।
এর কিছু পরে কনস্যুলেট থেকে একটা বিবৃতি দিয়ে বলা হয়, খাশোগি ‘কি পরিস্থিতিতে’ নিখোঁজ হলেন তা বের করতে তারা তুর্কি কর্তৃপক্ষের সাথে কাজ করছেন।
৮ অক্টোবর: মৃত্যুর খবর 'মিথ্যা ও ভিত্তিহীন'
সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ভাই এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সৌদি রাষ্ট্রদূত প্রিন্স খালিদ বিন সালমান একটি চিঠি প্রকাশ করেন। তাতে বলা হয়, খাশোগির মৃত্যুর খবর ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন’।
তিনি লেখেন, 'যখন কনস্যুলেট খোলা, বহু কর্মচারী ও দর্শনার্থী রয়েছে, তার মধ্যে এই খুনের অভিযোগ হচ্ছে যা অস্বাভাবিক। আমি জানি না কারা এসব দাবির পিছনে, তাদের কি উদ্দেশ্য, জানতে চাইও না।'
১৫ অক্টোবর: দুর্বৃত্ত ঘাতকের সম্ভাবনা
সৌদি বাদশা সালমান এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পএর মধ্যে এক ফোনালাপের পর ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, খাশোগির অন্তর্ধানের ব্যাপার কিছু জানেন না সৌদি বাদশাহ এবং তার অস্বীকৃতি ছিল 'খুব, খুব জোরালো'।
তিনি আরো বলেন কোনো ‘রাফ কিলার’ তাকে খুন করেছে।
২০ অক্টোবর: 'ঝগড়া এবং ঘুষোঘুষি'
এদিন সৌদি সরকার একটি প্রেস রিলিজ দেয়। এতে বলা হয়, সৌদি কর্তৃপক্ষের প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, খাশোগি এবং তার সাথে দেখা করা লোকদের মধ্যে ঝগড়া এবং ঘুষোঘুষির ঘটনা ঘটে। এর পরিণতিতে তার মুত্যু হয় বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
এর পর একই দিনে আরেকটি সরকারি বিবৃতি দেয়া হয়, এবং তাতে বলা হয় যে খাশোগি এবং কনস্যুলেটে তার সাথে থাকা আরো কয়েক জনের মধ্যে ঝগড়া এবং মারামারির ফলে তিনি মারা যান।
২১ অক্টোবর: খুন করা ছিল একটি মারাত্মক ভুল
সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল-জুবের মার্কিন টিভি ফক্স নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রথমবারের মতো সাংবাদিক খাশোগজির মৃত্যুকে 'খুন' বা 'মার্ডার' হিসেবে উল্লেখ করেন।
তবে তিনি বলেন, যুবরাজ মোহাম্মেদ বিন সালমান সেই হত্যাকাণ্ডের নির্দেশ দেননি।
তার কথায়, নিরাপত্তা বাহিনীর কিছু 'দুর্বৃত্ত' এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। তিনি বলেন তারা তাদের কর্তৃত্বের আওতার বাইরে গিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে - যার কথা গোয়েন্দা বাহিনীর উর্ধতন নেতারাও জানতেন না।
তিনি বলেন, ‘এটা একটা চরম ভুল হয়েছে, এবং সেটা চাপা দেবার চেষ্টা ছিল আরো গুরুতর। আমরা সত্য উদঘাটন করে এর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি দিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।’
সূত্র: বিবিসি বাংলা
এমএ/