ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : কিছুক্ষণ আগে
শিরোনাম

রূপগঞ্জে ধান কাটার শ্রমিক সঙ্কট, শঙ্কায় কৃষক

  রূপগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৬ এপ্রিল ২০২০, ১৫:২৮  
আপডেট :
 ১৬ এপ্রিল ২০২০, ১৫:৩৯

রূপগঞ্জে ধান কাটার শ্রমিক সঙ্কট, শঙ্কায় কৃষক

করোনায় কাম কাজ বন্ধ। ত্রাণ নাই, ঘরে খাবার নাই। না খেয়ে মরার উপক্রম। ত্রাণের কথা মাইনসের মুখে হুনছি। আজ পর্যন্ত চোখে দেখি নাই। অল্প একটু ধান লাগাইছিলাম। অনেক আশায় বুক বেধেছিলাম। সেই আশারও এখন গুড়েবালি। খেতে ধান পাইক্যা আছে। বাড়ি আনার কাটার মানুষ পাচ্ছি না।

বাহিরের শ্রমিক নাই। স্থানীয় শ্রমিকরা অনেক টেহা চায়। ঋণের টেহায় ধান চাষ করে এখন মরণদশা। আশায় ছিলাম ধান বেইচ্যা ঋণ পরিশোধ করমু। ভাই আমাগো গরীবের কেউ নাই। এখন কি করমু আল্লাহই ভাল জানেন। মনের দুঃখে এমনি করে কথাগুলো বলছিলেন উপজেলার কৃষক নায়েব আলী।

রূপগঞ্জে এখন ইরি ও বোরো ধান কাটার মৌসুম শুরু হয়েছে। করোনা সঙ্কটে ধান কাটার শ্রমিকরা ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। এ অবস্থায় জমিতে পাকা ধান নিয়ে বিপদে আছেন কৃষক।

রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউনিয়নের কৃষক গবিন্দ বলেন, ভাই কি আর কমু (বলব), খেতে (জমিতে) ধান পেকে আছে, লোক পাচ্ছি না। কিভাবে ধান কেটে বাড়ি আনব সেই চিন্তায় এখন অস্থির। পাকা ধান ঘরে তুলতে না পারলে খামু কি আর খরচের টাকা সব জলে যাবে। ভাই কিছু লেখেন যাতে কাজের লোকজন পাওয়া যায়।

উপজেলায় বৈশাখের প্রথম দিন থেকেই ইরি-বোরো ধান কাটা শুরু করেছে স্থানীয় কৃষকেরা। নতুন ধানের মৌ মৌ গন্ধে কৃষকের মুখে হাসি ফুটে ওঠলেও ধান কাটার শ্রমিকই পাচ্ছেন না তারা। বিগত বছরগুলোর তুলনায় এ বছর ফলন বেশি হয়েছে বলে কৃষকদের ধারনা।

উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, এবছর রূপগঞ্জের বিভিন্ন ইউনিয়নের মোট ৬ হাজার ৭শ হেক্টর জমিতে ইরি- বোরো ধান চাষ করা হয়েছে। কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে মাঠে ঘুরে কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছেন। তাই ফলনও ভাল হয়েছে। কিন্তু শ্রমিক সংঙ্কটের কারণে কষ্টের ফসল ঘরে তুলতে পারছেন না কৃষকরা। এতে ফসল নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন কৃষকরা। আর যা-ও কিছু শ্রমিক পাচ্ছেন, তাদের একজন শ্রমিককে মাথাপিছু দিতে হচ্ছে ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত। আবার চুক্তিতে ধান কাটালে বিঘা প্রতি গুনতে হচ্ছে ৮হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। সঙ্গে আরো দিতে হচ্ছে তিন বেলা খাবার, বিড়ি ও নাশতার টাকা। এতে করে কৃষকের উৎপাদন ব্যয় ক্রমেই বেড়ে চলছে।

রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউনিয়নের কৃষকেরা হতাশা নিয়ে বলেন, আমরা কোন দিকে যাব। বিগত বছরগুলোতে ধানের তেমন একটা ভাল ফলন পাইনি। অতি বৃষ্টিতে ধান তলিয়ে গেল আবার কোনো বছর খড়ায় ধানে চিটা হয়ে গেল। আর এ বছর পাকা ধান কাটাতেই পারছি না। ফসল মাঠে পড়ে আছে। শ্রমিক পাচ্ছি না। আর যা-ও পাচ্ছি তারা আবার অনেক মজুরি হাঁকছে (চায়)। তারপারও শ্রমিকের ভয়াবহ সঙ্কট।

উপজেলার খামারপাড়া এলাকার কৃষক আমির হোসেন বলেন, আমি এবার ৩ বিঘা জমি চাষ করেছি। অনেক টাকা ব্যয় হয়েছে। সরকার বলেছিল ঋণ দেবে, আমি কোনো ঋণ পাইনি। ঋণের জন্যে ব্যাংকে গেলে ব্যাংক জামানত চায়। কিন্তু তারপরও অনেক কষ্টে ধারদেনা নিয়ে টাকা জোগার করে জমি চাষ করেছি। কিন্তু এখন পাকা ধান কাটার শ্রমিক পাচ্ছি না।

আরেক কৃষক জালাল উদ্দিন বলেন, কি আর করা শ্রমিক পাচ্ছিনা, তাই বলে নিজেই ধান কাটছি।

এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম জানান, আমরা শ্রমিক সঙ্কটের বিষয়টি জানি। ধান কাটার যে মেশিন আছে তা ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছি । কিন্তু তা অনেক ব্যয়বহুল। অনেক কৃষকের পক্ষেই এটাা ক্রয় করা সম্ভব না। তাছাড়া সব ধরনের মাটিতে এটা ব্যবহারও করা যায় না।

আমাদের মাঠকর্মীরা সব সময় কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা (এসিল্যান্ড) তরিকুল ইসলাম বলেন, এ দুর্যোগের দিনে ভোগান্তি কিছুতো হবেই। সাবদান ও সচেতন থাকতে হবে। কৃষি শ্রমিকের জন্য লকডাউন শিথীল করা আছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/ এমএম

  • সর্বশেষ
  • পঠিত