ঢাকা, রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪০ মিনিট আগে
শিরোনাম

সমমনা

  রাজীব কুমার দাশ

প্রকাশ : ২১ জুলাই ২০২৩, ১৯:০৫

সমমনা
রাজীব কুমার দাশ। ফাইল ছবি

সমমনা পরিষদের ক্যাশিয়ার বর্গাচাষী কৃষক কামাল পুত্র মফিজ উদ্দীন বেকুবছড়ি থানার ওসি। তার কাছে সবকিছুই সমমনা। উপরের স্যার রাজনীতির বস কৌলীন্য সুশীল কুশীল সবইর সমমনা ক্যাশিয়ার হাতে সামলে চলেছেন সবকিছু।

চেয়ারে বসে প্রথমদিন টেবিল চাপড়িয়ে বলেছিল,' ওসি'র পোস্টিং নিতে দক্ষতা দুরদর্শিতা গুড সার্ভিস মার্ক, বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন, আইন জানা মানার দরকার নাই।' নেতা বস উপরের জনা চারেক ডাটফাট বাগাড়ম্বর অফিসার মান্থলি করা কিছু নীতিহীন সাংবাদিক যদি হাতে থাকে- এই থানার চার লাখ লোক

কেন, ত্রিশ কোটি একজোট হলেও আমার লোমাগ্র কেশাগ্র স্পর্শ করতে পারবে না।

যেমন ভাবা তেমন কাজ। বাদী বিবাদী দুই পক্ষের কাক পক্ষী টের পায় না ভেবে স্হানীয় চেয়ারম্যান মেম্বার থানার এসআই এএসআই মুন্সী হয়ে দালাল হাতে কখনো ম্যানেজ কখনও ব্যালেন্স করে জিডি মামলা শালিস বৈঠক সেরে নাকে সরষে তেল না মেখেই ঘুমিয়ে পড়েন। ঘুম ভাঙার পরে শুরু হয় তার আসল কাজ। নেতা পাতি নেতা সাংবাদিক এমপি সামলে সিক্রেট অ্যাপে কল করেন, ঊর্ধ্বতনদের। সালাম দেন। নেন নানান পরামর্শ। দেন প্রতিদিনের সামারি হিসাব। মাঝে মাঝে প্রতিবাদী সাংবাদিক, আনাড়ি অনলবর্ষী প্রতিবাদী উঠতি নেতা, নির্বোধ হিন্দু নেতা ও মন্দির পুরোহিতের কৌশলে কান ভারি করে ঝগড়া মারামারি বাঁধিয়ে দুপক্ষেরই সহজ-সরল বুকে ঘুস মিছরি ছুরি বিঁধিয়ে দিয়ে মজা নেন। চেঙিস বৃটিশ কৌশলে আখচোষা সর্বস্বান্ত মনে সবকিছু কেড়ে এক কাপড়ে ছেড়ে দেন।

ওসি, মফিজ উদ্দীন মাঝে মাঝে আক্ষেপ করে বলেন, 'টাকা কী আমি একা খাই? উপরে দিতে হয়। তাদেরওত আমার মতো ক্ষেত-খামার নাই। তাদেরও আমার মতোন লবিং-তদবির পরীক্ষা পাশ করে চেয়ারে বসতে হয়েছে। আমাদের বৃটিশ মন। আমার আশা ভরসা-নির্বোধ জনগণ। কেউ প্রতিবাদী হলেও আপত্তি নাই। মামলা হোক হামলা হোক; সের নিক্তি দরে বিক্রি করি। ব-দ্বীপের সবাইত সমানে খাচ্ছে দাচ্ছে নিচ্ছে। কোর্ট, পুলিশ, ভূমি, ব্যাংক কাস্টমস, আড়তদার, চিকিৎসা, সেবা, দুদক, মানবাধিকার, পিয়ন, সিপাই, সাংবাদিক, ওজনদার, ঝাড়ুদার, চেইনম্যান।

-আমি খাইলে দোষ কই?

বেদনানগর গ্রামের হোমিও চিকিৎসক নাড়ু গোপাল চক্রবর্তী সামাজিক অনুষ্ঠানে যজমান রাধারমণের স্ত্রী সন্তানের হাতে বেদম প্রহারে শয্যাশায়ী। তদবীরে মামলা হয়। চার্জশীটে বাদীর স্বত্ব নাই। নাড়ু গোপাল আইনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। যেখানে যায়, সেখানে বের করে দিতে চায়। টাকা দিয়ে সবখানেই কিনতে হয় সেবা অধিকার বিচার।

নাড়ু গোপাল চক্রবর্তী চেম্বারে বসে আছেন সন্ধ্যেকাল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই কনস্টেবল দারোগা দন্তহীন মানুষখেকো বাঘের মতো ঝাঁপিয়ে পড়েন। পিছমোরা বেঁধে ছবি উঠাতে ব্যবস্হা করে দেন। দারোগা ছমিউদ্দিন দয়া করে সিআর মামলার তিনশ তেইশ পাঁচশ ছয় পেনাল কোডের ধারা জানিয়ে দেন। পরিবারের কান্নাকাটিতে, 'আগামীকাল জামিন হবে সান্ত্বনার হাওয়া মিঠাই' খেতে দিয়ে সটকে পড়েন।

পুরোহিত নাড়ু চক্রবর্তীর জামিল হলো। খবর নিয়ে জানা গেছে, তদন্ত না করে আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশ রিপোর্ট গেছিল। আদালতের সমন পুরোহিতকে না জানিয়ে থানায় বসে জারি শেষে কোর্টে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল। বিজ্ঞ আদালত অনুপস্হিত অবাধ্য বিবাদীকে কোর্টে হাজির করাতে ওয়ারেন্ট পাঠিয়েছে। পুরোহিত মশাই ওসি'র সামনে দাঁড়িয়ে

: স্যার, আমি কিছু জানতে পারলাম না। - আপনি আসামি। আমার সামনে দাঁড়িয়ে এত স্পর্ধা! কোথায় পান?

: স্যার, আপনারা সরজমিনে তদন্ত না করে রিপোর্ট...? - আপনাকে অ্যারেস্ট করে প্যাদানি দেইনি বলে, আমার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন। যান। বেড়িয়ে যান। যান কোথায় যাবেন যান। পারলে আমার বিরুদ্ধে কিছু করে দেখান।

- সেন্ট্রি

: জ্বী স্যার।

- ওকে বের করে দাও।

: জ্বী স্যার, দিচ্ছি স্যার। স্যাঁতসেঁতে ঘাম-গরমে পুরোহিত নাড়ু চক্রবর্তী হাঁটছে। গায়ে শীতকাঁটা উঠেছে, মনে হয় জ্বর আসবে। থানার সামনে কৃষ্ণচূড়া ফুলগুলো ফিকে হয়ে আসছে। একটি দাঁড়কাক কা কা করে কৃষ্ণচূড়া গাছের উপর চক্কর দিচ্ছে। আচমকা বাতাসে ভেঙে পড়েছে কাকের সংসার। থানায় রাতে ক্ষতবিক্ষত লাশের সংবাদ এলো। স্হান বেদনানগর।

ফোনকলে ব্যতিব্যস্ত ওসি মফিজ উদ্দীন।

- স্যার কোনো সমস্যা নাই। মরা মানুষ নিয়ে গীবত বলতে নাই। তবুও বলি - 'ও একটা অসামাজিক মানুষ। কিছুটা পাগল। আপনার মনে নেই স্যার?' একবার আপনার অফিসেও গেছিল। বেশি কথা বলে। চিৎকার চেঁচামেচি করে। বেয়াদবি করে আপনাকে ভাই বলেছিল। সরজমিনে এসে তদন্ত করতেও বলেছিল। পুলিশ নিয়ে কটূক্তিও করেছিল।

: হ্যাঁ, এইবার মনে পড়েছে।

- স্যার, একদম টেনশন নাই। চেয়ারম্যান সাহেব আমার সামনে। ওর বিরুদ্ধে হিন্দু দলদাস নেতারাও মহাক্ষ্যাপা। লাশ মর্গে চলে গেছে। প্রেস রিলিজে বলেছি, বিচ্ছিন্ন ঘটনা। তদন্ত চলিতেছে।

বেকুবছড়ি থানার ওসি মফিজ উদ্দীন হাসতে হাসতে বলেন- বুঝলেন, চেয়ারম্যান সাহেব? আসলে মহামান্য হাইকোর্ট ছাড়া আমরা সবাই সমমনা।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও কবি, পুলিশ পরিদর্শক, বাংলাদেশ পুলিশ। মেইল- [email protected]

বাংলাদেশ জার্নাল/এমপি

  • সর্বশেষ
  • পঠিত