ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৯ মিনিট আগে
শিরোনাম

সংসদে বিচারবহির্ভূত হত্যা নিয়ে সমালোচনা বিএনপির

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৮:১২  
আপডেট :
 ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৮:২০

সংসদে বিচারবহির্ভূত হত্যা নিয়ে সমালোচনা বিএনপির

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে সংসদে কঠোর সমালোচনা করেছেন বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ ও রুমীন ফারহানা। তারা বলেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পরিচয়ে মানুষকে উঠিয়ে নিয়ে হত্যা করে নাটক সাজানো হচ্ছে। আর সরকার সেগুলোর সার্টিফিকেট দিচ্ছে। এ সময় হারুন সব মানুষ আইনের আশ্রয় লাভের সমান সুযোগ পাবেন কিনা তা জানতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে সংসদে ৩০০ বিধিতে বিবৃতি দাবি করেন।

বিএনপির দুই এমপির বক্তব্যের জবাব দিয়েছেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান। তিনি অভিযোগ করে বলেন, কেউই দায় এড়াতে পারেন না। বিএনপি সরকারের আমলে ক্লিনহার্টের নামে অসংখ্য রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে বিচারবহির্ভূতভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। অনেকে সেই নির্যাতনে চিহ্ন নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। মিথ্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে।

সোমবার জাতীয় সংসদে আইনপ্রণয়ন কার্যক্রম শেষে পয়েন্ট অব অর্ডারে ফ্লোর নিয়ে হারুনুর রশীদ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ তোলেন।

তিনি বলেন, আজকে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকর প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশের বিষয়ে যে প্রতিবেদন দিয়েছে তাতে গত ১০/১২ বছরে তিন হাজারের বেশি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আজকে যারা স্বজনকে হারিয়েছে, গুম হয়েছে বা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে তারা কি আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার পাবে না? সংবিধানের এই বিধানগুলো কি আমরা স্থগিত করে দিয়েছি?

এসময় নিজের নির্বাচনী এলাকার তিনটি ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের‘ উদাহরণ দিয়ে বিএনপির এই এমপি বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর বলা হয় পুলিশের ওপর বেপরোয়া গুলিবর্ষণ! এটা কি সম্ভব! পুলিশের কাছে যে অস্ত্র থাকে তা মোকাবিলার জন্য সন্ত্রাসীদের কাছে যে অস্ত্র দরকার...এখানে উদ্ধার দেখানো হয় হাতে তৈরি বাটুল, পিস্তল। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পরিচয়ে মানুষকে উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। উঠিয়ে নিয়ে উপর্যুপরী হত্যা করছে।আর নাটক বানাচ্ছে। সরকার সেগুলোর সার্টিফিকেট দিচ্ছে। এইসব ঘটনা ঘটেই চলেছে।

পুলিশের গুলিতে টেকনাফে মেজর (অব.) সিনহার হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গও আনেন তিনি।

‘আইনের লাভের অধিকার সব নাগরিক সমানভাবে পাবে কিনা’ সেই বিষয়ে সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করেন এ এমপি।

২০০৩ সালে প্রণীত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতন ‍ও মৃত্যু নিবারণ আইনের প্রসঙ্গ টেনে রুমিন ফারহানা বলেন, এই আইনটিতে চমৎকার সব ধারা থাকা সত্ত্বেও দুঃখজনক হলেও সত্য এই আইনের আওতায় খুব বেশি মামলা হয়নি। যে গুটিকয়েক মামলা হয়েছে তার অগ্রগতি সম্পর্কে বেশি জানি না। একটি মামলার রায়ের তারিখ নির্ধারণ হয়েছে বলে গণমাধ্যমে খরব এসেছে। এই দীর্ঘ সাত বছর গেল এই সময় অসংখ্য ব্যক্তি হেফাজতে নির্যাতন ও মুত্যুর শিকার হয়েছেন। কিন্তু তার মামলাগুলো কী হলো? কেন পরিবার মামলা করার সাহস পায় না? কেন মামলা হয় না? হলেও সেগুলোর কী অবস্থাও তার কিছুই আমরা জানি না।

তিনি বলেন, যেই রাষ্ট্রে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে বিভিন্নভাবে উৎসাহ দেয়া হয়। তা ইঙ্গিত করে সেখানে বিচার বিভাগ ধ্বংস হয়েছে। আইনের শাসনের ধ্বংস হয়েছে। মানুষ বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থা হারিয়েছে। রাষ্ট্রটি একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।

জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান আইনজীবীদের এনরোলমেন্ট পরীক্ষার প্রসঙ্গে পয়েন্ট অব অর্ডারে বক্তব্য দিতে ফ্লোর নিলেও তার আগে তিনি বিএনপির দুই এমপির বক্তব্যের জবাব দেন। তিনি বলেন, আমরা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে সবাই। এখানে ওসি প্রদীপের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু দায় কেউই এড়াতে পারেন না। ওসি প্রদীপের প্রথম পদোন্নতিটি বিএনপির আমলে হয়েছে। সেখান থেকেই শুরু হয়েছে। অপারেশন ক্লিনহার্ট বিএনপি সরকারের আমলে হয়েছিল। ওই ক্লিনহার্টের সময় অসংখ্য রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে বিচারবহির্ভূতভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। অনেকে সেই নির্যাতনে চিহ্ন নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। মিথ্যা মামলায় আসামি করা আমরা আগেও দেখেছি। ময়মনসিংহ সিনেমা হলে বোমা বিস্ফোরণ মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা সাবের হোসেন চৌধুরী ও অধ্যক্ষ মতিউর রহমানকে আসামি করা হয়েছিল। আমরা তখনও এর বিরুদ্ধে ছিলাম। এখনও এর বিরুদ্ধে। আমরা সমস্ত অমানিবতার বিরুদ্ধে।

বাংলাদেশ জার্নাল/আরকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত