ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ মিনিট আগে
শিরোনাম

১১তম গ্রেড ছাড়া বেতন বৈষম্য নিরসন হবেনা প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের

  মাহফিজুর রহমান মামুন

প্রকাশ : ০৬ মার্চ ২০১৯, ১২:৪৩  
আপডেট :
 ০৬ মার্চ ২০১৯, ১৩:২৩

১১তম গ্রেড ছাড়া বেতন বৈষম্য নিরসন হবেনা প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের

সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের গ্রেড পরিবর্তনের একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদটি প্রকাশ হওয়ার পর থেকে প্রধান শিক্ষক থেকে শুরু করে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা শিক্ষা অফিসার, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সবার মনে খুশির ঢেউ লাগলেও মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনের চাবি যাদের হাতে অর্থাৎ যাদের আন্তরিকতার উপর নির্ভর করে প্রাথমিক শিক্ষার ভবিষ্যৎ সেই সহকারী শিক্ষকদের চোখে মুখে দেখা যায় কষ্ট, হতাশা ও বেদনার স্পষ্ট ছাপ।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে সহকারী শিক্ষকদের দেয়া হবে ১২তম গ্রেড, প্রধান শিক্ষকদের দেয়া হবে ১০ম গ্রেড, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারদের ৯ম গ্রেড, উপজেলা শিক্ষা অফিসারদের ৭ম গ্রেড, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও সমমানের অন্যান্য কর্মকর্তাদের গ্রেডও আপগ্রেড করার কথা বলা হয়েছে।

এতে প্রধান শিক্ষকসহ সকল কর্মকর্তাবৃন্দ খুশি হলেও চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে মানুষ গড়ার আসল কারিগর সরকারী শিক্ষকদের মধ্যে। কারণ সহকারী শিক্ষকরা প্রধান শিক্ষকদের সাথে তাদের বৈষম্য নিরসনের জন্য সুদীর্ঘকাল থেকে আন্দোলন করে আসলেও তাদের দাবি এ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি। শিক্ষকদের মর্যাদা দিতে গিয়ে আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেখানে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের বেতনের মধ্যে কোন পার্থক্য রাখেননি।সেখানে ধীরে ধীরে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে বর্তমানে ৪ ধাপ পার্থক্য বিরাজমান।

অথচ পদ অনুসারে প্রধান শিক্ষকের পরের গ্রেড অর্থাৎ প্রধান শিক্ষকরা ১০ম গ্রেড পেলে সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড পাওয়া শুধু দাবি নয় বরং অধিকার। গত ২৫ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে তৎকালীন গণশিক্ষামন্ত্রী সহকারী শিক্ষকদের দাবি যৌক্তিক হলে তা কার্যকর করার ঘোষণা দিয়ে অনশন ভাঙ্গান।

পরে সহকারী শিক্ষকরা তাদের দাবির যৌক্তিকতা প্রমাণ করতে সক্ষম হলে তৎকালীন গণশিক্ষামন্ত্রী সহকারী শিক্ষকদের দাবি যৌক্তিক বলে স্বীকার করে নেন। কিন্তু উনার সময়ে দাবি বাস্তবায়ন আর হয়নি। এ অবস্থায় নির্বাচনের পূর্বে আওয়ামীলীগের ইশতেহারে সহকারী শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য নিরশনের কথা উল্লেখ করা হয় এবং দায়িত্ব নেয়ার দিনেই নতুন গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সহকারী শিক্ষকদের দাবি দ্রুত কার্যকর হবে বলে আশ্বাস দেন।

দায়িত্ব নেয়ার দিনেই তিনি বলেছিলেন যে একজন প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে বেতনের সামান্য কিছু পার্থক্য থাকতে পারে কিন্তু বর্তমানে বিশাল একটা বৈষম্য রয়েছে। এ বৈষম্য দূর করা হবে। কিন্তু মাননীয় গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বর্তমানে এ বিষয়ে অবগত আছেন কিনা জানিনা যে প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড প্রদানের সাথে সাথে যদি সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড না দিয়ে ১২তম গ্রেড দেয়া হয়। তাহলে সহকারী শিক্ষকদের বৈষম্য নিরসনতো দূরের কথা বরং আরো বৈষম্য বাড়বে।

প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড (১৬০০০ টাকা বেসিক) ও সহকারী শিক্ষকদের ১২তম গ্রেড (১১৩০০টাকা বেসিক) দেয়া হলে শুধু বর্তমানেই বেসিকের পার্থক্য হবে ৪৭০০টাকা এবং ১৬ বছর পরে (২টি উচ্চতর গ্রেড পাওয়ার পর) পার্থক্য হবে ৭০০০ টাকা। একমাত্র সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড প্রদান করা হলেই সহকারী শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য নিরসন হবে। কারণ ১৬ বছর পরে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে তখন বেতনের পার্থক্য হবে মাত্র ১০০০ টাকা যা একেবারে স্বাভাবিক। সহকারী শিক্ষকদের ১২তম গ্রেড দিলে প্রাথমিকের প্রধান ও সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে আবারও একটি বিশাল বৈষম্য সৃষ্টি হবে। ফলস্বরুপ সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করবে যার প্রভাব পড়তে পারে শেখানো কার্যক্রমে। তাই মানসম্মত শিক্ষা অর্জনের আসল কারিগর সহকারী শিক্ষকদের সরকারের ইশতেহারে দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুসারে ১২তম গ্রেড নয় বরং ১১তম গ্রেড প্রদান করতে হবে। সবার মনে রাখতে হবে পাঠদানের আসল ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করেন সহকারী শিক্ষকরাই। তাই তাদেরকে ১১তম গ্রেড থেকে বঞ্চিত করে প্রাথমিক শিক্ষায় ভালো কিছু আশা করা যায়না।

লেখক: সহকারী শিক্ষক ও ফ্রিল্যান্সার।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত