ঢাকা, শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

আয়স্তী হস্তিণী প্রেম

  রাজীব কুমার দাশ

প্রকাশ : ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৬:০৮

আয়স্তী হস্তিণী প্রেম
রাজীব কুমার দাশ। ফাইল ছবি

বিবাহিত নারীপ্রেম জারজ সন্তানের মতোন। জৈবিক অজাচার অনাচার নিষিদ্ধ সম্পর্কের একক দায় শুধুমাত্র একজন পুরুষকে বয়ে বেড়াতে হয় আজীবন। বিষাদের সে হস্তিণী প্রেমে পড়ে কত কত কত ভার্জিন কিশোর যুবক অর্থ বিত্ত মান সন্মান জীবন হারিয়ে চিতোর দূর্গের রানী পদ্মাবতীর মতোন হারিয়ে গেছেন, তার নির্দ্দিষ্ট পরিসংখ্যান এখনো অজানা।

আয়স্তী নারীপ্রেম মানে রাক্ষুসে প্রেম; ঠিক অতিমারি করোনা প্রেমের মতোন। একটা না একটা কিছু দিয়ে দাম চুকিয়ে আসতেই হবে। সে হতচ্ছাড়া নারীপ্রেমে পড়ে কিশোর যুবক কখনও ইচ্ছেমৃত্যু বেছে নেন; কখনওবা পালিয়ে বেড়ান। আয়স্তী প্রথম প্রেমিকা মনে চে গুঁয়েভারা বিপ্লবী সেজে রাতারাতি বুকে পিঠে উল্কি এঁকে বাজীগর প্রেমিক হয়ে যান। সকাল বিকেল প্রেমিকার বন্দনাগীত মুখে একচ্ছত্র একপেশে কলুর বলদ ঘানি টেনে প্রেমিক পাগলটি ছারখার হলেও আয়স্তী নারীরা থেকে যান অধরা ধরা, ছোঁয়ার বাইরে।

তারা রাতে স্বামীর পা টিপে বুকে টেনে দু'স্তনের মাঝখানে স্বামীর মুখখানি চেপে ধরেন। রাগি খরিদ্দার সামলে নেবার মতোন হট্টবিলাসিনী মনে বলেন,' তুমি আমার একমাত্র পতি বলে তবুও আমি সতী। রাত চলে যাচ্ছে। আমার বুকে নিশ্চিন্তে ঘরপালানো সাহসী প্রেমিক স্বামী মনে ঘুমিয়ে যাও সোনা।' বউ ফেরান সিকি আধুলি পুরোপুরি নপুংশক কাপুরুষ স্বামীটা গদ গদ সোহাগী খুশি মনে আয়স্তী রাণ্ডীর কথা মতো ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলেন।

পরেরটা বলতে না পারা ইতিহাস মনে আয়স্ত প্রেমিকা সোহাগীর পরকীয়া হুংকার, ' আমার পেছনে আপনাদের ছেলেপুলে কেনো লাগিয়ে দিয়েছিলেন? অভিমানি নাক ছিটকানো সুরে বলেন,' আমার স্বামীটা কতো ভালো। কেনো আমার স্বামীটাকে ছোট করতে চাইছেন? কী দোষ করেছিলাম আপনাদের? আয়স্তী সোহাগী কান্না ঢেউ ইথার তরঙ্গ জ্যাম করে রেখেছেন। মান সন্মানের ভয়ে মৃত'র পরিবার অবলীলাক্রমে বেমালুম চেপে গিয়ে বলেন,' সবটাই দোষ আমাদের সন্তানের। '

তার পরেরটা ইতিহাস। হস্তিনী প্রেমিকা আয়স্তী রাণ্ডী বৌদি ভাবী দিদি আপুরা রাতারাতি প্রেমের খলনায়িকা অজগর হয়ে একে একে দখলে নিলেন,বদ্বীপের রাষ্ট্রযন্ত্র, ব্যাংক, বীমা অফিস,ভজনালয়, হৃদয়ালয়। অবস্থাটা এমন, একটা ধরে ক'দিন পরে সেটা ছাড়ে। আজ এটার সাথে কালকে ওটার সাথে পরশু সেটার সাথে, তরশু আবার প্রথমটার সাথে।

কিন্তু কেন? এদেশে পাগলমার্কা হস্তিণী প্রেম? বিদেশী ফাণ্ড মারার ধান্ধা মনে বসে থাকেন দেশী এনজিও প্রধানগণ। তারা লিফলেট পোস্টার বিজ্ঞাপনে জীবন থেকে অকালীন অবসর নেয়া অগুণতি কিশোর যুবক গৃহী রাণ্ডীবাজ পুরুষের মৃত্যু মেনে নিতে পারলেন না।

জীবন থেকে অকালীন অবসর মৃত্যুর দায় শুধুমাত্র হস্তিণী প্রেমিকা গৃহী রাণ্ডী ভাবী বৌদি দিদি আপুদের উপর চাপিয়ে মিশে মিশে বিদেশী ফাণ্ডখেকো দেশীয় এনজিও প্রধানগণ আদালতে রিট পিটিশন মামলা দায়ের করে দিলেন। এইত!যেমন ভাবা তেমন কাজ। দু'জন বিচারপতির বেঞ্চ রায় বলেন,' মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় সহ কমপক্ষে সরকারের তিন বিশ্ববিদ্যালয় মিলে পুষ্টিবিজ্ঞান সমাজবিজ্ঞান যৌনবিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট এমিরেটস প্রফেসররা এই বিষয়ে আগামী ত্রিশ কার্যদিবসের মধ্যে ঘরে ঘরে হস্তিণী প্রেমিকার অদম্য কামস্পৃহা জাগার কারণ ও করণীয় সংক্রান্তে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করবেন। '

এনজিও প্রধানগণ বেশ মহাখুশি। চোখগুলো খুশি ঝিলিক মেরে দিন দুপুরে কালো গাউনে আলোর প্লাবন বইয়ে দিচ্ছে। ডিএলআর মনে উকিল সাহেবদের ফিস বেড়ে যাবে অচিরেই। তাদের বিদেশ ভ্রমণ,মজার পিনাখানা ঘুম বিশ্রাম বুকে পাঁচতারকা মানের হোটেল চব্বিশ ঘণ্টা জেগে আছেন।

নির্দিষ্ট তারিখে সরকারের পক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল প্রতিবেদন দাখিল করলেন। প্রতিবেদনের এক জায়গায় দৃঢ়ভাবে এমিরেটস অধ্যাপক টীম উদাহরণ টেনে জানান দেন,' হস্তিণীর প্রিয় খাবার কলাগাছ। হস্তিণী কলাগাছ খেয়ে নীরোগ থাকেন,বিবাহিত সংসারি নারী হস্তিণীরও প্রয়োজন নীরোগ দেহ মন। তারাত আমাদেরই মা বোন সন্তান। ধনী উন্নত দেশ বৃটেনের উদাহরণ টেনে বলেন,' সেখানে শতকরা ৪০ বছর বয়স নীচের পুরুষের ২০ জন সিকি আধুলি পুরোপুরি মাত্রার ইলেক্ট্রাইল ডিসফাংশন। ' সেখানে বিয়ের আগে নারীরা তাদের হবু পার্টনারের পরীক্ষা নিরীক্ষার সুযোগ পান। কিন্তু আমাদের জাতীয় দুর্ভাগ্য-আমাদের দেশের নারীরা বিজ্ঞানসম্মত যৌনজীবন নিয়ে সরব নন। এ ছাড়া পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রেরও তেমন মাথাব্যাথা নেই।

প্রতিবেদনের আরও এক জায়গায় মার্ক করে দেন এভাবে, ' আমাদের দেশের পুরুষরা স্বাস্থ্য সচেতন নন। তাদের না আছে সমৃদ্ধ সততা, না আছে বউ ধরে রাখার পৌরষালি ব্যক্তিত্ব দেহ মন। তারা পারিবারিক সামাজিক পথচলায় বিজ্ঞান মনস্ক নয় বলে টেস্টোস্টেরন হরমোন আসার পর হতে কুসংস্কার, ভয়ার্ত মনে কারোর সাথে শেয়ার করতে পারেন না - আগামীর যৌনজীবন।

কিশোর বয়স হতে ঘরে বাইরে হাত পাকা নারী পুরুষের ফাঁদে পড়ে বেছে নেন,অজাচার নিষিদ্ধ সম্পর্কে পাপাচার পঙ্খিল জীবন। এ ছাড়া পুরুষদের কিছু বংশানুগতিক সমস্যা অতিরিক্ত মাত্রার হস্তমৈথুন বেশ্যাগমন পায়ুকাম পশুগমন সমস্যা তো আছেই। '

প্রায় সকল নারী সুস্থ যৌনজীবন নিয়ে এদেশে জন্মান। তারা কষ্মিণকালেও জানতে পারেন না,তাদের পার্টনার সাহেব কেমন হবেন? জানতে পারেন না,পার্টনার শতকরা কত পার্সেন্ট মানসিক শারীরিকভাবে সক্ষম!?

বিয়ের পর হতে সে স্বপ্নের পুরুষটা যখন দিনের পর দিন প্রতারণ মনে আজ এ সমস্যা কাল ও সমস্যা পরশু ও সমস্যা বলে সময় চান! তরশু যখন বলে বেড়ান - ' তোমার এত এত সেক্স কেন? ও... বাইরে চাকরি বাকরি করনাত! করলে সেক্সের জন্য তোমার এত এত হাহাকার জ্বালাতন থাকত না। '

মহামান্য আদালত! এ দেশের পুরুষদের সঙ্গম স্হায়িত্ব নিয়ে নতুন করে আর নাই বা বললাম। এমনও দুর্ভাগা নারী আছেন,' যারা সারাটাজীবন একটিবারও স্বামীর কাছে অর্গাজম সুখ কী জিনিশ বুঝতে পারেন নি।'

সমাজবিজ্ঞানী ড. শমশের মহামান্য আদালতের অনুমতি নিয়ে কিছু বলতে চাইলে বিজ্ঞ আদালতের মঞ্জুর সাপেক্ষ মনে ড.শমশের বললেন,' মহামান্য আদালত, বলতে দ্বিধা নেই যে,আমাদের মা বোন কন্যা বিলাপ ক্রন্দন জানে একমাত্র কষ্ট যার, নষ্ট তার মনে। ' তবুও কলাগাছ খেকো নিরোগ হস্তিনীর মতোন আমাদের সংসারি নারীরাও সুস্থভাবে বেঁচে থাকার প্রয়োজনে এদিক ওদিক ছোটাছুটি করেন। অযোগ্য অক্ষম পৌরষালি মাহুত মনে - বউ পুষতে না পেরে পরিবার সমাজ আদালতের এজলাসে তাদের অযোগ্য স্বামীরা বলে বেড়ান,' আমার বউয়ের সেক্স বেশি। ও একজন গৃহীরাণ্ডী। পরপুরুষের দিকে তাকান সব সময় বেশি। আমার কথা শোনেন না একদম। মুখে মুখে তর্ক করেন। সুখের সংসার কেন করতে চান না? তার কাছে জিজ্ঞেস করেন। '

মহামান্য আদালত, পরের তারিখ দিয়ে কার্যক্রম মূলতবী ঘোষণা করেন।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও কবি, পুলিশ পরিদর্শক, বাংলাদেশ পুলিশ।

বাংলাদেশ জার্নাল/আইজে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত