ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

আমন্ত্রণ নয়, বিএনপির উদ্যোগেই জাতিসংঘে ফখরুল

  নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৩:২১  
আপডেট :
 ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৩:২৩

আমন্ত্রণ নয়, বিএনপির উদ্যোগেই জাতিসংঘে ফখরুল
জাতিসংঘ সদর দপ্তর থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সফর জাতিসংঘ মহাসচিবের আমন্ত্রণে বলে তার দলের নেতাদের পক্ষ থেকে দাবি করা হলেও বিশ্ব সংস্থাটির দপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপির উদ্যোগেই এই বৈঠক হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকালে (নিউ ইয়র্ক সময়) জাতিসংঘ সদর দপ্তরে বিশ্ব সংস্থাটির রাজনীতি বিষয়ক সহকারী মহাসচিব মিরোস্লাভ জেনকার সঙ্গে বৈঠক করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৈঠকে বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিরোধী দলকে দমন-পীড়নের অভিযোগ এবং দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে আলোচনা করেন বিএনপি মহাসচিব।

এ বছরেরর শেষে অনুষ্ঠেয় একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে দশম সংসদ নির্বাচন বয়কটকারী বিএনপির মহাসচিবের এই সফর দেশেও রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার সৃষ্টি করে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে বৈঠক করতে মির্জা ফখরুল নিউ ইয়র্ক গেছেন বলে খবর ছড়ালেও তার বৈঠকটি হয়েছে একজন সহকারী মহাসচিবের সঙ্গে।

জাতিসংঘে পদমর্যাদায় আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেলেরও পরে সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল বা সহকারী মহাসচিবদের অবস্থান। পদমর্যাদায় জাতিসংঘ মহাসচিবের পরে রয়েছেন একজন উপ মহাসচিব। তার নিচে রয়েছেন বর্তমানে ২১ জন আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল। এই আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেলদের সহায়তায় রয়েছেন বিভাগভিত্তিক অনেক সহকারী মহাসচিব।

বিরোধপূর্ণ রাজনৈতিক দলগুলোকে সমঝোতায় আনতে ২০১৩ সালে জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিবের উদ্যোগে ঢাকায় এসেছিলেন তৎকালীন একজন সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো। তিনি দফায় দফায় বৈঠক করলেও ব্যর্থ হয়ে ফিরে যান। এরপর বিএনপির বর্জনের মধ্যে নির্বাচন করে ক্ষমতায় থেকে যায় আওয়ামী লীগ।

জেনকার সঙ্গে বৈঠকে ফখরুলের সঙ্গে ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল এবং লন্ডন থেকে আসা সহ-আন্তর্জাতিক সম্পাদক হুমায়ূন কবীর।

বৈঠক শেষেই বিএনপি মহাসচিব ওয়াশিংটন ডিসির উদ্দেশে রওনা হন। যাওয়ার আগে বৈঠকের ফলাফল নিয়ে স্থানীয় সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, একদিনের বৈঠকে কী ফল জানা সম্ভব?

ফখরুল বলেন, মহাসচিবের আমন্ত্রণে এ বৈঠকে এসেছিলাম। আসন্ন নির্বাচনসহ বাংলাদেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয়েছে। খালেদা জিয়ার সাথে সরকারের চরম বৈরী আচরণের প্রসঙ্গও স্থান পায় এ বৈঠকে।

এই বৈঠক নিয়ে যোগাযোগ করা হলে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র ফারহান আজিজ হক এক ই-মেইল বার্তায় বলেন, বিএনপির অনুরোধে সহকারী মহাসচিব মিরোস্লাভ জেনকা বিএনপি মহাসচিবকে সাক্ষাৎ দেন। বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে মাঝেমধ্যেই সহকারী মহাসচিবের দপ্তর রাজনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করে, এটি তার ব্যতিক্রম নয়।

ফারহান বলেন, বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে আমাদের প্রত্যাশা, তারা জবাবদিহিতাপূর্ণ, বিশ্বাসযোগ্য, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য ভূমিকা রাখবেন।

এই বৈঠকের গুরুত্ব প্রসঙ্গে জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি এ কে এ মোমেন বলেন, সবকিছু নির্ভর করে দেন-দরবারকারীদের সঙ্গে থাকা দেশগুলোর ওপর। সেসব দেশ যদি খুব শক্তিশালী হয়, তাহলে প্রত্যাশিত ফল পাওয়া যায়। আর যদি দুর্বল হয়, তাহলে ফটোসেশনে পরিণত হয় এমন বৈঠক। বিএনপির মহাসচিবের বৈঠকের জন্য কারা তদবির করেছে তার ওপর সবকিছু নির্ভর করবে।

জাতিসংঘ মহাসচিবের সচিবালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যে কোনো কাজে জাতিসংঘকে উদ্বুদ্ধ করতে হলে শক্তিশালী বা প্রভাবশালী রাষ্ট্রের অকুণ্ঠ সমর্থন লাগে।

দেশে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী মোমেন বলেন, সকলকে মনে রাখতে হবে যে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বের অনেক প্রভাবশালী রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা ফোন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। সাবেক দুই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিন্টন এবং জন কেরিও শেখ হাসিনাকে ফোন করেন পৃথক দুটি ইস্যুতে। জাতিসংঘ থেকেও কয়েক বছর আগে একজন আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ঢাকায় গিয়ে দেন-দরবার করেছিলেন। ফলাফল সকলেই জানি। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা নিজের কর্মদক্ষতা এবং নেতৃত্বগুণে বাংলাদেশের মানুষের ওপর এতটাই আস্থাবান যে, অন্যের কথায় নড়চড় করেন না।

এদিকে ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ফখরুল বৈঠক করবেন বলে বিএনপি নেতাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনে তদবির চালাতে বিএনপি ওয়াশিংটনে একটি ‘লবিং ফার্ম’ ভাড়া করেছে বলেও খবর দিয়েছে রাজনীতি বিষয়ক ম্যাগাজিন পলিটিকো।

লবিস্ট নিয়োগের প্রতিক্রিয়ায় ওবায়দুল কাদের শুক্রবার বলেন,আওয়ামী লীগের নামে নালিশ করতে বিএনপি লবিস্ট নিয়োগ করেছে। চুক্তি অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া ‘ব্লু স্টার স্ট্র্যাটেজিক’কে আগস্ট মাসে ২০ হাজার ডলার এবং বছরের বাকি মাসগুলোয় ৩৫ হাজার ডলার করে দিতে হবে। বিএনপি এতো টাকা কোথায় থেকে পেলো? এতো টাকা লন্ডন থেকে এসেছে। লন্ডন মানে আপনারা বুঝতেই পারছেন ওখানে কে থাকে।

শুক্রবার ধানমন্ডিতে আনোয়ার খান মডার্ণ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মন্ত্রী একথা বলেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে কেন লবিস্ট নিয়োগ করা হলো। আমাদের চাপ দেওয়ার জন্য এটা করা হয়েছে। আমাদের শেকড় দুর্বল নয়। আমাদের শেকড় বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের বহু গভীরে। অন্য কারোর চাপে আমরা নতি স্বীকার করবো না, আমরা নতি স্বীকার করবো বাংলাদেশের মানুষের কাছে।

মন্ত্রী বলেন, বিএনপি লবিস্ট নিয়োগ করতে পারে না। লবিস্ট নিয়োগের কি আছে। বাংলাদেশ কি পাকিস্তান, সুদান, সোমালিয়া, ইরাক, আফগানিস্তান, দক্ষিণ সুদান, ইয়েমেন ও যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ সিরিয়া হয়ে গেছে যে লবিস্ট নিয়োগ করতে হবে।

জাতিসংঘে বিএনপি নালিশ করতে গেছে অভিযোগ তুলে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি আর আন্দোলন করতে পারে না। তাদের এখন নালিশই পুঁজি। তবে যার সঙ্গে বৈঠক করতে গেছে তিনি (জাতিসংঘের মহাসচিব) এখন ঘানায়।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত