ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

বাবাকে কেন পুলিশে দিলো ৭ বছরের মেয়ে?

বাবাকে কেন পুলিশে দিলো ৭ বছরের মেয়ে?
সাত বছরের হানিফা

ভারতে নিজের বাবাকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিয়েছে তারই কন্যা। সাত বছর বয়সের এই শিশু বাবাকে কেন পুলিশে দিয়েছে জানলে অবাক হয়ে যাবেন। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক আসল ঘটনা।

তামিলনাডু রাজ্যের আম্বুর নামের একটি শহরে বাবা-মায়ের সঙ্গে বসবাস করে হানিফা। তাদের বাড়িতে কোনো টয়লেট বা শৌচাগার নেই। বাড়িতে টয়লেট বানিয়ে দেবেন বলে কথা দিয়েছিলেন তার বাবা। কিন্তু তিনি সে কথা না রাখায় বাবার বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে চিঠি লিখে অভিযোগ করে সাত বছরের হানিফা জারা। পরে পুলিশ তাকে থানায় ডেকে নেয়।

হানিফা নার্সারিতে পড়তেই বাবার কাছে বাড়িতে টয়লেট বানিয়ে দেয়ার আবদার করেছিল। তার বাবা তাকে এই বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, হানিফা যদি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করে তবে তিনি তার আবদার পূরণ করবেন।

নার্সারি থেকে ভালো ফলাফল করে উপরের ক্লাসে উঠেছে হানিফা। সে ছিল তার ক্লাসে সবচেয়ে ভালো ফল করা শিক্ষার্থীদের একজন। কিন্তু তার বাবা নিজের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি।

হানিফা পুলিশকে লেখা চিঠিতে জানায়, ‘আমি পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছি। কিন্তু বাবা শুধু বলেই যাচ্ছেন যে, তিনি টয়লেট বানাবেন। এটা একরকম প্রতারণা, সুতরাং তাকে গ্রেপ্তার করুন।’

হানিফার আরো অনুরোধ, যদি তার বাবাকে গ্রেপ্তার করা না হয়, তাহলে পুলিশ যেন অন্তত তার কাছ থেকে দিনক্ষণ লেখা মুচলেকা নিয়ে রাখে যে, কবে তিনি বাড়িতে শৌচাগার বানিয়ে দেবেন।

হানিফার বাবা এহসানুল্লাহ বিবিসি তামিলকে বলেছেন, তিনি আসলে শৌচাগারটি বানানোর কাজ শুরু করেছেন। কিন্তু পর্যাপ্ত অর্থের অভাবে সেটির কাজ শেষ করতে পারেননি। কারণ এখন তিনি কর্মহীন। তার ভাষায়, ‘এজন্য আমি হানিফাকে আরো কিছুদিন সময় দিতে বলেছিলাম। কিন্তু কথা রাখতে না পারায় সে আমার সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে।’

অন্যদিকে হানিফার অভিযোগ হচ্ছে, ‘একই বিষয় নিয়ে তাকে আমার কতদিন বলতে হবে? তিনি আমাকে একই অজুহাত দিয়ে যাচ্ছেন যে যথেষ্ট টাকা নেই। সেজন্য আমি পুলিশের কাছে গেছি।’

পুলিশের কাছে লেখা হানিফার চিঠি

গত সোমবার (১০ ডিসেম্বর) মায়ের সঙ্গে সে তার স্কুলের কাছের পুলিশ স্টেশনে গিয়ে হাজির হয়। এরপর সে থানাযর টেবিলে ব্যাগ ভর্তি করে ট্রফি আর মেধার অনেক সার্টিফিকেট সাজিয়ে রাখে। এরপর পুলিশকে জিজ্ঞেস করে, ‘এগুলোর বিনিময়ে তোমরা কি আমাকে একটি টয়লেট দিতে পারবে?’

তখন পুলিশ এহসানুল্লাহকে ডেকে পাঠালে তিনি দ্রুত পুলিশ স্টেশনে হাজির হন। তিনি ভেবেছিলেন যে, তার স্ত্রী আর মেয়ে কোনো বিপদে পড়েছে। কিন্তু থানায় গিয়ে আসল কারণ জানার পর তিনি হতবাক হয়ে যান।

হানিফার লেখা চিঠির বিস্তারিত পড়ে এহসানুল্লাহ বলেন, কিভাবে আনুষ্ঠানিক চিঠি লিখতে হয়, সেটা তাকে পর্যবেক্ষণ করে করেই হয়তো হানিফা শিখেছে। কারণ গ্রামের মানুষজনকে মাঝে মাঝে অফিসের জন্য কাগজপত্র পূরণ করা বা চিঠি লেখার কাজে তিনি সহায়তা করে থাকেন। বাবার কাছ থেকে শেখা পদ্ধতি শেষে বাবার বিরুদ্ধেই প্রয়োগ করেছে মেয়ে।

আর হানিফার এই চেষ্টা পুলিশ কর্মকর্তাদের সহানুভূতি পেয়েছে। এ নিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা ভালারমাথি অভিমত হলো: তার অভিযোগটি খুব সৎ এবং সরল। তাই আমরা সমস্যাটি সমাধানের চেষ্টা করেছি।’

তার এই কর্মকাণ্ডে জেলা কর্মকর্তাদেরও টনক নড়েছে। এখন তারা হানিফা ও তার প্রতিবেশীদের জন্য পাঁচশোর বেশি শৌচাগার বানানোর জন্য অর্থসংগ্রহ শুরু করেছেন।

'সিটি কমিশনার এস পার্থসারথি বলেন, তার অভিযোগটি দেখে আমরা খুবই খুশি হয়েছি। আমরা স্কুলে এরকম ক্লাসের আয়োজন করছি,যাতে ছাত্রছাত্রীরা বাড়িতে শৌচাগার বসানোর জন্য তাদের বাবা-মায়ের কাছে দাবি তোলেন।

শুধু তাই নয়, ক্লিন ইন্ডিয়া ক্যাম্পেইনে স্থানীয় মুখ হিসাবে হানিফার ছবি অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা করছেন তামিলনাড়ু প্রশাসন।

ভারতের অনেকেই এখনো শৌচাগার সুবিধার বাইরে রয়েছে। ইউনিসেফের হিসাবে, ভারতের অন্তত পঞ্চাশ কোটি মানুষ ঘরের বাইরে মাঠেঘাটে বা খোলা স্থানে মলমূত্র ত্যাগ করে থাকে। ২০১৯ সালের মধ্যে ভারতের প্রতিটি বাড়িতে শৌচাগার স্থাপনের পরিকল্পনা করছে দেশটির সরকার। অনেক স্থানে সেই পরিকল্পনা বাধার মুখে পড়েছে।

সাম্প্রতিক একটি জরিপে জানা যাচ্ছে, প্রত্যন্ত এলাকায় বসবাসকারী ৮৯ শতাংশ ভারতীয় খোলা স্থানে মল মূত্র ত্যাগ করতে পছন্দ করে, কারণ তারা চায় না তাদের বাড়ির কাছাকাছি স্থানে শৌচাগার থাকুক।

এদিকে চিঠির তাৎক্ষণিক ফলাফল দেখে খুবই আনন্দিত হানিফা। বাবার সঙ্গেও তার মিটমাট হয়ে গেছে। টয়লেট বানানো নিয়ে গত দশদিন ধরে সে তার বাবার সঙ্গে কথা বলা বন্ধ রেখেছিল। এখন বাবা-মেয়ের মধ্যে ফের সন্ধি স্থাপিত হয়েছে। খুব শিগগিরই নিজের বাড়িতে টয়লেট পেতে যাচ্ছে হনুফা।

পুলিশ স্টেশনে বাবা-মায়ের সঙ্গে হানিফা

সূত্র: বিবিসি বাংলা

এমএ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত