ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

ধসে পড়েছে শতবর্ষী মঠ, সংস্কার দাবি

  রাজবাড়ী প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০১ ডিসেম্বর ২০২০, ২০:০১  
আপডেট :
 ০১ ডিসেম্বর ২০২০, ২১:০০

ধসে পড়েছে শতবর্ষী মঠ, সংস্কার দাবি
ছবি: জমিদার দ্বারকানাথ সাহা চৌধুরী ও তার স্ত্রীর জ্ঞানোদা সুন্দরীর সমাধি সৌধ

রাজবাড়ী সদরের পাচুরিয়ার মুকুন্দিয়ায় অবস্থিত তৎকালীন জমিদার দ্বারকানাথ সাহা চৌধুরী ও তার স্ত্রীর জ্ঞানোদা সুন্দরীর সমাধি সৌধ’র ওপর তৈরি প্রাচীনতম দুটি মঠের একটি ধসে পড়েছে। অবশিষ্ট বড় মঠ মন্দিরটি রক্ষণাবেক্ষণ করতে স্থানীয়রা দাবি জানিয়েছেন।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, জ্ঞানোদা সুন্দরীর স্মৃতির ওপর নির্মিত মঠের চারপাশ থেকে অপরিকল্পিতভাবে মাটি খনন ও প্রাচীর তুলে ফেলায় মঠটি ধসে পড়ার অন্যতম কারণ। এ জন্য স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আব্দুল মান্নান মীরকে দায়ী করছেন। তবে অভিযোগটি সত্য নয় বলে দাবি করেছেন ইউপি সদস্য।

রাজবাড়ী সদর উপজেলা থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে পাচুরিয়া ইউনিয়নের মুকুন্দিয়া বাজার সংলগ্ন মুকুন্দিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পাশে অবস্থিত ১০৫ বছর বয়সী প্রাচীনতম দুটি মঠ। যার একটির উচ্চতা প্রায় ১০০ ফুট। অপরটির উচ্চতা ছিলো প্রায় ৪০ ফুট।

ছবি ১: জমিদার দ্বারকানাথ সাহা চৌধুরী ও তার স্ত্রীর জ্ঞানোদা সুন্দরীর সমাধি সৌধ

বড় মঠের মধ্যে স্মৃতিস্তম্ভে খোদাই করে লেখা রয়েছে পরমারাধ্য পিতৃদেব দ্বারকানাথ সাহা চৌধুরী। জন্ম ১২৪৪/১২ জ্যৈষ্ঠ, বুধবার, মৃত্যু ১৩২২/২০ জ্যৈষ্ঠ, বৃহস্পতিবার। মঠের একপাশে পাকা সড়ক, আরেকপাশে বিশাল ডোবা রয়েছে।

গত ২২ অক্টোবর দিবাগত গভীর রাতে দ্বারকানাথ সাহার পাশে অবস্থিত জ্ঞানোদা সুন্দরীর ছাট মঠটি ধসে পাশের ডোবায় পড়ে যায়।

এলাকার প্রবীণ শত বছর বয়সী কোনাইল গ্রামের বাসিন্দা আহম্মদ আলী মল্লিক বলেন, জমিদার দ্বারকানাথ সাহার মৃত্যুর পর যেখানে তাকে দাহ করা হয় তার স্মৃতি রক্ষায় সেখানে প্রায় ১০০ ফুট লম্বা মঠটি নির্মাণ করা হয়। আমার বড় বোন কোলে করে দেখাতে নিয়ে যেত। কয়েক বছর তার স্ত্রী জ্ঞানোদা সুন্দরী মারা গেলে পাশেই দাহ করে সেখানেও পরিবার থেকে প্রায় ৪০ ফুট লম্বা মঠ নির্মাণ করেন।

ভারত-পাকিস্তান ভাগের পর সবাই ৩০ থেকে ৪০ একর জমি, বিশাল বাড়ি ফেলে কলকাতায় চলে যান। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর জমিদার দ্বারকানাথ সাহার এক ভাই এসে ঘুরে যান। ততদিনে তাদের রেখে যাওয়া ওইসব সম্পত্তি বেহাত হয়ে গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা কলেজের লাইব্রেরিয়ান শরিফ উদ্দিন বলেন, মুকুন্দিয়ায় তৎকালীন জমিদার দ্বারকানাথ সাহার বিশাল বাড়ি ছিলো। তাদের মৃত্যুর পর পরিবার থেকে দুটি মঠ নির্মাণ করেন। জমিদার পরিবারের নিজেদের এসএনসি ইট দিয়ে নির্মাণ করা হয়। যেহেতু মঠ দুটি প্রাচীন ঐতিহ্য, স্মৃতি ধারণ করছে, তাই এটা যাতে রক্ষা পায়, মানুষজন যাতে জানতে পারে এর ঐতিহ্য, ইতিহাস রক্ষায় সরকারের কাছে জোর দাবি জানান। এই ঐতিহ্য রক্ষা করা না গেলে এর ইতিহাসও বিলীন হয়ে যাবে।

ছবি ২: জমিদার দ্বারকানাথ সাহা চৌধুরী ও তার স্ত্রীর জ্ঞানোদা সুন্দরীর সমাধি সৌধ

মুকুন্দিয়া বাজারের ব্যবসায়ী ও নৈশ পাহারাদার রফিক খান বলেন, গেল ২২ অক্টোবর দিবাগত রাত দুইটার দিকে দোকানে বসে তিনিসহ আরো দুইজন পাহারাদার মিলে চা পান করছিলেন। এ সময় হঠাৎ করে বিকট শব্দ হয়। কারণ খুঁজতে বাজারের চারপাশ ঘুরে দেখেন ছোট মঠটি ডোবায় ধসে পড়েছে।

পাচুরিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মহিসা খোলা গ্রামের আব্দুল মান্নান শেখ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জমিদার দ্বারকানাথ সাহা এবং তার স্ত্রীর মৃত্যু হলে পরিবারের লোকজন স্মৃতির ওপর মঠ দুটি নির্মাণ করেন। ভারত-পাকিস্তান ভাগের পর তারা দেশ ছেড়ে চলে যান। তাদের রেখে যাওয়া বহু সম্পত্তি স্থানীয় একটি চক্র অবৈধভাবে ভোগ দখল করছেন। বর্তমান ইউপি সদস্য মান্নান মীর মঠের বিশাল ডোবাটি দখল করে মাছ চাষ করছে।

মুকুন্দিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হাতেম আলী খান বলেন, মঠ দুটির বয়স অনেক হওয়ায় নির্মাণ সামগ্রী দুর্বল হয়েছে। যে কারণে মাঝেমধ্যে ধসে পড়ছে। মঠটি ধসে পড়ার পর অনেকে দেখতে আসছেন। মঠের ডোবা-পুকুরে স্থানীয় ইউপি সদস্য মান্নান মীর মাছ ও ধানের আবাদ করেন।

ছবি ৩: জমিদার দ্বারকানাথ সাহা চৌধুরী ও তার স্ত্রীর জ্ঞানোদা সুন্দরীর সমাধি সৌধ

স্থানীয় ৫ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য আব্দুল মান্নান মীর মাটি কাটার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, প্রতিপক্ষ গ্রুপের কিছু মানুষ এ ধরনের মিথ্যা অভিযোগ করছেন। মঠের চারপাশ দিয়ে আমার জমি। এখন পানি থাকায় মাছ চাষ করছি। দুই মাস পর পানি কমে গেলে ধান চাষ করবো। কি কারণে আমি মাটি কাটবো? বরং মঠ ধসে আমার জমিতে পড়ে আরো ক্ষতি হয়েছে।

পাচুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী আলমগীর হোসেন বলেন, মঠ দুটি রক্ষণাবেক্ষণ করতে কয়েকবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরকে জানিয়েছি। এর আগে সাবেক জেলা প্রশাসক রফিকুল ইসলাম খান দেখে গেছেন, কিন্তু কোনো ব্যবস্থা হয়নি। অনেক পুরাতন ও পাশ থেকে অপরিকল্পিতভাবে মাটি খনন করায় ছোট মঠটি ধসে গেছে।

জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম জানান, রাজবাড়ী পূজা উদযাপন কমিটি এ ব্যাপারে লিখিতভাবে জানিয়েছে। যেহেতু মঠ মন্দিরটি সদর উপজেলার মধ্যে অবস্থিত সে কারণে সদর ইউএনও’র কাছে লিখিত বিষয়টি পাঠিয়েছেন। সদর ইউএনও স্থানীয়দের নিয়ে কমিটি গঠন করেছেন। তারাই এখন এ মঠ মন্দিরটি রক্ষণাবেক্ষণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। ডিসি আরো বলেন, সদর ইউএনও এবং সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মঠ মন্দিরের স্থানটি পরিদর্শন করেছেন এখনো কোনো প্রস্তাব তার কাছে আসেনি এলে জানাবেন।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত