ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২০ মিনিট আগে
শিরোনাম

আসছে ‘সার্বজনীন আয়োডিনযুক্ত লবণ আইন’

আইন ভাঙলে জেল জরিমানা

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৯:২০

আসছে ‘সার্বজনীন আয়োডিনযুক্ত লবণ আইন’
ফাইল ছবি

ভোজ্য লবণে আয়োডিন যুক্তকরণ, মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর খাদ্য তৈরিতে আয়েডিনযুক্ত লবণ ব্যবহার নিশ্চিতকরণসহ আয়োডিনের অভাবজনিত রোগ প্রতিরোধ ও নিরাময়ের লক্ষে সরকার আইন আইন সংশোধন করছে। যা সর্বজনীন আয়োডিনযুক্ত লবণ আইন ২০১৮ নামে অভিহিত হবে। ইতোপূর্বে আয়োডিনের অভাবজনিত রোগ প্রতিরোধ আইন ১৯৮৯ নামে একটি আইন করা হয়েছিলো। ওই সময়ে প্রণীত আইনে আয়োডিনের ব্যবহার সংক্রান্ত বিধিবিধান ছিলো।

সংশোধিত আইনে নতুন করে আয়োডিনমুক্ত(ছাড়া) বাজারজাত করলে বিভিন্ন ধরনের শাস্তি আরোপের বিধান করা হয়েছে। এ বিষয়ে সার্বজনীন আয়োডিনযুক্ত লবণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী শফিকুল আলম বলেন, আমরা আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নিয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মতামত নিয়েছি। আশা করি শিগগিরই চুড়ান্ত করে তা অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় পাঠাতে পারবো।

সংশোধিত নতুন আইনে ১২টি অধ্যায়ে খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। আইনের অধীনে নিবন্ধন না করে কেউ কোনো প্রকার লবণ আমদানি, গুদামজাত, ভোক্তাপর্যায়ে পাইকারি সরবরাহ, প্রক্রিয়াকরণ, পরিশোধন বা আয়োডিনযুক্তকরণ কারখানা পরিচালনা করলে ৫ বছরের কারাদণ্ড অথবা ২০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এছাড়া বিভিন্ন অপরাধের জন্য ভিন্ন ভিন্ন শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে আইনটিতে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের উদ্দ্যোগে নতুন করে এ আইনটি সংশোধন করা হচ্ছে।

আয়োডিনযুক্ত লবণ বলতে নির্ধারিত মাত্রায় আহার্য এবং মানুষ ও অন্যান্য প্রাণির খাদ্য তৈরিতে ব্যবহার্য আয়োডিনযুক্ত লবণকে বোঝানো হয়েছে। কারখানা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত লবণ কারখানা ও শিল্প লবণ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। সরকারি গেজেট প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে আয়োডিনের অভাবজনিত রোগের বিদ্যমান অবস্থা জাতীয় জীবনে আয়েডিনযুক্ত লবণ গ্রহণের পরিমাপ, লবণ উৎপাদন, পরিশোধন,সরবরাহসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়সমূহ পর্যবেক্ষণে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ সেল গঠন করবে।

এ সেল থেকে আইনের উদ্দেশ্য পূরণে বিভিন্ন কর্মপরিকল্পণা গ্রহণ করা হবে। এ আইনের অধীনে জাতীয়, জেলা ও প্রান্তিক কমিটি নামে ৩টি কমিটি লবনে আয়োডিনযুক্ত করণের বিভিন্ন বিষয়ে কাজ করবেন। জাতীয় লবণ কমিটি লবণ আয়োডিনযুক্ত করণে আন্তর্জাতিক মান এবং জাতীয় স্বাস্থ্যর জন্য প্রয়োজনীয় মাত্রা নির্ধারণ করবে। মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর খাদ্যদ্রব্য তৈরিতে কমপক্ষে ৯৬ দশমিক ৯৯ ভাগ সোডিয়াম ক্লোরাইড, অনধিক শূণ্য পয়েন্ট ১ ভাগ পানিতে অদ্রবণীয় পদার্থ, কমপক্ষে ৩ দশমিক শূণ্যভাগ পানিতে দ্রবনীয় পদার্থ, উৎপাদন পর্যায়ে ৩০ থেকে ৫০ পিপিএম এবং খুচরা পর্যায়ে ২০ থেকে ৫০ ভাগ পিপিএম মাত্রার আয়োডিন, এবং জলীয় অংশের পরিমান সর্বোচ্চ ৬ দশমিক শূণ্য শতাংশ থাকবে হবে।

লবণ উৎপাদনকারী ব্যাক্তি প্রতিষ্ঠানকে সরাসরি লবণ কারখানায় প্রেরণের জন্য জাতীয়, জেলা ও প্রান্তিক লবণ কমিটি কার্যকর ব্যবস্থা নেবেন। ওই লবণ বিজ্ঞান ভিত্তিক সংরক্ষণ করা হবে। অপরিশোধিত লবণ এমন ভাবে পরিশোধন করতে হবে যেন উহার মৌলিক বৈশিষ্ট অক্ষুন্ন থাকে। পরিশোধিত লবণে মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর কিছুই থাকবে না। জাতীয় লবণ কমিটির সুপারিশে লবণ পরিশোধণাগার ও আয়োডিনযুক্তকারি কারখানার জন্য আয়োডিন সরবরাহ করবে। সেই ক্ষেত্রে সরকার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার পরামর্শ গ্রহণ করতে পারবে। এ আইনের অধীনে সরকার লবণ আমদানীর একটি নীতিমালা প্রণয়ন করবে। লবণ মৌসুমে অভ্যন্তরীন ভাবে উৎপাদিত লবেণে দেশের বাৎসরিক চাহিদার কম উৎপাদন হলে কেবলমাত্র সেই ক্ষেত্রে ভোজ্যলবণ উৎপাদন এবং চামড়া শিল্প বা রাসায়নিক কারখানার ব্যবহারের জন্য শিল্প লবণ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনে অপরিশোধিত লবণ আমদানী করা যাবে। এই আইনের অধীনে নিবন্ধন ছাড়া কেউ লবণ আমদানি করতে পারবে না। কুঠির শিল্প করপোরেশন লবণ উৎপাদনের নব কৌশল ও নিরাপদ উৎপাদন পন্থা উদ্ভাবন করবে। শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দেবে। চাষীরা লবণ চাষের কাজে নিয়োজিত থাকার ফলে আক্রান্ত রোগের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। লবণ চাষীদের এক বা একাধিক সংগঠন থাকবে। মৌসুমের পর লবণ শ্রমিকদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের কথাও বলা হয়েছে এ আইনে।

স্বচ্ছ এবং ফুডগ্রেড প্যাকেটে ভোজ্য লবণ বাজারজাতকরণে ২ মাস সময় প্রদার করা যাবে। ভোজ্য লবণের প্যাকেট ২৫০ গ্রাম, ৫০০ গ্রাম ১০০০ গ্রাম এবং ২০০০ গ্রাম হবে। টেবিল সল্ট হিসেবে ৫০গ্রাম, ১০০ গ্রাম, ২৫০ গ্রামের শক্ত মোড়কে বাজারজাত করা যাবে। লবণ কমিটির পরামর্শে লবণের দাম নির্ধারণ করা হবে। শিল্প লবণের প্যাকেট হলুদ রংয়ের হবে। প্যাকেটের আকার ও পরিমাপ বিধিতে নির্ধারিত হবে। লবণের সব ধরণের কার্যক্রমর জন্য নিবন্ধন বাধ্যতামূলক। নিবন্ধনের মেয়াদ হবে ২ বছর। মেয়াদ শেষ হওয়ার ৩০ দিন আগে নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে নির্ধারিত ফরমে নবায়নের জন্য আবেদন করতে হবে। বিধি না হওয়া পর্যন্ত সরকার গেজেট প্রজ্ঞাপন মূলে নিবন্ধন ফি নিবন্ধনের শর্ত এবং নবায়ন ফির হার নির্ধারণ করবে। বিধি না হওয়া র্পন্ত ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্প করপোরেশন প্রচলিত বিধি মোতাবেক নিবন্ধন প্রদান করা হবে।

চাষীদের কাছ থেকে অপরিশোধিত লবণ ক্রয় এবং পরিশোধন ও আয়োডিনুক্তকরণ বিক্রয় বিতরণ মজুদ,সরবরাহ ইত্যাদি সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করবে। যা পরিদর্শন ও পরিবীক্ষণের সময় দেখাতে হবে। তথ্যাদি রেজিষ্টারে লিপিবদ্ধ করা না হলে বা ভুল লিপিবদ্ধ করা হলে উক্ত কারখানার বিরুদ্ধে বিধি দ্বারা নির্ধারিত পরিমানে জরিমানা আরোপ করা যাবে। সরকারি ভাবে নিযুক্ত যে কোন ব্যক্তি লবণ সংক্রান্ত সকল তথ্য দেখতে পারবেন এবং কারখানা মালিকরা দেখাতে বাধ্য থাকবেন। সরকার একটি লবণ গবেষণা ইন্সটিটিউট স্থাপন করতে পারবে। ইন্সটিটিউটের কার্যক্রম শুরুর আগ পর্যন্ত সরকার যে কোন গবেষণাগারকে লবণ গবেষণাগার হিসেবে ঘোষণা করতে পারবে। আয়োডিনের অভাবজনিত রোগ সম্পর্কে হাল নাগাদ তথ্য সংগ্রহ এবং তদানুযায়ী করণীয় নির্ধারণের লক্ষে সরকারের সহায়তায় লবণ গবেষণা ইন্সটিটিউট দেশব্যাপী জরিপ কাজ পরিচালনা করতে পারবে।

সরকারের কাছ থেকে ক্ষমতা প্রাপ্ত ব্যক্তি লবণ পরিশোধন আয়োডিনযুক্তকরণ কারখানা ও গুদামে প্রবেশ পরিদর্শন, এবং বিনা নোটিশে তল্লাশী করতে পারবে। সব কাগজপত্র নথি পরীক্ষা করতে পারবে। ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ও প্যাকেটে লবণের পরিমান পরীক্ষা করতে পারবে। আইন বহি:র্ভূত যে কোন যন্ত্রপতির ব্যবহার পরিলক্ষিত হলে তা বাজেয়াপ্ত করতে পারবে। আইনে নির্ধারিত গুনগতমান নিশ্চিত না করে কেউ লবণ উৎপাদন করতে পারবে না। করলে ৫ বছরের কারাদণ্ড ২০ লঅখ টাকার অর্থ দণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। ভোজ্য লবণে আয়োডিনযুক্ত না করলে ৫ বছরের কারাদণ্ড ২০ লাখ টাকার অর্থদণ্ডে অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। মুদি দোকানী ও খুচরা বিক্রেতা এর আওতায় পড়বেন না। প্যাকেট বা ল্যাবেল ছাড়া ভোজ্য লবণ বিক্রি, প্রদর্শন, গুদামজাত, সরবরাহ বিতরণ করা যাবে না। করলে ৫ বছরের কারাদণ্ড ২০ লাখ টাকা জরিমান অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। একই বিধান অভোজ্য লবণের ক্ষেত্রেও রাখা হয়েছে।

প্যাকেটের গায়ে পণ্যের ওজন পরিমাণ উৎপাদন ও ব্যবহার বিধি ব্যাচ, নম্বর, সর্বোচ্চ খুচরামূল্য উৎপাদনের তারিখ প্যাকেটজাতকরণের তারিখ এবং মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ স্পষ্টভাবে উল্লেখ না করলে ২ বছরের জেল ও ৫ লাখ টাকা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। আয়োডিনযুক্ত না করার ফলে অন্যের জীবণ বিপন্ন হলে ৭ বছরের জেল ও ২৫ লাখ টাকার অর্থ দণ্ড অথবা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। দণ্ডের অর্থ ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তির পরিবারকে প্রদান করা হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসএস

  • সর্বশেষ
  • পঠিত