ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

১৫ আগস্টের স্মৃতিচারণ

‘আমি যদি বিধ্বস্ত দেশ গড়তে পারি, তোরা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি গড়তে পারবি না?’

  কামরুল ইসলাম

প্রকাশ : ১৫ আগস্ট ২০১৭, ১৩:৩১  
আপডেট :
 ১৫ আগস্ট ২০১৭, ১৭:০১

‘আমি যদি বিধ্বস্ত দেশ গড়তে পারি, তোরা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি গড়তে পারবি না?’

বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেতা ফারুক। পুরো নাম আকবর হোসেন পাঠান দুলু হলেও তিনি কোটি ভক্তের কাছে ফারুক নামেই সুপরিচিত। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী এই অভিনেতা অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে। স্বাধীন দেশের চলচ্চিত্রের উত্থান থেকেই ঢালিউডের সঙ্গে জড়িত তিনি। তার স্মৃতিতে জাতীয় শোক দিবস তথা ১৫ আগস্ট কেমন ছিলো? বাংলাদেশ জার্নালকে জানালেন সেই ইতিহাস...

ফারুক বলেন, ওই রাতে সচরাচর যা করি, নিজের কাজ-কর্ম করেছি। উত্তরায় ভাই-বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিয়েছি। তার পর রাতে উত্তরা থেকে এয়ারপোর্ট হয়ে ফিরছিলাম বাসার দিকে। ক্যান্টনমেন্ট এলাকার পাশ দিয়ে যখন যাচ্ছিলাম, তখন রাত প্রায় ১২টার বেশি বাজে। হঠাত চোখে পড়লো কয়েকটা ট্যাংক যাচ্ছে। এইটুকু আমার স্পষ্ট মনে আছে। তখন আমার কাছে বিষয়টা অবাক লেগেছে যে, ট্যাংকগুলো কোথায় যায়?

বাসায় আসার পর কিছুটা জানতে পারি সুজা খন্দকারের কাছ থেকে। তিনি আমার ভাইয়ের চেয়েও বেশি। আমরা তার সঙ্গেই থাকতাম। বড় ভাইয়ের মতো হলেও বন্ধুর মতো সম্পর্ক ছিলো তার সঙ্গে। তো তাকে বললাম, বুঝলাম না রে, ট্যাংক কেন দেখলাম? তখন উনি বললো, ‘আগামীকাল (১৫ আগস্ট) বঙ্গবন্ধু আসবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেজন্যই হয়ত এগুলো নিয়ে যাচ্ছে’। কিন্তু আমার মনে হতে লাগলো, একটা অনুষ্ঠানে আসলে সেখানে ট্যাংক কেন লাগবে? এখন বুঝি, এটা তাদের বড় পরিকল্পনার অংশ ছিলো। আমার একটা প্রশ্নের উত্তর খুব জানতে ইচ্ছে করে, রাতের ১২টা বাজে আমার মত একজন লোক রাস্তা দিয়ে ট্যাংক যেতে দেখলো, তাহলে দেশের রক্ষীবাহিনী কোথায় ছিলো? তাদের চোখ কোথায় ছিলো?

পর দিন সকালবেলা যখন শুনলাম, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে, আমার তো বিশ্বাসই হয়নি। সুজা খন্দকারই আমাকে ধাক্কা দিয়ে জাগিয়ে খবরটি জানিয়েছিলো। উনি কাঁদতে কাঁদতে বললো, ‘বঙ্গবন্ধুকে মেরে ফেলছে!’ আমি শুনে কিংকর্তব্যবিমুড় হয়ে যাই। বিছানা থেকে নামতে গিয়ে পড়ে গিয়েছিলাম। এমন কিছু তো কল্পনাই করতে পারিনি। দ্রুত রেডিও চালু করলাম। তখন শুনি, হত্যাকারীরা নিজেরাই বলছে- আমরা শেখ মুজিবকে হত্যা করেছি।

আমরাও তাদের টার্গেটে ছিলাম। আজকের সময়ের কেউ হয়ত সেটা জানবেও না, বুঝবেও না। আর আমরা এগুলো বললেও হয়ত কেউ মানতে চাইবে না। আমাকেও মেরে ফেলার জন্য বেশ কয়েকবার চেষ্টা করা হয়েছিলো। কিন্তু এসব কাউকে বলি না। আজকাল তাকালে দেখি, প্রধানমন্ত্রীর পাশে কত মানুষ ঘুরঘুর করে। তখন বড় ভয় লাগে। কারণ, বঙ্গবন্ধুকেও কিছু কাছের লোকই মেরেছিলো। মনে হয়, তখন ছিলো একজন খন্দকার মোস্তাক। কিন্তু এখন হাজার হাজার মোস্তাক ছড়িয়ে রয়েছে। দিন পাল্টে গেছে বলে আমরা সঠিকভাবে আছি হয়ত। ইনশাআল্লাহ্‌, সঠিক পথেই থাকবো। আমি অন্য কিছু না, আমি আমার বঙ্গবন্ধুর আদর্শের মানুষ।

চলচ্চিত্রের জন্য বঙ্গবন্ধুর অবদান অসীম। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর তো বঙ্গবন্ধু বলেই দিয়েছিলেন যে, ‘আমি যদি বিধ্বস্ত একটি দেশ গড়তে পারি, তোরা একটি চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি গড়তে পারবি না? যাও, গিয়ে বানাও’। চলচ্চিত্র তো হয়েছেই বঙ্গবন্ধুর জন্য। ১৯৫৭ সালে তিনিই তো সরকার থেকে অনুমোদন নিয়েছিলেন এফডিসির জন্য। উনারই প্রতিষ্ঠান এই এফডিসি। উনার প্রতিষ্ঠানকে সুন্দর রাখতে হবে এবং এই কাজটি করবে বর্তমানের চলচ্চিত্র পরিবার। এই পরিবারই এফডিসি ঠিক রাখার জন্য জীবনের শেষ পর্যন্ত কাজ করে যাবে।

কেআই/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত