ঢাকা, রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩০ মিনিট আগে
শিরোনাম

আশা ছেড়ে দিয়েছে পরিবার

  কিরণ শেখ

প্রকাশ : ০৫ নভেম্বর ২০২০, ২১:০২

আশা ছেড়ে দিয়েছে পরিবার

গত প্রায় দুই বছর ধরে শয্যাশায়ী বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম প্রভাবশালী সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া। চিকিৎসকরা বলছেন, তার পিঠের মেরুদণ্ডে তিনটি হাড় ভেঙে গেছে, তিনি কখনো সুস্থ হবেন না। এ কারণে রফিকুল ইসলাম মিয়ার পরিবার তার সুস্থ হওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছে।

এরপরও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে দলটির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে কয়েক মাস ধরে অংশ নিচ্ছেন তিনি। এমনকি একটি বৈঠকে স্বশরীরে উপস্থিতও হয়েছিলেন। কিন্তু এই বৈঠকগুলোতে ১০ মিনিটের বেশি সময় দিতে পারেননি তিনি। সর্বশেষ গত ৩১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও রফিকুল ইসলাম মিয়া উপস্থিত ছিলেন না।

২০১৮ সালের ২০ নভেম্বর রাজধানীর ইস্কাটনের বাসা থেকে ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়াকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। ওইদিনই সম্পদের হিসাব বিবরণী দাখিল না করার অভিযোগে দুদকের মামলায় তাকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেন ঢাকার ছয় নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ড. শেখ গোলাম মাহাবুব। পরে ২৫ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়েন রফিকুল ইসলাম মিয়া। সেখান থেকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) ভর্তি করা হয়।

ওই বছরের ২৬ নভেম্বর হাইকোর্ট থেকে ছয় মাসের জামিন পান রফিকুল ইসলাম মিয়া। এরপর ২৮ নভেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মুক্তি পান তিনি।

এদিকে কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই স্বশরীরে রফিকুল ইসলাম মিয়াকে কোনো সভা-সমাবেশ, সেমিনার এবং মানববন্ধন কর্মসূচিসহ কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে দেখা যায়নি।

মুক্তি পাওয়ার পর দেশে এবং বিদেশে চিকিৎসা করিয়েছেন তিনি। প্রথমে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় সিঙ্গাপুরে। পরে সেখান থেকে তাকে আমেরিকা নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা বলছেন, তার মেরুদণ্ডে (পিঠ) তিনটি হাড় ভেঙে গেছে। আর এটা কখনো ভালো হবে না।

জানতে চাইলে রফিকুল ইসলাম মিয়ার স্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শাহিদা রফিক বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘অনুষ্ঠানে উনি যাবেন কিভাবে? কারণ উনি তো বিছানা থেকেই উঠতে পারেন না। উনি কোনো কথাও বলতে পারেন না। চিকিৎসকরা বলে দিয়েছেন, উনি আর সুস্থ হবেন না। তাই আমরাও আশা ছেড়ে দিয়েছি।’

রফিকুল ইসলাম মিয়ার ব্যক্তিগত সহকারি মোকছেদুর রহমান আবির বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘স্যার পিঠে আঘাত পাওয়ার পর থেকে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেন না। তাই চেষ্টা থাকলেও উনি রাজনীতিতে সক্রিয় হতে পারছেন না। আর স্যার মাত্র ১০ মিনিট সোজা হয়ে বসে থাকতে পারেন। এজন্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে স্যার ১০ মিনিটের বেশি সময় অংশ নিতে পারেন না। ১০ মিনিট বসে থাকলে এরপর ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা শুয়ে থাকতে হয়। এরপর আবার ১০ মিনিট স্যার বসে থাকতে পারেন।’

অন্যদিকে গত ১৪ সেপ্টেম্বর অসুস্থতার কারণে রফিকুল ইসলাম মিয়াকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থা গুরুত্বর হলে কেবিন থেকে তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। পরে অবস্থার একটু উন্নতি হলে তাকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়।

রফিকুল ইসলাম মিয়া পেশায় ব্যারিস্টার ও রাজনীতিবিদ। তিনি ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের মনোনয়নে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওই সময় তিনি ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সালে প্রথম খালেদা জিয়া মন্ত্রীসভায় গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালে তিনি দলীয় মনোনয়ন না পেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করেন। সে সময় তাকে স্থায়ী কমিটিতেও রাখা হয়নি। পরে আবার কমিটিতে অন্তর্ভূক্তকরা হয়। তিনি ১৯৯৬ সালের ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন।

বাংলাদেশ জার্নাল/ওয়াইএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত