ঢাকা, রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

স্বেচ্ছাসেবক লীগে আলোচনায় যারা

  তৌফিক ‍ওরিন

প্রকাশ : ১৩ নভেম্বর ২০১৯, ২১:২২  
আপডেট :
 ১৪ নভেম্বর ২০১৯, ০১:২৭

স্বেচ্ছাসেবক লীগে আলোচনায় যারা

দীর্ঘ সাত বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের ত্রিবার্ষিক জাতীয় সম্মেলন। সম্মেলনকে সামনে রেখে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা বিরাজ করছে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের মধ্যে। দুই পর্বের সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে সংগঠনটির ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুযায়ী আগামী ১৬ই নভেম্বর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের তারিখ নির্ধারিত হয়েছে। সকাল ১১টায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন এবং ইঞ্জিনিয়ার্স ইনিস্টিটিউট মিলনায়তনে দ্বিতীয় অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। এই মধ্যে সম্মেলন আয়োজক কমিটি গঠন করা হয়েছে। আহ্বায়ক হিসেবে সিনিয়র সহসভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ এবং সদস্য সচিব হিসেবে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী মেসবাউল হক সাচ্চুকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সম্মেলনের প্রায় সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে আয়োজন কমিটি। যেগেুলো বাকি রয়েছে সেগুলো দু’একদিনের মধ্যে শেষ হবে বলেও জানা গেছে।

সম্মেলনের সর্বশেষ প্রস্তুতি সম্পর্কে সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির আহ্বায়ক গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, আমাদের সম্মেলনের প্রস্তুতি মোটামুটি শেষ পর্যায়ে। ১৩টি উপ-কমিটির সবগুলো তাদের কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করার পথে। টুকটাক ‍কিছু কাজ বাকি আছে। মঞ্চের কাজ চলছে, দপ্তর উপ কমিটির কাজ মোটামুটি শেষ পর্য়ায়ে, গঠনতন্ত্র উপ-কমিটির কাজ শেষ হয়েছে। আর যেগুলো বেশি কাজের সেগুলো চলছে, যেমন শৃঙ্খলার ব্যাপারটা। আজকেও আমরা শৃঙ্খলা উপ-কমিটির মিটিং করেছি আহ্বায়কসহ সকলে। আশা করি একটি সুন্দর, সফল ও সুশৃঙ্খল একটি সম্মেলন উপহার দিতে পারবো। এটা মানুষ অনেকদিন মনে রাখবে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয় এখন জমজমাট। দুই অফিসের সামনে টানানো হয়েছে অসংখ্য ব্যানার। বিভিন্ন প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের প্রতিদিনই শো ডাউন দিতে দেখা যাচ্ছে। পদপ্রত্যাশীরা শেষ মুহূর্তে শুরু করেছেন জোর লবিং-তদবির। সংগঠনটির ক্লিন ইমেজের সাবেক শীর্ষ নেতাদের বাসা থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করেছেন প্রার্থীরা। অনেকে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার আস্থাভাজন নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগের পাশাপাশি গণভবন কেন্দ্রীক যাতায়াত বাড়িয়েছেন।

সম্মেলনকে সামনে রেখে শীর্ষ পদে যেতে মাঠে রয়েছেন প্রায় এক ডজন নেতা। এদের বেশিরভাগই অতীতে ছাত্রলীগের প্রথম সারির নেতা হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমলে কারাভোগকারী, শেখ হাসিনার মুক্তি আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া ছাত্রনেতারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। শুরু করেছেন লবিং তদবির, যাতায়াত বাড়িয়েছেন গণভবনে। একই অবস্থা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের পদ প্রত্যাশীদের মাঝে। শীর্ষ পদ পেতে পদপ্রত্যাশীদের পরিশ্রমের কমতি নেই।

স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে সাংগঠনিক দক্ষতা, স্বচ্ছ ইমেজ এবং অতীত আন্দোলন সংগ্রামে প্রার্থীর ভূমিকাকে প্রাধান্য দেয়া হবে। স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক হয়েছেন নির্মল রঞ্জন গুহ। এর আগে তিনি সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি ‍হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়া সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু যিনি ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। তিনিও সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

সাধারণ সম্পাদক পদেও আলোচনায় রয়েছেন একঝাক সাবেক ছাত্রনেতা, যারা ১/১১ পরবর্তী সময়ে শেখ হাসিনার মুক্তি আন্দোলনে অগ্রনী ভূমিকা পালন করেছেন এবং বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আক্রশের শিকার হয়েছেন। এ পদে আলোচনায় রয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনকি সম্পাদক খাইরুল হাসান জুয়েল। তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। ছাত্রজীবনে মাদারীপুরের একটি ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন। জোট সরকার ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রেফতার ও নির্যাতনের শিকার হন এবং এক বছরের বেশি সময় কারাভোগ করেন। এছাড়া আলোচনায় আছেন সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ সোহেল রানা টিপু। বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। আওয়ামী ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান টিপু ১/১১তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুক্তির আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারীদের মধ্যে অন্যতম। এছাড়া শীর্ষ পদে আলোচনায় রয়েছেন আরেক সাংগঠনকি সম্পাদক সাজ্জাদ সাকিব বাদশা। তিনিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় বাদশা বহুবার বিএনপি জামাতের আক্রোশের শিকার হন।

স্বেচ্ছাসেবক লীগের আসন্ন সম্মেলনের মাধ্যমে কেমন নেতৃত্ব আসতে পারে এ প্রসঙ্গে কথা বলেন আওয়ামী লীগের অন্যতম সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। তিনি বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়। এখানে যোগ্য, সৎ, ক্লিন ইমেজ ও রাজনীতিতে দীর্ঘ পথপরিক্রমা রয়েছে তাদেরকেই নির্বাচিত করা হবে। নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। আমরা শুধু যে যার মতো করে মতামত দেব। তবে এটুকু বলতে পারি যাদের বিরুদ্ধে নেতিবাচক কথা উঠেছে, সম্মেলনে তাদের প্রার্থী হওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না।

সম্মেলন নিয়ে প্রত্যাশার কথা জানতে চাইলে খাইরুল হাসান জুয়েল বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, এক-এগারোতে নেত্রীর কারা মুক্তির আন্দোলনে এক বছরের বেশি জেল খেটেছি। বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমলে বার বার হামলা-মামলার শিকার হয়েছি, কারা নির্যাতন ভোগ করেছি। সততা স্বচ্ছতা কমিটমেন্ট এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজেকে দলের জন্য সব সময় নিয়োজিত রেখেছি। আমি মনে করি, নেতৃত্বে যেই আসুক, তার যেন অবশ্যই সততা, স্বচ্ছতা, কনট্রিবিউশন এবং কমিটমেন্ট থাকে।

তিনি বলেন, স্বচ্ছ ভাবমূর্তির অধিকারী ব্যক্তি যিনি নেত্রীর প্রশ্নে অতীতে কখনো আপস করেনি, দীর্ঘদিন রাজপথে শ্রম দিয়েছেন এমন নেতৃত্বই আসবে বলে বিশ্বাস করি। একই সাথে যাদের কারণে দলের দুর্নাম হয়, ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে তাদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

শেখ সোহেল রানা টিপু বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, আমি মনে করি দলের প্রতি আনুগত্য, ত্যাগ, স্বচ্ছ ভাবমূর্তি এবং সাংগঠনিক দক্ষতার ভিত্তিতে নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে। জাতির পিতার আদর্শে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী হাসিনার নির্দেশে মানুষের জন্য রাজনীতি করি। এই ধারা অব্যাহত থাকবে।

সাজ্জাদ সাকিব বাদশা বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, সততা, নিষ্ঠা এবং নিস্বার্থভাবে দলের জন্য দলের জন্য সব সময় কাজ করেছি। আমি আশা করি যারা দুর্দিনে এই দলের প্রয়োজনে জীবনবাজি রেখে রাজপথে লড়াই-সংগ্রাম করেছেন, দুর্নীতি যাদের স্পর্শ করেনি, সম্মেলনের মাধ্যমে স্বেচ্ছাসেবক লীগে এমন নেতৃত্ব আসবে।

আবুল ফজল রাজু বর্তমান সেচ্ছাসেবক লীগের পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগের কমিটির তিনি নির্বাহী সদস্য ছিলেন। এছাড়াও তিনি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য ছিলেন। ১৯৯৩ সালে ধানমন্ডি ল কলেজের আওয়ামী আইন ছাত্রপরিষদের যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। তিনি ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য ছিলেন।

১৯৯০-’৯২ রুপগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদককের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন রাজনীতি করে আসছি। যে দিন থেকে রাজনীতি করছি সেই দিন থেকে বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছি। ভবিষ্যতেও করব। নেত্রী আমাদের যেখানে দায়িত্ব দেবেন সেই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করার চেষ্টা করবো। আমি চাই আগামী সম্মেলনের মাধ্যমে সেচ্ছাসেবক লীগের নেতৃত্বে আসবেন সৎ, নিষ্ঠাবান ও দায়িত্বপরায়ণ ব্যক্তি। যাকে দিয়ে সুনাম বৃদ্ধি পাবে।’

  • সর্বশেষ
  • পঠিত