ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

গাজী রাকায়েতের বিরুদ্ধে পর্ণোগ্রাফী সরবরাহের মামলা

‘মেয়ে মানুষের সঙ্গে কেন ভোররাতে কথা বলতে যাবো’

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ২৩ মার্চ ২০১৮, ২০:৩৭  
আপডেট :
 ২৩ মার্চ ২০১৮, ২০:৩৯

‘মেয়ে মানুষের সঙ্গে কেন ভোররাতে কথা বলতে যাবো’

নারীঘটিত কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়া নাট্য পরিচালক সংগঠন ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি চলচ্চিত্র নির্মাতা গাজী রাকায়েতের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। শুক্রবার রাজধানীর শ্যামপুর থানায় মামলাটি করেন শ্যামপুর পোস্তগোলা এলাকার এক তরুণী গৃহবধূ। মামলায় তিনি ইন্টারনেট সংযুক্ত মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পর্ণোগ্রাফি সরবরাহের অভিযোগ করেন। বিষয়টি নিয়ে থানা পুলিশের পাশপাশি তদন্ত করছেন সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম ডিভিশন।

এদিকে মামলা দায়েরের পর গাজী রাকায়েত ভুক্তভোগী ও তার পরিবারের সদস্যদের দেখে নেয়ার হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে ঘটনা নিয়ে কোনো মন্তব্য রাজি হননি গাজী রাকায়েত।

মামলার অভিযোগে ওই তরুণী উল্লেখ করেন, ‘গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রাত ৩টা ১ মিনিটে গাজী রাকায়েত তার ফেসবুক আইডি থেকে আমার ম্যাসেঞ্জারে কথা বলার সময় বিভিন্ন অশ্লীল, অনৈতিক ও ধর্মীয় অনুভূতি পরিপন্থী বিভিন্ন ইঙ্গিতপূর্ণ প্রস্তাব দেয়। আমি তাকে এসব বন্ধ করতে বলি। কিন্তু তিনি আমার কথায় কর্ণপাত না করে জঘন্য যৌন উত্তেজক কথা বলে আমায় প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করেন ও উত্ত্যক্ত করেন। গাজী রাকায়েত একজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। তার আইডি থেকে এ ধরনের বক্তব্য আসায় আমি অত্যন্ত মর্মাহত হই। ম্যাসেঞ্জারের কথোপকথনটি স্ক্রীনশট দিয়ে তা একটি ক্লোজ গ্রুপে পোস্ট দিই। এ পোস্টের পর গত ৬ মার্চ গাজী রাকায়েত জানায়, তার দু’টি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছে।’

মামলার বাদী বলেন, ‘ঘটনার পর আমি সামাজিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হই। আমার দাম্পত্য জীবন এখন সংকটের মধ্যে আছে। বিষয়টি আমি আমার বন্ধু মানবাধিকার কর্মী অপরাজিতা সঙ্গিতাকে জানাই। পরে ফেসবুকের মাধ্যমে গাজী রাকায়েতের সঙ্গে জানতে চান- কবে তার অ্যাকাউন্টটি হ্যাক হয়েছে? রাকায়েত এ প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিলে সঙ্গিতা ওই কথোপকথনের (রাকায়েত-সঙ্গিতা) স্ক্রীনশট ফেসবুকে পোস্ট করেন। এর পরদিন আমাকে এবং সঙ্গিতাকে ডিরেক্টরস গিল্ড, টেলিভিশন প্রযোজক সমিতি এবং শিল্পী সমিতি নিকেতন অফিসে তলব করা হয়। ওই তিনটি সংগঠন বিষয়টি তদন্ত করবে বলে আশ্বাস দেয়। পাশপাশি সঙ্গিতার ফেসবুক পোস্টটি হাইড করে রাখতে বলা হয়। সেই অনুযায়ী ১০ মার্চ থেকে সঙ্গিতার ফেসবুক পোস্টটি হাইড (অনলি মি) করে রাখা হয়েছে।’

ওই তরুণীর অভিযোগ, ‘১০ মার্চের পর থেকে তদন্তের নামে কালক্ষেপণ করা হয়। আপোষ-মীমাংসার নামে বিভিন্ন প্রস্তাব দেয়া হয়। সঙ্গিতার ওপর বিভিন্ন চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে আমাকে ভয়-ভীতি দেখানো হয়। এসব বিষয় উল্লেখ করে ১৭ মার্চ শ্যামপুর থানায় সাধারণ ডায়েরী (জিডি) এবং ১৩ মার্চ সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম ডিভিশনে অভিযোগ করি। এদিকে ওই তিন সংগঠনের তদন্তের ফলাফল আজও জানতে পারিনি। উপরন্তু অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় গাজী রাকায়েত বাদী হয়ে ১৬ মার্চ আমার বান্ধবী অপরাজিতা সঙ্গিতার বিরুদ্ধে ত্যথ-প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় একটি মামলা করে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছেন। পাশপাশি অভিযোগ প্রত্যাহার করার জন্যে আমার শুভানুধ্যায়ীদের অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য চাপ প্রয়োগ করছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওই তরুণীর ভাই বলেন, ‘মামলা করার পর আমরা এখন বিপাকে আছি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তার পক্ষে আছে বলে ভয় দেখানো হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘ঘটনার পর আমরা থানায় মামলা করতে গেলে থানা পুলিশ তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা করতে বলে। অপরাধটি প্রকৃত অর্থে ৫৭ ধারার। আমার ইচ্ছা করলে এ ধারায় মামলা করতে পারতাম। কিন্তু তা না করে পর্ণোগ্রাফি আইনে মামলা করেছি। যেটি ৫৭ ধারার চেয়ে অধিকতর সহজ।’

কেন ৫৭ ধারায় মামলা করলেন না জানতে চাইলে তরুণীর ভাই বলেন, ৫৭ ধারা একটি কালো ধারা। আমরা এর বিরোধী। কিন্তু গাজী রাকায়েত আমার বোনের বন্ধুর বিরুদ্ধে ৫৭ ধারায় মামলা করে অযথা হয়রানি করছে।

তিনি আরও বলেন, ঘটনার পর রাকায়েত বলেছিলেন, তার ফেসবুক আইডি হ্যাক করা হয়েছে। আবার কখনও বলেছেন তার স্টুডেন্টরা এটি করেছে। সেটাই যদি হয় তাহলে কেন আপনার স্টুডেন্টকে হাজির করছেন না। স্টুডেন্টরা কাজটি করে থাকে তাহলে সঙ্গীতার বিরুদ্ধে মামলা কেন?

ঘটনা প্রসঙ্গে ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট আরিফ জেবতিক ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন। তিনি বলেন, সঙ্গীতার বিরুদ্ধে গোপনে মামলা করেছে আমাদের মিডিয়া সেলিব্রেটি গাজী রাকায়েত। পুলিশ সঙ্গীতাকে খুঁজতে শুরু করার পর গত পরশু রাতে বিষয়টি জানাজানি হয়। ঘটনা খুব সিম্পল। গাজী রাকায়েতের আইডি থেকে একজন মেয়েকে গভীর রাতে অশ্লীল প্রস্তাব দেয়া হয়। সেই মেয়েটি একটি ক্লোজড মেয়েদের গ্রুপে স্ক্রিনশটগুলো শেয়ার করেন। সেখান থেকে নিয়ে অপরাজিতা সঙ্গীতা তার ফেসবুক প্রোফাইলে দিয়ে ঘটনার বিচার দাবি করে। এখনর গাজী রাকায়েত তখন উদ্ভট সব যুক্তি হাজির করছেন, ‘কখনও বলেন যে তার আইডি কয়েকজন মিলে চালায়, কখনও বলেন তার কাজের লে আইডি চালায়, কখনও বলেন তার আইডিটি হ্যাক হয়ে গেছে।’

আরিফ জেবতিক বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা অনলাইনে লড়ব, রাস্তায় লড়ব, আদালতে লড়ব। দেখতে চাই, ক্ষমতার দাপট বড় না সাধারন মানুষদের শক্তি বড়। আজ সঙ্গীতার পাশে না দাঁড়ালে কাল আরেক সঙ্গীতা এসে আমার আপনার মতো মানুষের পাশে দাঁড়াবে না। জানতে চাইলে শ্যামপুর থানার ওসি মিজানুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, মামলাটির প্রাথমিক তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে এসআই মাহবুব আলমকে। বিষয়টি নিয়ে সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম ডিভিশন ছায়া তদন্ত করছে। শিগগিরই মামলাটি তদন্তের জন্য সেখানে চলে যাবে। শ্যামপুর থানার পরিদর্শক শাহীনুর রহমানও একই ধরণের তথ্য জানান।

সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম ডিভিশনের উপ-কমিশনার আলীমুজ্জামান বলেন, গাজী রাকায়েতের বিরুদ্ধে যেমন মামলা হয়েছে তেমনি গাজী রাকায়েতও একটি মামলা করেছে। দুটি মামলাই তদন্তের জন্যে আমাদের কাছে আসবে। এরই মধ্যে আমরা তদন্ত শুরু করেছি। প্রাথমিকভাবে প্রযুক্তির সহযোগিতা নেয়া হচ্ছে। প্রযুক্তির মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়ার পর এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে গাজী রাকায়েত বুধবার সন্ধায় বলেন, ‘আমি কেন একজন মেয়ে মানুষের সঙ্গে ভোররাতে কথা বলতে যাবো? আমার ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি হ্যাক হয়েছিল। সেটি বোধ হয় আপনার জানা নেই।’ অ্যাকাউন্ট কবে হ্যাক হয়েছিল? কারা হ্যাক করেছিল? কীভাবে ফের সচল হলো- এসব জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে মামলা হয়েছে। তদন্ত চলছে। তদন্তাধীন বিষয় নিয়ে কিছু বলতে চাই না।’

/এসকে/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত