ঢাকা, রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : কিছুক্ষণ আগে
শিরোনাম

অপরূপা মেঘালয়ের দর্শনীয় যত স্থান

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ৩০ জুন ২০১৮, ১৬:৩২  
আপডেট :
 ৩০ জুন ২০১৮, ১৬:৫৫

অপরূপা মেঘালয়ের দর্শনীয় যত স্থান

ভারতের উত্তর-পূর্ব দিকের সবচেয়ে সুন্দর রাজ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো জল পাহাড়ের মেঘালয়। মেঘালয় নামের মাঝেই লুকিয়ে আছে এর মাহাত্ম্য। মেঘের আলয়, মানে মেঘের বসত যেখানটায়। পাহাড়ের কোলে মেঘের নিত্যখেলা আর জলপ্রপাতের গর্জনের সাথে অপরূপা মেঘালয় ঘুরতে হবে সৌন্দর্য পিপাসু মন নিয়ে। আর মেঘালয় এমনই এক জায়গা যা আপনার পিপাসাকে বৃথা যেতে দেবে না, আকণ্ঠ ভরে পান করতে পারবেন সেখাকার সৌন্দর্যের অমৃত।

বাংলাদেশ থেকে খুব সহজেই মেঘালয় যাওয়া যায়, সেজন্য ভারতীয় ট্যুরিস্ট ভিসাতে এন্ট্রি পোর্ট হিসেবে থাকতে হবে “ডাউকি” বর্ডার। ডাউকি বর্ডার থেকে মাত্র ৮৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মেঘালয়ের বিখ্যাত শহর শিলং। শিলং থেকে মূলত শুরু করতে হবে মেঘালয়ের যাত্রা। চলুন তাহলে দেখে আসা যাক কোথায় কোথায় ঘুরবেন মেঘালয় গিয়ে।

মাওলিনং গ্রাম, শিলং মেঘালয়ের আকর্ষণ শিলং আর শিলং এর আকর্ষণ মাওলিনং গ্রাম। শিলং মূল শহর থেকে ৯০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত, পরপর কয়েকবার এশিয়ার সবচেয়ে পরিষ্কার গ্রাম হিসেবে খ্যাতি পাওয়া এই গ্রামের একটি রাস্তাতেও আপনি খুঁজে পাবেন না ময়লা বা আবর্জনা জাতীয় কিছু। মাওলিনং গ্রাম নিজেই একটা ঘুরতে যাওয়ার স্থান।

মাওলিনং গ্রাম

এখানকার ঐতিহ্যবাহী বাড়িঘর আর পাহাড়ের কোলে লুকিয়ে আছে অফুরন্ত সৌন্দর্য। এখানকার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ মাওলিনং ঝর্ণা। বিশাল এই ঝর্ণার সামনে সময় থমকে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু না। মাওলিনং ঝর্ণায় যাওয়ার সবচেয়ে ভালো সময় হলো জুন থেকে সেপ্টেম্বর। ঝর্ণার আশেপাশে হরেক রঙের অর্কিড আর নানা লতাপাতার সমাহার একজন ট্রাভেলার এবং ফটোগ্রাফারকে দেবে পূর্ণ তৃপ্তি। মাওলিনং ঝর্ণার পাশাপাশি এই গ্রামে আছে ৮৫ মিটার উঁচু হাই-স্কাই ওয়াচ যেখান থেকে বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলের পুরো সমতল দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও আছে জীবন্ত শেকড়ের ব্রীজ যা এখানকার ভ্রমণাকর্ষণগুলোর মধ্যে অন্যতম।

লাই লাতলুম গিরিখাত, শিলং প্রায় সবক্ষেত্রে একটা তরুণ ভ্রমণ দলের মধ্যে একজন না একজনকে পাওয়াই যায় যিনি ট্রেক করতে ভালোবাসেন। মেঘালয়ে যদি ট্রেকের সন্ধান করে থাকেন তবে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে লাই লাতলুম গিরিখাত। চার থেকে পাঁচ ঘণ্টার এই ট্রেকে আপনি পৌঁছে যাবেন এমন এক স্বর্গীয় জায়গায় যেখান থেকে মেঘালয়ের পুরো দৃশ্যটা চোখের দৃষ্টিতে ধরা পড়বে।

লাই লাতলুম গিরিখাত

মাত্র চার-পাঁচ ঘণ্টার ট্রেক হলেও বেশ কষ্টসাধ্য এই গিরিখাত উতরানো, তাই সঠিক গাইডলাইন আর ট্রেকিংয়ের জন্য প্র‍য়োজনীয় সব জিনিসপত্র নিয়ে যেতে হবে সেখানে। একবার পৌঁছে গেলে চারদিকের অপরূপতা দেখে মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই। ফেরার সময় অবশ্যই গাইডকে বলে নেবেন লাওয়াই জলপ্রপাতে যাবার কথা, তাহলে পুরো ট্রেকের ক্লান্তি থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে এক নিমিষেই।

ডাবল ডেকার জীবন্ত শেকড়, চেরাপুঞ্জি ভারতের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয় মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে। দেখার মতো অনেক কিছুই আছে এখানে, তবে যে জায়গাটি কেড়ে নিয়েছে সবার নজর তা হলো ডাবল ডেকার লিভিং রুট বা জীবন্ত শেকড়। প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট বিশাল এই শেকড় কালের অন্তরে রূপ নিয়েছে প্রকাণ্ড সেতুতে, তাও আবার উপরে এবং নিচে মোট সেতু সংখ্যা দুটি।

ডাবল ডেকার জীবন্ত শেকড়

চোখের শান্তি পেতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখানে ছুটে আসে প্রচুর পর্যটক। তবে কথায় আছে, কোনো ভালো জিনিসই বিনা কষ্টে আসে না, এই জায়গাও তার ব্যতিক্রম নয়। এখানটায় আসতে হলে আপনাকে পার হতে হবে মাসে আচ্ছাদিত পিচ্ছিল ২,০০০ সিঁড়ি যা পার হতে ভালো ভালো ট্রেকারদেরও লাঠির প্রয়োজন হয়। ২,০০০ সিঁড়ি পার হওয়া যেমন চাট্টিখানি কথা নয় তেমনি দুর্বলচিত্তের মানুষদের এখানে আসাও উচিত নয়। তবে সাহস করে এই লম্বা বিপদজনক পথ পাড়ি দিয়ে ফেললে চোখের সামনে দেখা মিলবে বিখ্যাত সেই ডাবল ডেকার সেতুর যা দেখার লোভ মেঘালয়ে ঘুরতে আসা খুব কম লোকই সামলাতে পারে।

লালং পার্ক, জোয়াই মেঘালয়ের জোয়াই থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরের সবুজের রাজ্য এই লালং পার্ক। মেঘালয় ভ্রমণের দিনগুলোতে প্রায়ই এই জায়গাটি বাদ পড়ে যায় ঘুরতে যাওয়ার তালিকা থেকে। তবে আপনি যদি একটু বেশি দিনের জন্য মেঘালয় বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা করে থাকেন তবে একদম শেষ দিকে ঘুরে আসতে পারেন এই পার্ক থেকে।

লালং পার্ক

ক্লান্ত চোখকে প্রশান্তি দিতে এখানকার সবুজতার তুলনা হয় না। মেঘালয়ের প্রদেশ সরকার ইদানীং বেশ ভালোভাবেই এই পার্কের উন্নয়নের কাজ শুরু করেছে, চেষ্টা করছে পার্কটিকে আরো বেশি পরিবেশ বান্ধব বানানোর। অবসর কোনো দিনে এই পার্কে মাছ ধরা বা প্রশান্ত বাতাসের আনন্দ নিতে নিতে পার্কের রাস্তা ধরে হেটে যাওয়াই হতে পারে মেঘালয়ের এক দিনের পরিকল্পনা।

ডন বস্কো সেন্টার অফ ইনডিজেনাস কালচার, মাউলাই, শিলং আপনি যদি ইতিহাস অথবা নৃতত্বের ছাত্র হয়ে থাকেন অথবা এই বিষয়গুলোয় আপনার আগ্রহ থাকে তবে শিলং এর মাউলাইয়ে অবস্থিত ডন বস্কো সেন্টার অফ ইনডিজেনাস কালচার আপনার জন্য সর্বোত্তম জায়গা।

ডন বস্কো সেন্টার অফ ইনডিজেনাস কালচার​

ব্যক্তিগত অর্থায়নে পরিচালিত হলেও বেশ সমৃদ্ধ এর প্রতিটি বিভাগ। সবচেয়ে আকর্ষণীয় হলো এর লাইব্রেরী সেকশনটি। উত্তর-পূর্ব ভারত আর তার ইতিহাস, ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে হলে এখানে একদিন না একদিন আসতেই হবে। পুরো বিশ্ব থেকে গবেষণার কাজে প্রচুর পর্যটক ও গবেষণাবিদ আসেন এখানে। মেঘালয় আর মেঘালয়ের ছয়টি অঙ্গরাজ্যের পূর্ণ কথন ধ্বণিত এখানকার প্রতিটি করিডোরে।

উমিয়াম লেক, রি ভোই জেলা, নংপোহ মেঘালয়ের রি ভোই জেলার নংপোহতে অবস্থিত মেঘালয়ের অন্যতম ভ্রমণ আকর্ষণ উমিয়াম লেক। মূলত এখানকার দেয়া একটি বাঁধ থেকে এই হ্রদের সৃষ্টি। শিলংয়ের পানির মূল উৎস হলো এই উমিয়াম হ্রদ। আপনি যদি শীতকালে অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারিতে উমিয়াম হ্রদ দেখার পরিকল্পনা করেন তবে হ্রদের সৌন্দর্য দেখে বোকাও হয়েও যেতে পারেন।

উমিয়াম লেক

এই সময়টায় হ্রদের সৌন্দর্য থাকে তুঙ্গে, কানায় কানায় থাকে ভরপুর পানি দিয়ে। আর গরমের সময় মে থেকে জুলাইতে যদি আবার এই হ্রদ দেখতে আসেন তবে বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে এটাই সেই হ্রদ যা আপনি শীতকালে দেখে গিয়েছিলেন, পানি শুকিয়ে তখন নিচের চরের দেখা মেলে পরিপূর্ণভাবে। সেটিও একরকমের সৌন্দর্য। এমনিতে হ্রদের সৌন্দর্য উপভোগ করার বিভিন্ন ব্যবস্থা করে রাখা আছে সেখানে, তবে সবকিছুর খুব বেশি দাম। তবে সাধ্যের মধ্যে সবটুকু সুখ পেতে চাইলে নৌকা ভ্রমণ করতে পারেন এই হ্রদে।

দ্য এলিফেন্ট ফলস, শিলং শিলং মেঘালয়ের জাদুর শহর। প্রচুর ভ্রমণ আকর্ষণের মধ্যে এখানে লুকিয়ে আছে এলিফ্যান্ট ফলসের মতো আরো অনেক আকর্ষণ। শিলং ঘুরতে গেলে মানুষ যে জায়গাটায় প্রচুর যায় তা হলো এলিফ্যান্ট ফলস বা ঐরাবত জলপ্রপাত। এরূপ নামকরণে পেছনে কারণও আছে যথেষ্ট। এই জলপ্রপাতের কালো পাথরগুলো মিলিত হয়ে এক ঐরাবত আকৃতির সৃষ্টি করেছিল, সেই থেকে এর নাম দ্য এলিফ্যান্ট ফলস।

দ্য এলিফেন্ট ফলস

যদিও দূর্ভাগ্যবশত মেঘালয়ের এক ভূমিকম্পে সেই আকৃতি আর এখন নেই, তবুও এই জলপ্রপাতের সৌন্দর্য কমেনি এতটুকুও। তিন ধাপে গঠিত এই জলপ্রপাতের প্রতি ধাপেই খেলা করে অজস্র জলরাশি। বিকেল বেলায় এই জলপ্রপাতের সৌন্দর্য লিখে বোঝানো যাবে না, প্রতিনিয়ত কালো পাথরের গায়ে আছড়ে পড়া বিশাল সেই জলপ্রপাতের উপর গোধুলী বেলার সূর্যকিরণ যখন প্রতিফলিত হয়ে চোখে ধাঁধা লাগায় তখন এর আসল সৌন্দর্য বোঝা যায়। তবে সেটা আরো ভালো করে বুঝতে হলে যেতে হবে শিলংয়ে আর ঘুরে আসতে হবে ঐরাবত জলপ্রপাতটি।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত