ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

জলের খোঁজে অষ্টগ্রামে

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ২৬ অক্টোবর ২০১৮, ১৫:২২

জলের খোঁজে অষ্টগ্রামে

কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলা হাওর-বেষ্টিত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন একটি উপজেলা। এর চারদিকেই পানি। এমনকি শীতের সময়েও এখানে যেতে হলে নৌপথের সাহায্য নিতে হয়। এমন একটি স্থানে বর্ষাকাল কতটা সুন্দর আর উপভোগ্য হয় নিজে গিয়ে সেটা দেখে নিন। তবে শুধু বর্ষায় নয়, অষ্টগ্রাম যাওয়া যায় যে কোনও সময়। বর্ষার আগে শীতে অষ্টগ্রামে ঘুরতে কেমন লাগে, সেটা আপনি অভিজ্ঞতা নিতে চাইতেই পারেন। তবে অষ্টগ্রামে যাবার সেরা সময় হল বর্ষা এটা নিয়ে কোন দ্বিমত নেই।

অষ্টগ্রাম উপজেলার উত্তরে কিশোরগঞ্জ জেলার মিটামইন উপজেলা ও ইটনা উপজেলা, দক্ষিণে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলা, পূর্বে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলা ও হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলা, পশ্চিমে কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর উপজেলা ও নিকলী উপজেলা।

কোনও এক ছুটির দিনে সকালে গুলিস্তান থেকে বাসে করে রওনা দিতে পারেন কুলিয়ারচরের উদ্দেশে। ঘণ্টা আড়াই পরে কুলিয়ারচর পৌঁছাতে পারবেন। পৌঁছে আগে থেকে রিজার্ভ করা নৌকায় উঠতে পারেন, আবার ঘাট থেকে কথা বলে ভাড়া করে নিতে পারেন। বড় নৌকাটি মেঘনা নদী পাড়ি দিয়ে ছোট নদী আর হাওর পেরিয়ে যেতে থাকবে। দুই পাশে চর, লোকালয় মাঝে ছোট্ট নদী বেয়ে সবকিছু ফেলে নৌকা এগোতে থাকবে। সবাই মিলে তখন নৌকার ছাদের উঠে প্রকৃতি দেখতে পারেন। শীতকাল হলে চারপাশে একটু পরপর দেখা মিলবে পাখির সমারোহ। আপনার ক্যামেরা ব্যস্ত হয়ে পড়তে পারে পাখি আর প্রকৃতির ছবি তোলায়। আবার নৌকার ছাদে গোল হয়ে বসে গান শুরু করতে পারেন। বর্ষায় গেলে পাবেন খোলা হাওরে ভিজে নেবার সুযোগ। একটু পরপর ছোট্ট একেকটা দ্বীপের মতো আপনার চোখে পড়বে। সেখানে অনেক বাড়িঘর। সেগুলো আবার বেশ শক্তপোক্ত এবং রঙিন। বোঝা যায়, এখানকার লোকজন বেশ অবস্থা-সম্পন্ন। এসব দ্বীপে যাওয়ার একমাত্র উপায় হলও নৌকা বা ট্রলার। কয়েকটিতে দেখতে পাবেন সাইক্লোন/বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র। প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর অষ্টগ্রাম পৌঁছাতে পারেন। বিশাল হাওরের মাঝে মাঝে এরকম এক একটা দ্বীপ।

অষ্টগ্রাম সম্পর্কে যদি ভেবে থাকেন যে এটা গণ্ডগ্রাম, তাহলে ভুল হবে। বিদ্যুৎ, মোবাইল নেটওয়ার্ক, মোবাইলে ইন্টারনেট, কমবেশি সবই পেয়ে যাবেন আপনি। আর যদি আপনি ক্যাম্পিং করতে চান, বিশেষ করে যদি হয় শীতকাল, তাহলে নৌকা থেকে নেমে প্রথমে থানায় রিপোর্ট করতে হবে আপনাকে। ক্যাম্পিং করতে পুলিশকে আগেই জানিয়ে রাখলে বিপদে সাহায্য নেওয়া যায়। আর বাইরে থেকে গেলে বা ঢাকা থেকে ঘুরতে গেলে থানা অনুমতি দেবে ক্যাম্পিং করার।

অষ্টগ্রামে প্রচুর দুধ পাওয়া যায়। এখানকার পনিরও বিখ্যাত। গরুর খাঁটি দুধের চা খেতে খেতে আর আড্ডা দিতে দিতে প্রায় অনেক সময় চলে যেতে পারে। হাতে সময় থাকলে আপনি কুতুব শাহ মসজিদ দেখতে যেতে পারেন। আপনি রিকশা নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন কুতুব শাহ মসজিদ। অনেক পুরনো মসজিদ এ কুতুব শাহ। ধারণা করা হয়, ১৬ শতকের শেষদিকে বা ১৭ শতকের প্রথম দিকে একজন বুজুর্গ কুতুব শাহ মসজিদটি তৈরি করেন। পাঁচ গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদটির কারুকাজ অসাধারণ। এত বছর পরেও মসজিদটি মোটামুটি ভালো অবস্থাতেই আছে।

ওইদিকে যাবার সবচেয়ে ভালো উপায় হল ট্রেনে যাওয়া। প্রতিদিন সকাল ৭টায় এগারসিন্দুর প্রভাতি (বুধবার বন্ধ) ছাড়ে কিশোরগঞ্জের উদ্দেশে। এতে উঠে কুলিয়ারচর নেমে পড়ুন। ভাড়া ১২০ টাকা। এ ছাড়া গুলিস্তান ফুলবাড়িয়া থেকে বিআরটিসি বাসে করেও কুলিয়ারচর যাওয়া যায়। ভাড়া ২০০ টাকা। যারা ভৈরব হয়ে যেতে চান, তারা ভৈরব নেমে সিএনজিতে করে কুলিয়ারচর যাবেন। শেয়ারে ভাড়া নেবে জনপ্রতি ৪০ টাকা। কুলিয়ারচর নেমে একটা রিকশা নিয়ে চলে যান লঞ্চঘাট। এখান থেকে প্রতিদিন সকাল ৬টা, ৮টা, ৯টা, ১১টা এমনি করে ৩টা পর্যন্ত লঞ্চ ছেড়ে যায় অষ্টগ্রাম। ভাড়া ১০০ টাকা। সময় লাগবে সাড়ে তিন ঘণ্টা।

থাকার বেশ কটি অপশন আছে। শীতকাল হলে নিজেরা টেন্ট নিয়ে ক্যাম্পিং করতে পারেন। বর্ষায় ভালো হবে জেলা পরিষদ ডাকবাংলো। কেয়ারটেকার: ০১৯১৪-৯৭৫৩৮৯। আগে কথা বলে বুকিং দিতে পারেন। ভাড়া ৩০০-১৫০০ টাকা রুমের অবস্থার উপরে নির্ভর করে। এ ছাড়া বাজারে দুটি সাধারণ মানের হোটেল আছে, ভাড়া ১০০-২০০ টাকা।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত