ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৯ মিনিট আগে
শিরোনাম

অনিন্দ্য সুন্দর ‘মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত’

  নাজমুল হোসেন

প্রকাশ : ০৯ অক্টোবর ২০১৮, ০০:২৮  
আপডেট :
 ০৯ অক্টোবর ২০১৮, ০০:৩১

অনিন্দ্য সুন্দর ‘মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত’

মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলায় অবস্থিত। কিছু বছর আগেও মাধবকুণ্ড ছিল বাংলাদেশের জলপ্রপাত প্রেমী পর্যটকদের কাছে একমাত্র আকর্ষণ। বর্তমানে বাংলাদেশে আরো বেশ কিছু ঝর্ণা আবিষ্কৃত হয়েছে। তবু পর্যটকদের কাছে মাধবকুণ্ড ঝর্ণার আবেদন একটুও কমেনি। তাই সরকারী উদ্যোগে এখানে গড়ে উঠেছে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের রেস্টহাউজ ও রেস্টুরেন্ট আর সম্পূর্ণ এলাকাকে নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক। অনিন্দ্য সুন্দর এ জলপ্রপাত প্রায় ১৬২ ফুট উঁচু আর মাধবকুণ্ড ঝর্ণা থেকে ১৫-২০ মিনিট হাঁটলে পরিকুন্ড ঝর্ণা নামে আরেকটি ঝর্ণা চোখে পড়ে। এছাড়া এখানে আছে দিগন্তজোড়া চা বাগান, খাসিয়া পল্লী, কমলা, লেবু, সুপারি ও পানের বাগান আবার কোথাও কোথাও জুম চাষেরও দেখা মিলবে।

যাওয়ার সময়:

ভ্রমণের জন্যে শীতকাল উপযুক্ত সময় হলেও ঝর্ণাতে শীতকালে তেমন পানি থাকে না। যদি সেই দিক চিন্তা করেন তাহলে বর্ষা বা তার আশেপাশের সময়ে মাধবকুণ্ড ঝর্ণা ভ্রমণ করলে তখন ঝর্ণায় অনেক পানি থাকবে।

মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক যাবার উপায়: মাধবকুণ্ড ঝর্ণায় যেতে পারবেন অনেক ভাবেই। যদি মাধবকুণ্ড যাওয়াই প্রথম উদ্দেশ্য থাকে তাহলে দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে প্রথমে মৌলভীবাজার জেলায় আসতে হবে।

ঢাকা থেকে: ঢাকা থেকে মৌলভীবাজার গামী বা মৌলভীবাজার হয়ে সিলেট গামী যে কোন বাসে আসতে পারবেন (ভাড়া ৩৫০-৪২০ টাকা, সময় লাগবে ৪-৫ ঘণ্টা)। এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে সুবিধা হলো আপনি মৌলভীবাজার এর কুলাউড়া নেমে যেতে পারবেন। ঢাকা থেকে বিভিন্ন আন্তঃনগর ট্রেন মৌলভীবাজার হয়ে সিলেট যায়। পারাবত, উপবন ও জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনে মৌলভীবাজার এর কুলাউড়া স্টেশনে নেমে যেতে হবে আপনার (শ্রেণিভেদে ভাড়া ১৭০ – ৮০০ টাকা, সময় লাগবে ৬-৭ ঘণ্টা)।

কুলাউড়া স্টেশন থেকে কাঠালতলী বাজার হয়ে মাধবকুণ্ড যেতে হবে। কুলাউড়া থেকে মাধবকুণ্ডের দূরত্ব ৩৫ কিলোমিটার। এই ক্ষেত্রে আপনি রিসার্ভ সিএনজি (৪০০-৬০০) নিয়ে মাধবকুণ্ড যেতে পারবেন অথবা কুলাউড়া থেকে লোকাল সিএনজি দিয়ে কাঠালতলী বাজার যেতে হবে। সেখান থেকে রিসার্ভ সিএনজি (১৫০-১৮০) টাকা বা লোকাল সিএনজি (জনপ্রতি ২০-২৫) টাকা ভাড়া দিয়ে মাধবকুণ্ড থেকে পারবেন।

মৌলভীবাজার থেকে মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক: মৌলভীবাজার থেকে মাধবকুণ্ড যাবার উপায় দুইভাবে, হয় আপনি সিএনজি/জীপ/মাইক্রোবাস রিসার্ভ করে নিতে হবে। নয়তো বড়লেখা গামী কোন লোকাল বাসে উঠে কুলাউড়া পার হয়ে বড়লেখার আগেই কাঁঠালতলা বাজারে নেমে যাবেন। সেখান থেকে রিজার্ভ/লোকাল সিএনজি নিয়ে যেতে পারবেন মাধবকুণ্ড।

সিলেট থেকে মাধবকুণ্ড: সিলেট থেকে মাধবকুণ্ড যেতে চাইলে কদমতলী বাস স্ট্যান্ড থেকে বড়লেখা হয়ে যে বাস কুলাউড়া যায় সেই বাসে উঠে যেতে পারেন অথবা বড়লেখা চলে আসবেন। বড়লেখা থেকে রিসার্ভ সিএনজি দিয়ে মাধবকুণ্ড যেতে পারবেন অথবা বড়লেখা থেকে লোকাল সিএনজি দিয়ে কাঁঠালতলী বাজার এসে সেখানে থেকে রিসার্ভ/লোকাল সিএনজি তে করে মাধবকুণ্ড যেতে পারবেন।

শ্রীমঙ্গল থেকে মাধবকুণ্ড: শ্রীমঙ্গল থেকে মাধবকুণ্ড যেতে চাইলে সরাসরি সিএনজি/জীপ রিসার্ভ করে যেতে পারবেন। অথবা বড়লেখা গামী কোন লোকাল বাসে করে বড়লেখার আগে কাঁঠালতলা বাজারে নেমে যেতে হবে। সেখান থেকে রিসার্ভ/লোকাল সিএনজি দিয়ে মাধবকুণ্ড যাওয়া যায়।

মাধবকুণ্ড থেকে প্রায় অর্ধ কিলোমিটার পথ হেটে গেলেই মাধবকুণ্ড ঝর্নার দেখা মিলবে। তার আগে অবশ্য ১০ টাকা টিকেট মূল্য দিয়ে পর্যটন এলাকায় প্রবেশ করতে হবে। আর মাধবকুণ্ড ঝর্ণার কাছেই পরিকুণ্ড নামে আরো একটি ঝর্না আছে। ঝিরি ধরে ১০-১৫ মিনিট হেঁটে গেলেই সেই ঝর্ণার দেখা পাওয়া যাবে। এছাড়া মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক এর চারপাশে ঘুরে দেখতে খারাপ লাগবেনা। চাইলে দিনের পুরোটা সময় এইখানে ব্যয় করতে পারবেন।

কোথায় থাকবেন: মাধবকুণ্ডে থাকার জন্য জেলা পরিষদের ২টি বাংলো ও ২টি আবাসিক হোটেল রয়েছে। অগ্রিম বুকিং দিয়ে থাকতে পারবেন সেখানে। তবে সবচেয়ে ভালো হয় সিলেট, মৌলভীবাজার বা শ্রীমঙ্গলে রাত্রি যাপন করলে এতে পরদিন যেকোনো জায়গায় আপনার যাত্রা সহজ হবে। আর সেসব জায়গায় থাকার অনেক ব্যবস্থা আছে। আপনি আপনার পছন্দমত হোটেল বা কটেজে রাত্রিযাপন করতে পারবেন।

কোথায় খাবেন: মাধবকুণ্ডে মাঝারি মানের রেস্টুরেন্ট আছে তবে সেখানে খাবারের দাম একটু বেশী। তাই প্রয়োজনে নিজেদের খাবার বাইরে থেকে কিনে নিয়ে যেতে পারেন কিংবা সিলেট ফিরে জিন্দাবাজার এলাকায় পানসী, পাঁচ ভাই কিংবা পালকি রেস্টুরেন্টের প্রায় ৩০ রকম ভর্তা চেখে দেখতে পারেন। মৌলভীবাজার বা শ্রীমঙ্গল শহরেও অনেক মানের খাবার হোটেল আছে। আপনার পছন্দমত কোন হোটেল থেকে খেয়ে নিতে পারবেন।

আশেপাশে দর্শনীয় স্থান: মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত ছাড়াও মৌলভীবাজারের আরও কিছু দর্শনীয় স্থানে ভ্রমণ করতে পারেন। আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনা সেইভাবেই গুছিয়ে নিতে পারেন। কত সময়ের জন্যে যাচ্ছেন, কি কি দেখবেন তা হিসেব করেই সে পরিকল্পনা করতে পারেন। মৌলভীবাজার জেলার সুন্দর জায়গা গুলোর মধ্যে লাউয়াছড়া উদ্যান, চা বাগান, হামহাম ঝর্ণা, বাইক্কা বিল, মাধবপুর চা বাগান ও লেক, নবাব বাড়ি, হাকালুকি হাওর, মনিপুরী পল্লী সহ আরও নানা স্থাপনা ঘুরে দেখতে পারেন।

মাধবকুণ্ড ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা: কম খরচে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত ভ্রমণ করতে চাইলে ট্রেন ও লোকাল সিএনজি দিয়ে যাতায়াত করতে পারবেন। খরচ কমাতে দলগত ভাবে ঘুরতে পারেন, টিমে সদস্য সংখ্যা যেন সিএনজি কতজন বসবেন সে অনুযায়ী হয়। মাধবকুণ্ড একদিনেই ঘুরে দেখা সম্ভব, আগের রাতে রওনা দিয়ে সারাদিন ঘুরে রাতে আপনার গন্তব্যে ফিরে যেতে যান। স্থানীয় যাতায়াত এর জন্যে ভাড়া দরদাম করে নিবেন। টুরিস্ট দেখলে অতিরিক্ত টাকা চায়। সিজনে ও ছুটির দিনে গেলে সিএনজি/জিপ ভাড়া একটু বেশি লাগবে। মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের উত্তাল রূপ দেখার সময় বর্ষা কালেই। ঝর্ণার আশেপাশের পাথর অনেক পিচ্ছিল, হাটা চলায় সাবধান থাকবেন। নোটিশ বোর্ডে যা লিখা আছে তা পালন করুন। জলপ্রপাতের নিচে অনেক গভীর, ভুলেও সেখানে যাবেন না। বর্ষায় অনেক পানি থাকে তাই ঝিরিতে অনেক স্রোত, সাবধান থাকবেন। ঝর্ণার পানিতে গোসল করলে আগেই অতিরিক্ত জামাকাপড় নিয়ে নিন। যে কোন বিষয়ে স্থানীয় মানুষের সহযোগিতা নিন।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত