ঢাকা, রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

এক যুগেও হয়নি সংস্কার

রূপগঞ্জের দুঃখ রূপসী-কাঞ্চন সড়ক

  রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৭ জুলাই ২০২০, ১৫:২৬

রূপগঞ্জের দুঃখ রূপসী-কাঞ্চন সড়ক

“সামনে ঈদ আসছে। কোরবানির গরু কিনতে হবে। কৃষকরা গরু নিয়ে রূপসী-কাঞ্চন সড়ক দিয়েই হাটে যাচ্ছে। প্রায় সময়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। অভিশপ্ত সড়কেই আমাদের কেটে গেল ১২টি বছর। দুঃখের বিষয়, সড়কটি মেরামতে কেউ এগিয়ে এলো না। রূপগঞ্জে বুক চিরেই শীতলক্ষ্যা নদী। শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্ব পাড়েই অসহায় এ সড়কটির অবস্থান। প্রতিদিন এ সড়কটি ব্যবহার করে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ। রূপসী-কাঞ্চন সড়কটি এখন রূপগঞ্জবাসীর দুঃখ। আসন্ন কোরবানির ঈদেও ভাঙ্গাচোরা খানাখন্দকে ভরা এ অভিশপ্ত সড়কাটই আমাদের ভরশা।”

এমনি করে কথাগুলো বলছিলেন হাটাব এলাকার ওমর ফারুক ভুইয়া।

সড়কের খানাখন্দের ছবি তুলতে গেলে মঠের ঘাটের পাশের দোকানদার আমান উল্লাহ চেঁচিয়ে বলে উঠলেন, “ভাই ছবি তুইল্যা লাভ নাই। এই পর্যন্ত কত্তো ছবি উঠাইলো। কাম অয় না। যেই সড়ক, হেই থাহে। এহান দিয়া মন্ত্রী-চেয়ারম্যান-ইউএনও আহে। কেউ মাথা ঘামায় না।”

তিনি বলেন, “একটু সামনে গেলেই উপজেলা পরিষদ, ইউএনও অফিস। তারপরেও হেগো চোহে পড়ে না। হেরা সইতে পারলে আমরাও পারুম সইতে। আমাগো কপাল খারাপ। দশ বছর ধইরা এ অবস্থা। কোন পরিবর্তন নাই। মরণের পরে যদি সড়ক ভালা অয়। রূপগঞ্জের রূপসী-কাঞ্চন সড়কের ১৪ কিলোমিটার সড়কের পুরো অংশেই খানাখন্দে ভরা। কোথাও কোথাও এঁদো ডোবা। গত ১২ বছর ধরে এখানকার মানুষ বঞ্চনার শিকার হচ্ছে। প্রতিদিন লাখো মানুষ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে।”

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্যস্ত এ সড়কের দু’পাশে গড়ে উঠেছে সিটি অয়েল কারখানা, নাভানা কারখানা, প্রাণ আরএফ কারখানা, এসিআই সল্ট কারখানাসহ প্রায় ৩৫টি শিল্প প্রতিষ্ঠান। এসব কারখানায় প্রায় ১৫ হাজার শ্রমিক কাজ করে বলে জানান স্থানীয়রা। এছাড়া সরকারি মুড়াপাড়া কলেজ, গন্ধবপুর উচ্চ বিদ্যালয়, রূপসী নিউ মডেল স্কুল এন্ড কলেজ, হাটাবো আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়সহ ১১টির বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

সড়কটি থেকে মাত্র ৫ মিনিটের দূরত্বে রয়েছে উপজেলা পরিষদ, উপজেলা প্রশাসনের কার্যালয়। স্থানীয় সংসদ সদস্য পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী, উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার থেকে শুরু করে সরকারি কর্মকর্তারা এ সড়ক দিয়ে চলাচল করেন। এছাড়া আমন্ত্রণে কিংবা সরকারি কোন অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, উপ-সচিবরা এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করেন। কিন্তু খানাখন্দ সবার চোখে পড়লেও নজর নেই কারো।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, রূপসী শহীদ বকুল চত্বর থেকে কাঞ্চন মায়ার বাড়ি পর্যন্ত সড়কের পুরো অংশজুড়েই খানাখন্দে ভরা। সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি জমে এঁদো ডোবায় পরিণত হয়। কোথাও কোথাও বড় বড় গর্ত। যানবাহন তো দূরের কথা, লোকজনের হেঁটে চলাও দায়। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ সড়ক দিয়েই পণ্যবাহী ট্রাক ও যাত্রীবাহী যান চলাচল করছে।

দড়িকান্দি এলাকায় কথা হয় পঞ্চাশোর্ধ নুরু মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, “ভাই এ সড়কের কথা আর কইয়েন না। ১২টা বছর অইয়া গেছে এ সড়কের এমন অবস্থা। আমাগো সইয়া গেছেগা। কত্তো আন্দোলন অইলো কিন্তু সড়ক অয় না।”

উপজেলা এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৭ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়িবাঁধ হিসেবে নির্মিত হলেও পরবর্তী সময়ে এটি এলজিইডির সড়ক হিসেবে অধিভুক্ত হয়। সড়কটি সংস্কারের জন্য ৬৫ কোটি ব্যয়ে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে সড়টি চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।

তবে ঠিক কবে নাগাদ কাজ শুরু হবে সেটা জানেন না রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী এনায়েত হোসেন। তিনি বলেন, প্রকল্পটি এডিবির অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। অনুমোদন পেলে দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। তবে সেটা কবে নাগাদ সেটা তিনি জানেন না।

মুড়াপাড়া ফেরিঘাট সংলগ্ন সড়কের পাশে শাহজাহান মিয়ার হোটেল। কথা হয় শাহজাহান মিয়ার সঙ্গে। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “ভাই এই কথা কইয়া আর কি লাভ অইবো। ১২ বছর একটা রাস্তা এতো খারাপ থাহে এই প্রথম দেখলাম। রাস্তা খারাপ থাহনে হোটেলে বেঁচাকেনা নাই।”

অটোচালক আমজাদ হোসেন বলেন, “ভাই বৃষ্টি অইলে রাস্তায় হাঁটু পানি জমে। গাড়ি অনেক সময় পইড়া যায়। আর বৃষ্টি না থাকলে ধুলায় চোখ-মুখ ভইরা যায়।”

মুড়াপাড়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক শাহ আলম মিয়া বলেন, “এ সড়ক এখন অভিশাপে পরিণত হয়েছে। লাখো মানুষ গত ১২ বছর ধরে বঞ্চনার শিকার হচ্ছে।”

মুড়াপাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তৌকির আহম্মেদ বলেন, “সড়কের পাশেই আমাদের কলেজ। এতো সুন্দর রাজবাড়ি আর আম্রকানন। এতো সৌন্দর্য ম্লান করে দিয়েছে ভাঙ্গাচোরা সড়ক।”

স্থানীয়রা জানান, সড়ক সংস্কারের দাবিতে বিভিন্ন এলাকার লোকজন বিভিন্ন সময়ে মানববন্ধন, বিক্ষোভ করেছেন। সড়কের এঁদো ডোবায় ধানের চারা লাগিয়ে প্রতিবাদ করা হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তারা জানান, সড়ক নষ্টের পেছনে শিল্পকারখানার পণ্যবাহী ট্রাকও দায়ী।

উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শাহজাহান ভূঁইয়া বলেন, “সড়কের দু’পাশে গড়ে উঠা শিল্পকারখানার বড় বড় ট্রাক চলাচলের কারণে সড়কটি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চেষ্টা চলছে দ্রুত যেনো মেরামত করা যায়। তবে বর্ষায় সেটা সম্ভব হবে না মনে হয়।”

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত