ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৫০ মিনিট আগে
শিরোনাম

যেভাবে জজ মিয়া নাটক

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ১০ অক্টোবর ২০১৮, ০১:৫১

যেভাবে জজ মিয়া নাটক

বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বহুল আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ভিন্ন খাতে নেয়ার চেষ্টা করেছিল। নোয়াখালীর সেনবাগের এক চা দোকান থেকে জজ মিয়া নামের এক ব্যক্তিকে পুলিশ আটক করে। তাকে সন্ত্রাসী বাহিনীর হোতা সাজিয়ে জেলে পাঠানো হয়। প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপা দিতে ওই জজ মিয়াকে দিয়ে হামলার কথা স্বীকার করানো হয়। এরপর তাকে জেলে রেখে সেখানে তার মাকে তদন্তকারী মাসে মাসে গোপনে টাকাও দিত। তবে এর ৩ বছর পর প্রমাণিত হয় সেটি ছিল তৎকালীন ৪ দলীয় জোট সরকারের নেতাদের ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা। পরবর্তীতে বর্তমান সরকারের আমলে মামলার নতুন করে তদন্তকারী কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়ার পর প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসে। এরপর জজ মিয়াকে অব্যাহতি দেয়া হয়। এর জন্য সিআইডির মামলার তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকতা সাবেক এসএস রুহুলসহ তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

২০০৫ সালে গ্রেপ্তার করা হয় জজ মিয়াকে। গ্রেনেড হামলার কয়েক মাস পর তার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে তাকে গ্রেফতার করে মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে নিয়ে আসে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। কার্যালয়ে এনে ক্রসফায়ার করে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে সাজানো জবানবন্দি দিতে বলা হয় তাকে। তার সঙ্গে তার পরিবারের সদস্যদের মেরে ফেলার হুমকি দেয় তৎকালীন সিআইডির কর্মকর্তারা। নিজের ও পরিবারের সদস্যদের জীবন বাঁচাতে সাজানো সাক্ষ্য দিতে রাজি হন তিনি। সিআইডির এক কর্মকর্তা তাকে একটি কাগজে জবানবন্দি লিখে দেন।

সেটি মুখস্থ করিয়ে জজ মিয়াকে গ্রেনেড হামলার ঘটনায় জড়িত বলে ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তি দেয়ায় সিআইডি। এর বিনিময়ে তার পরিবারকে মাসিক হারে টাকাও দিত তারা। দীর্ঘ কয়েক বছর কারাভোগসহ নানা নাটকীয়তার পর ২০০৮ সালের ১১ জুন আদালতে সিআইডি’র দাখিল করা চার্জশিটে ২২ জনকে আসামি করা হয়। অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় জজ মিয়াকে। তবে এখন জজ মিয়া কোথায় থাকেন নিশ্চিত করে বলতে পারে না কেউ। এমনকি তার নিরাপত্তার স্বার্থেই তাকে সাংবাদিকদের কাছ থেকেও দূরে রাখা হয়েছে।

জজ মিয়ার মা জোবেদা খাতুন বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতেই তার ছেলেকে ফাঁসানো হয়। আদালতে ‘জজ মিয়া নাটক’ সাজানোর বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, যেদিন তার ছেলেকে সিআইডি কার্যালয়ে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। ছেলের খোঁজ নিতে গেলে মামলার তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির রুহুল আমিন, আবদুর রশীদসহ অন্যরা তাকে (জোবেদা) বলেন, আপনার ছেলের বিষয়ে কোন চিন্তা করবেন না। সাক্ষ্য দেয়ার পর জজ মিয়াকে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়া হবে। যতদিন সাক্ষ্য শেষ না হচ্ছে, ততদিন আপনার সংসার চালাতে মাসে আমরা দুই হাজার টাকা করে দেব। ৬৫ বছর বয়সী জোবেদা খাতুন বলেন, এভাবে ছয় মাসে সিআইডি অফিসে গিয়ে মোট সাড়ে ১২ হাজার টাকা নিয়েছেন। শেষ মাসে সিআইডি ৫০০ টাকা বেশি দিয়েছিল। কিন্তু সপ্তম মাসে টাকা আনতে যাওয়ার আগে আমার মেয়ে খোরশেদা গণমাধ্যমের কাছে দুই হাজার টাকা করে নেয়ার কথা বলে দেয়। এ কারণে সিআইডি আর আমাকে টাকা দেয়নি।

মামলার তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির রুহুল আমিন জানান, গণমাধ্যমকে বলে রিজিক হারিয়েছ। আর টাকা পাবে না। গ্রেনেড হামলা মামলায় জোবেদা খাতুন ১০২তম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন। এ বিষয়ে মামলার এক তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, যদিও জজ মিয়ার ঠিকানা আমার জানা নাই। তবে জানলেও আমরা তার অবস্থান সাংবাদিকদের জানাব, তবে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, জজ মিয়া গাজীপুরে থাকেন। মাঝে মাঝে নোয়াখালীতে নিজ গ্রামে যান। জজ মিয়াকে অব্যাহতির পর ২০১১ সালের আরও ৩০ জনসহ মোট ৫২ জন আসামির তালিকায় যোগ করে সম্পূরক অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করে সিআইডি।

জজ মিয়া বলেন, কয়েক বছর আগে ঋণ করে ও কিস্তিতে সাড়ে তিন লাখ টাকায় একটি প্রাইভেট কার কিনি। এ প্রাইভেট কারের অবস্থা এখন খুব খারাপ। এখন নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক এলাকায় পাঁচ হাজার টাকা ভাড়ায় একটি টিনশেড বাসায় থাকি। দুই রুমের এ বাসায় আমি ছাড়াও থাকেন ছোটবোন খোরশেদা (১৯), ছোটভাই সাইফুল ইসলাম (১৭) ও বৃদ্ধ মা জোবাদা খাতুন। চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে আমি মেজো। বড় দুই ভাই আলাদা থাকেন। চারজনের সংসার আমাকে চালাতে হচ্ছে। মামলায় জড়িয়ে পড়ায় মা আমার জন্য গ্রামের ভিটেমাটি বিক্রি করে দেন। এ কারণে বড় দুই ভাই আমার ওপর ক্ষুব্ধ। তিনি বলেন, টাকার অভাবে বোনটাকে বিয়ে দিতে পারছি না। মা খুব অসুস্থ। তার কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে। হার্টে সমস্যা, রক্তচাপ খুব বেড়ে গেছে। সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসা শেষে তাকে বাসায় এনেছি। তার পেছনে সপ্তাহে ৫-৭ হাজার টাকা ব্যয় হচ্ছে।

উল্লেখ্য ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে ২০০৫ সালে জজ মিয়াকে আটক করে বহুল আলোচিত ‘জজ মিয়া নাটক’ সাজানো হয়। ২০০৮ সালে তাকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। পরে আদালত এ মামলা থেকে তাকে অব্যাহতি দেন। ২০০৯ সালে মুক্তি পান জজ মিয়া। পরে ৫২ জনকে আসামি করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয়া হয়। জজ মিয়া ও তার মা-বোনকে সে সময় এ মামলায় সাক্ষী করা হয়।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত