ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩১ মিনিট আগে
শিরোনাম

আপাতত হচ্ছে না এমপিওভুক্তি

আপাতত হচ্ছে না এমপিওভুক্তি

বর্তমান সরকারের চলতি মেয়াদে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ আইন বা রাষ্ট্রের সংবিধান অনুসারে আগামী বছরের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে জাতীয় সংসদের নির্বাচন শেষ করতে হবে। সে অনুসারে চলতি মাসেই ক্ষমতাসীন সরকার ক্ষমতা হস্তান্তর করবে নির্বাচনকালীন সরকারের কাছে। নির্বাচনকালীন সরকার শুধু রাষ্ট্রের রুটিন দায়িত্ব পালন করবে। সে সরকার কোনো ধরনের নীতিনির্ধারণী বা গুরুত্বপূর্ণ বা অর্থসম্পর্কিত সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। এটিই সংবিধানের নির্দেশনা।

সে অনুযায়ী, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে সরকার বা শিক্ষা মন্ত্রণালয় যদি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত ঘোষণা না করে, তবে এ সরকারের চলতি মেয়াদে আর এমপিভুক্তি হবে না। বলেই মনে করছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা। গত মাসের মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এমপিওভুক্তির জন্য প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে সরেজমিন পরিদর্শন ও প্রতিবেদন প্রণয়নের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত এমপিওর জন্য আবেদন করা প্রতিষ্ঠানের তালিকা ধরে সরেজমিন পরিদর্শনের কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। দিলেও এত অল্প সময়ের মধ্যে তা সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে অতি বিশেষ কোনো ঘোষণা ছাড়া এটি সম্ভব নয়। তাই সরকারের চলতি মেয়াদে এমপিওভুক্তি হচ্ছে না এমনটি নিশ্চিত করে বলা যায়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রণালয়ের হাতে বেসরকারি স্কুল-কলেজ-মাদরাসা ও কারিগরি মিলে মোট ৯ হাজার ৪৯৮টি আবেদন জমা পড়েছে। এগুলোকে যাচাই-বাছাই এবং সর্বশেষে যোগ্যদের তালিকা যাচাই-বাছাইকৃত প্রতিষ্ঠান সরেজমিন পরিদর্শন করার পর এমপিওভুক্তির জন্য নির্বাচন করা হবে। এর পরই চূড়ান্ত তালিকা পাঠানো হবে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে। সেখানেই সিদ্ধান্ত হবে কোন প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হবে।

আট বছর বন্ধ থাকার পর চলতি অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দ না রাখা হলেও ‘বিশেষ ও থোক বরাদ্দ’ থেকে নতুন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির ঘোষণা দেয়া হয় গত জুনে চলতি অর্থবছরের বাজেট সংসদে উত্থাপনের পর থেকে। এ লক্ষ্যে গত ১৪ জুন জারি করা এমপিও নীতিমালা বা জনবল কাঠামো-২০১৮ তৈরি করা হয়। যদিও এ নীতিমালা নিয়ে সব শিক্ষক সংগঠনের বিভিন্ন বিষয়ে ও শর্ত নিয়ে আপত্তি রয়েছে।

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিও দিতে দু’টি কমিটি গঠন করে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। গত তিন মাসে যাচাই-বাছাই কমিটি বৈঠক করার জন্য দুই দফা তারিখ ঘোষণা করলেও পরে তা বাতিল করা হয়। কমিটির প্রধান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক) জাবেদ আহমেদ বলেন, কমিটির বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে আবেদন যাচাই-বাছাই করতে। আমরা সে কাজই করছি। এমপিও দেয়া হবে সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে।

গত ১৪ জুন জারি করা এমপিও নীতিমালা বা জনবল কাঠামোতে এমপিভুক্তির জন্য যেসব শর্তের কথা বলা হয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে শিক্ষকদের নিয়োগে বয়সসীমা ৩৫ বছর নির্ধারণ করা। নীতিমালা অনুযায়ী, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য ১০০ নম্বরের গ্রেডিং করা হবে। তার মধ্যে অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতিতে ২৫ নম্বর (প্রতি দুই বছরের জন্য ৫ নম্বর, ১০ বা তার চেয়ে বেশি বয়স এমন প্রতিষ্ঠানের জন্য ২৫ নম্বর), শিক্ষার্থীর সংখ্যার ওপর ২৫ নম্বর (কাম্য সংখ্যার জন্য ১৫ নম্বর, এরপর ১০ শতাংশ বৃদ্ধিতে ৫ নম্বর), পরীক্ষার্থীর সংখ্যার জন্য ২৫ নম্বর (কাম্য সংখ্যার ক্ষেত্রে ১৫ ও পরবর্তী প্রতি ১০ জনের জন্য ৫ নম্বর), পাবলিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণের জন্য ২৫ নম্বরের (কাম্য হার অর্জনে ১৫ নম্বর ও পরবর্তী প্রতি ১০ শতাংশ পাসে ৫ নম্বর) গ্রেডিং করা হবে।

বেসরকারি কলেজের প্রভাষকদের এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে বিষয়ভিত্তিক ২৫ জন শিক্ষার্থী বাধ্যতামূলক থাকতে হবে। তবে বিজ্ঞান বিভাগে ১৫ জন শিক্ষার্থী থাকলেও চলবে। আর নতুন জনবল কাঠামোতে সৃষ্ট পদের শিক্ষক-কর্মচারীদের বকেয়া বেতনভাতা দেয়া হবে না। কিন্তু নতুন পদে এমপিওভুক্ত করা হবে। নতুন জনবল কাঠামোর বাইরে কর্মরতদের পদ শূন্য হলে নতুন করে নিয়োগ দেয়া যাবে না। এ ক্ষেত্রে যারা এমপিওভুক্ত নন, কিন্তু বৈধভাবে নিয়োগ পেয়েছেন, তাদের নতুন পদে পদায়ন করতে হবে বলে নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়। এমপিওভুক্তির দাবিতে অনশনকারী নন-এমপিও শিক্ষক নেতা নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের অধ্যক্ষ মাহমুদন্নবী ডলার বলেন, আমাদের দাবি ছিল স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সব ক’টি প্রতিষ্ঠানকেই এমপিওর আওতায় নেয়া। প্রয়োজনে ধাপে ধাপে করা যেতে পারে। তবে সবগুলোর গেজেট একবারই করা যেতে পারে। বেতনও ধাপে ধাপে দেয়া হোক। কারণ ১৭-১৮ বছর ধরে বহু শিক্ষক বিনা বেতনে চাকরি করছেন। তাদের বয়স শেষের দিকে। অন্যথায় এসব শিক্ষক ভয়ানক ক্ষতির মুখে পড়বেন।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত