ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

অনন্য ছাত্রনেতার অদম্য পথচলা

  নাজমুল হোসেন

প্রকাশ : ০৬ জুলাই ২০২০, ১৬:৩৮

অনন্য ছাত্রনেতার অদম্য পথচলা
ছবি: সংগৃহীত

পৃথিবী আজ অস্থির করোনার ভয়াল থাবায়। যা হানা দিয়েছে আমাদের প্রাণের মাতৃভূমি বাংলাদেশেও। মার্চ মাসের ৮ তারিখে প্রথম শনাক্ত হওয়া এই ভাইরাসটি ১২১ দিনে আক্রান্ত করেছে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৬১৮ জনকে এবং প্রাণ কেড়ে নিয়েছে সর্বমোট ২০৯৬ জনের।

মারণ ভাইরাস করোনাকে রুখতে সরকার থেকে শুরু সাধারণ মানুষ পর্যন্ত কারো চেষ্টার কোনো কমতি নেই। সাধারণ মানুষকে নিরাপদে রাখতে দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঘরে বসে নেই এদেশের সাধারণ ছাত্ররাও। বিভিন্ন সংগঠনের ছাত্রনেতারা ঝাঁপিয়ে পড়েছেন, যথাসাধ্য থাকার চেষ্টা করছেন এই করোনাকালীন সময়ে বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে থাকতে।

এমনি একজন ইফতেখার আহমেদ সজীব। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংসদের সাবেক উপ-পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক। ছোটবেলা থেকেই সাধারণ মানুষের বিপদে পাশে থাকাটা যেনো তার লালিত স্বপ্ন ছিলো। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে দীক্ষিত এই সৈনিক যখন প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি ছাত্ররাজনীতিতে যুক্ত হোন তখন থেকেই পাশে থেকেছেন সাধারণ ছাত্রদের, রাজপথে নেমেছেন দুর্নীতির ‌‘কালো হাত ভেঙে দিতে’।

সুযোগ পেলেই ছুটেছেন নিজ জন্মস্থান ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। সবসময় চেষ্টা করেছেন তাদের পাশে থাকতে। চলমান বৈশ্বিক মহামারি করোনা ও ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে যখন বিপর্যস্ত জনজীবন ঠিক এসময় তিনি শেকড়ের টানে ফিরে গেছেন গ্রামে। সাধ্যমত তুলে দিয়েছেন অসহায়দের মুখে কিছু খাবার। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন পুরো ইউনিয়ন। তাকে সঙ্গ দিচ্ছেন স্থানীয় স্বপবাজ কিছু তরুণ ছাত্রনেতা।

উপজেলার শাহজাদাপুর ইউনিয়নের দুটি গ্রামের সংযোগস্থল (মলাইশ-শাহজাদাপুর) খোয়ালাপার। যে পথ দিয়ে প্রতিদিন ৩০ হাজার মানুষের চলাচল। অল্প বৃষ্টিতেই চলাচলের অনুপযোগী এই রাস্তা নির্মাণ যেনো শাহজাদাপুরবাসীর জন্য আকাশ কুসুম কল্পনার মত। জনপ্রতিনিধিরা বিভিন্ন সময়ে আশ্বাস দিলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি এখন পর্যন্ত। এছাড়া বিষয়টি নিয়ে পত্র পত্রিকায়ও বিস্তর লেখালেখি হয়েছে।

সম্প্রতি বিষয়টিতে দৃষ্টি পড়ে ছাত্রনেতা সজীবের। স্থানীয় ছাত্রলীগ কর্মীদের নিয়ে নিজে নেমে পড়েন অস্থায়ী সড়ক সাঁকো নির্মাণে। যা পুরো ইউনিয়নবাসীকে আলোড়িত করেছে।

বিষয়টি নাড়া দিয়েছে খোদ সজীবকেও। বলেন, জাতির যে কোনো দুর্যোগ-সংকটে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বরাবরই সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়। অতীত ইতিহাস তা-ই বলে। জনগণের ভোগান্তি লাঘবে মানবিক দায়বদ্ধতা থেকেই এ উদ্যোগ নিয়েছি। মানুষ উপকৃত হলেই আমাদের পরিশ্রম সার্থক।

স্থানীয় দরিদ্র জনগণকে আশ্বাস দিয়ে সজীব বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে আমার ইউনিয়নবাসীর পাশে থাকার ক্ষুদ্র চেষ্টা করে যাচ্ছি। এছাড়া বাংলাদেশ সরকারের বরাদ্দকৃত যে মালামাল আসবে, আমি স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নিয়ে সেসব বণ্টনে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব।

করোনার এই পরিস্থিতি যতদিন স্বাভাবিক না হবে ততদিন শেকড়ের মানুষদের পাশে থাকবেন। তাদের সুখ দুঃখের সাথী হবেন। এতেই আত্মতৃপ্তি- যোগ করেন সজীব।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ঘোষিত তিন মাস ব্যাপী বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে এলাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ফলজ, বনজ, ছায়াদার ও সৌন্দর্য বর্ধনকারী বৃক্ষ রোপন করেন সজীব।

এদিকে, কিছুদিন আগে আচমকা টর্নেডোতে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় ইউনিয়নের কুচনি ও বুড্ডা গ্রামের বিভিন্ন এলাকা। টর্নেডোতে গৃহহীন হোন বিধবা নারী সাহারা বেগম। যার চার মেয়ে ও এক ছেলের সবাই কর্মক্ষম। চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন সাহারা- একথা শুনে তার জন্য ঘর নির্মাণের উদ্যোগ নেন সজীব। সরকারি সহায়তা হিসেবে পাওয়া কিছু টিন ও ৬ হাজার টাকা, সাহারা বেগমের আত্মীয় স্বজনের সহায়তার সাথে তিনিও কিছু অর্থ সহায়তা যোগ করেন। এরপর কাঠমিস্ত্রি ও ছাত্রলীগের ছোট ভাইদের নিয়ে সাহারার বাড়িতে গিয়ে নেমে পড়েন কাজে। টানা ১০ দিন কাজ করার পর সম্পন্ন হয় নতুন ঘর নির্মাণ।

এমন একটি কাজ সম্পন্ন করতে পেরে যারপরনাই খুশি সজীব। বলেন, করোনাকালীন সময়ে সবাই যার যার অবস্থান থেকে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য নির্দেশ প্রদান করেছেন আমাদের আদর্শিক নেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করি বলেই অসহায়ের পাশে দাঁড়ানোর তাড়না অনুভব করি। কারণ বঙ্গবন্ধু সারাজীবন মানুষের জন্য মানুষের কল্যাণে কাজ করে গেছেন। তাই মানুষ হিসেবে মানুষের জন্য মানবিক দায়বদ্ধতা থেকেই আমাদের এ উদ্যোগ।

এদিকে সজীবের কর্মকাণ্ডের ভূয়সী প্রশংসা করছেন স্থানীয় জনসাধারণ থেকে শুরু থেকে নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গরা। আর স্থানীয় সাধারণ মানুষ তাকে স্বীকৃতি দিয়েছেন ‘অনন্য ছাত্রনেতা’ হিসেবে। যার ভিত সজীব নিজেই গড়েছেন।

যুগের চাহিদায় এরকম ছাত্রনেতা প্রত্যেক সমাজের প্রয়োজন। যারা নিজেকে উজাড় করে ঢেলে দেবেন মানবিক সেবায়। জাতিকে যারা উপহার দিবে ‘চিন্তামুক্ত ঘুম’, সঙ্গে এগিয়ে যাবার প্রেরণা। এসব ছাত্রনেতাদের পথ হবে অদম্য যেখানে ছুটে চলাতে থাকবে না কোনো ক্লান্তি। মানুষের ভালবাসা-ই হবে তাদের বেঁচে থাকার প্রোটিন।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত