ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১১ মিনিট আগে
শিরোনাম

নড়াইলের বাঁশ যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়

  নড়াইল প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৪ এপ্রিল ২০১৮, ১১:১৯

নড়াইলের বাঁশ যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়

নড়াইলের বাঁশ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করা হচ্ছে। জেলার সবচে বড় বাসের হাট বসে সদর উপজেলার পলইডাঙ্গা। এ হাটে বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকারি ব্যাবসায়ীরা বাঁশ কিনতে আসেন এ হাটে। প্রতি রবিবার বসে এ বাঁশের হাটে। মাসে প্রায় ২ কোটি টাকার বাঁশ কেনা বেচা হয় এখানে।

জানা গেছে, নড়াইলের মাটি বাঁশ চাষের জন্য বেশ উপযুক্ত হওয়ায় এখানে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশের চাষ হয় ব্যক্তিগতভাবে। জেলায় প্রায় এক হাজার হেক্টর জমিতে বাঁশের ঝাড় রয়েছে। বাঁশ আবাদের তেমন কোন খরচ নেই বললেই চলে। একবার লাগালে চার থেকে পাঁচ বছর পর তা থেকে বাঁশ কাটা যায়। প্রতিটি ঝাড় থেকে বছরে ৪০ থেকে ৫০টি বাঁশ পাওয়া যায়।

জেলার পলইডাঙ্গা, তুলারামপুর, ভূমুরদিয়া, চাচুড়ি, চণ্ডীবরপুর, এ্যাড়েন্দাসহ অন্ততঃ ১৫টি বাঁশের হাট রয়েছে। নড়াইল সদর উপজেলার পলইডাঙ্গা গ্রামে বসে সবচেয়ে বড় বাঁশের হাট। চিত্রা নদীর পাড়ে প্রায় ১২ একর জায়গায় বসে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সবচেয়ে বড় এই হাট। এখানে হাটবারে চলে বাঁশ কেনাবেচার ধুম। কেউ বাঁশ কিনতে ব্যস্ত, কেউ বাঁশ ট্রলারে সাজাতে ব্যস্ত, কেউবা বাঁশের ভুর বেধে নদীতে ভাসাতে কাজ করছে। সপ্তাহের রোববারে বসে পলইডাঙ্গা বাঁশের হাট। আগের দিন ভোর হতে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই হাটে তল্লা বাঁশ, ভাল্য বাঁশ জমা হয়। মংলা, খুলনা, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাগুরা, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা, বরিশালসহ বিভিন্ন জেলার ক্রেতারা এখানে বাঁশ কিনতে আসেন। রোববার হাটের দিন বাঁশ বেচাকেনা হয় সকাল আটটা থেকে দুপুর পর্যন্ত। এরপর বাঁধাসহ অন্যান্য কাজ চলে রাত পর্যন্ত। বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ব্যাবসায়ীরা সেই বাঁশ নদী পথে জেলার বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যায়। তবে কিছু কিছু ব্যাপারীরা সড়ক পথেও বাঁশ আনা নেওয়া করেন। এছাড়া বাঁশ পরিবহনের সবচেয়ে জনপ্রিয় বাহন হলো নদীতে ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়া। ঘর তৈরী, পানের বরজ, সবজি চাষের মাচা, মাছ ধরার সরঞ্জাম, বাঁশের তৈরি নানা ধরনের আসবাব থেকে শুরু করে আধুনিক ডেকরেটরদের বিভিন্ন কাজে বাঁশের ব্যবহার এসব অঞ্চলে খুবই জনপ্রিয় হওয়ায় ব্যাপারীরা এখান থেকে বাঁশ ক্রয় করে নিজেদের হাটে বিক্রি করে আবার ফিরে আসে বাঁশ কিনতে। নড়াইলে বাঁশের দাম নাগালের মধ্যে থাকায় সকল ক্রেতারা খুশি।

নড়াইলের পলইডাঙ্গা গ্রামের এই বাঁশের হাটটি এলাকার বেকারদের জন্য করে দিয়েছে কর্মসংস্থানের সুযোগ। প্রতি হাটের দিন স্থানীয় অন্তত শতাধিক দিনমজুর কাজ করে। এখানে কেউ করে বাঁশ ট্রলারে উঠানোর কাজ, কেউবা করে বাঁশের ভুর (স্তুপ) সাজানোর কাজ, আবার কেউবা করে দুর-দুরান্ত থেকে আসা বাঁশ পরিবহন থেকে নামানোর কাজ, কেউ করে বাঁশ বাঁধার কাজ। আকার ভেদে প্রতিটি বাঁশ দেড়শ থেকেসাড়ে ৩শ টাকা পর্যন্ত পাইকারি বেচা কেনা হয় ।

স্থানীয় পাইকাড়া গ্রামের আফজাল শেখ বলেন, পলইডাঙ্গার বাঁশের হাট এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় বাঁশের হাট। প্রতি হাটে ৩০ থেকে ৪০ হাজার বাঁশ বেচা-কেনা হয়ে থাকে এখানে।

পাইকারী ব্যবসায়ী বাবুল মোল্লা বলেন, পলইডাঙ্গা হাট থেকে প্রতি রবিবার ৭ থেকে ৮ লাখ টাকার বাঁশ ক্রয় করি। খুলনায় আামাদের নিজের আড়ত রয়েছে সেখানে নিয়ে বিক্রি করি। প্রতি হাটে কমপক্ষে ৫০ লক্ষাধিক টাকার বাঁশ কেনাবেচা হয় এ হাটে। মাসে প্রায় ২ কোটি টাকার বাঁশ কেনা-বেচা হয় বলেও জানান তিনি।

খুলনার পাইকগাছার ব্যবসায়ী খোরশেদ আলম ও দিঘলিয়া উপজেলার ইউনুস আলী বলেন, আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ এখান থেকে বাঁশ ক্রয় করে নিয়ে বিভিন্ন জেলায় বিক্রী করে থাকি এতে আমাদের ভালো লাভ হয়।

কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক চিন্ময় রায় বলেন, জেলায় বাণিজ্যিকভাবে বাঁশের আবাদ হয় এমন খবর আমার জানা নেই তবে এ জেলায় অনেক বাঁশ উৎপাদন হয়।

এমএ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত