ঢাকা, শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

লক্ষ্মীপুর পৌরসভার নির্বাচন

স্থানীয় জনমতে এবারো এগিয়ে এম এ তাহের

  লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০২ ডিসেম্বর ২০২০, ১৮:২৫

স্থানীয় জনমতে এবারো এগিয়ে এম এ তাহের
ছবি: সংগৃহীত

লক্ষ্মীপুর পৌরসভার আসন্ন নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে এবারো স্থানীয় জনমতে এগিয়ে রয়েছেন তিন মেয়াদের পৌর মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা এম এ তাহের। এর মধ্যে বিগত দুই মেয়াদ তিনি মেয়র হিসেবে টানা দায়িত্ব পালন করছেন এ পৌরসভায়।

অধিকাংশ পৌর বাসিন্দারা মত প্রকাশ করে জানিয়েছেন, বিগত দশ বছরে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নের মাধ্যমে এম এ তাহের লক্ষ্মীপুর পৌরসভাকে আধুনিক পৌরসভা হিসেবে গড়ে তুলেছেন। এ পৌরসভা এলাকার দশ বছর আগের চিত্র আর বর্তমান চিত্র তুলনা করলে তা-ই প্রমাণ হয়। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এ পৌরসভাকে তিনি সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত করতে বিভিন্নভাবে প্রচেষ্টায় রয়েছেন। বর্তমান সরকারের শাসনামলে তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়ে উঠবে, যদি এম এ তাহের ফের মেয়র নির্বাচিত হন। আর সিটি কর্পোরেশন হয়ে গেলে এখানকার বাসিন্দাদের জীবনমান অনেকগুণ বৃদ্ধি পাবে। এ কারণেই অধিকাংশ পৌরবাসী তাকে পুনরায় মেয়র হিসেবে দেখতে চেয়ে নিজেদের মত প্রকাশ করেছেন।

তবে এর পাশাপাশি এম এ তাহের এর নিন্দুকেরাও থেমে নেই। তার বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা নিয়ে ভুল তথ্য পরিবেশন করে সাধারণের মাঝে তারা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে চলছে বলে দাবি করেন তাহের অনুসারীরা।

বিগত দশ বছর সময়কালে লক্ষ্মীপুর পৌরবাসীর জীবনমানসহ এখানে অবকাঠামো উন্নয়ন কতটুকু বৃদ্ধি পেয়েছে এমন জিজ্ঞাসার যথার্থ উত্তর খুঁজতে এ পৌরসভার টানা দুই মেয়াদের মেয়র আলহাজ আবু তাহের’র শরণাপন্ন হয়ে অনেক তথ্য জানা যায়।

মেয়র হিসেবে পৌর এলাকা ও নাগরিকদের নিয়ে তার ভিশন ও গৃহীত মিশনের অর্জন সফল হয়েছে কতভাগ তা তিনি নিজেই ব্যক্ত করেছেন। নিজের ভাষায় তিনি নিশ্চিত বাস্তবায়নের কাজগুলো নিয়ে পরিচ্ছন্ন উপস্থাপনা করেছেন। আর দ্ব্যর্থহীনভাবে লক্ষ্মীপুর পৌরবাসীর উন্নত জীবনমান নিশ্চিত করতে পৌরসভাকে ‘সিটি কর্পোরেশনে’ উন্নীতকরণ কাজ সম্পন্ন করার ঘোষণা দিয়েছেন। এ লক্ষ্য অর্জনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছেন বলে দাবি করেছেন তিনি।

এসব নানান বিষয়ে আলোচনায় মেয়র আবু তাহের নিজেই জানান, ‘চূড়ান্ত পরিকল্পনা হচ্ছে লক্ষ্মীপুর পৌরসভাকে সিটি কর্পোরেশনে উন্নীতকরণ। সে লক্ষ্যেই বিগত আট বছর থেকে কাজ এগিয়ে চলছে। একটা পৌরসভা যখন সিটি কর্পোরেশনের মর্যাদা লাভ করে তাতে নাগরিকের জীবনমানও ব্যাপকভাবে উন্নত হয়। কারণ পৌরসভার তুলনায় একটা সিটি কর্পোরেশনে সরকার অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যাপকহারে বরাদ্দ দিয়ে থাকে। সিটি কর্পোরেশনের নাগরিকের উন্নত জীবনমানের জন্য যাবতীয় সকল কিছুই বাস্তবায়ন করা হয়ে থাকে। নাগরিক জীবন সুবিধার জন্য সরকারের একটা নির্ধারিত শৃঙ্খলিত পরিকল্পনা রয়েছে। লক্ষ্মীপুরে এখন পর্যন্ত পৌরসভার বাসিন্দা হয়ে থাকাতে আমরা সেইসব সুবিধা অর্জনের সুযোগ পাচ্ছি না। একটা পৌরসভা সিটি কর্পোরেশনে উন্নতিলাভ করার জন্য ন্যূনতম একটি মানসম্পন্ন হতে হয়। আমরা লক্ষ্মীপুর পৌরসভাকে প্রয়োজনীয় মানসম্পন্ন করে গড়ে তুলতে কাজ শুরু করেছিলাম। অনেকদূর এগিয়ে এসেছি। সেক্ষেত্রে একটা নির্ধারিত উন্নয়ন বাস্তবায়নের ছক তৈরি করে আমরা ক্রমান্বয়ে এগিয়ে চলছি। এতদিনে হয়তো তা সম্পন্ন হয়ে যেতো। মাঝে বৈশ্বিক মহামারি করোনার কবলে আমরা একবছর পিছিয়ে পড়েছি। যার জন্য আরো এক দু’বছর অপেক্ষা করলে আমরা কাঙ্ক্ষিত লক্ষে পৌঁছাতে সক্ষম হবো ইন শা আল্লাহ্‌।’

তিনি বলেন, ‘লক্ষ্মীপুরের সাধারণ মানুষ হয়তো জানে না সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত হতে হলে একটা পৌরসভার কী মান থাকতে হয়। প্রথমে এখানকার নাগরিকদের একটা নির্ধারিত হারের কর সম্পন্ন হতে হয়। তারপরে রাস্তাঘাট, দোকানপাট, পানি ব্যবস্থাপনা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ নির্ধারিত অবকাঠামো ন্যূনতম মানের উন্নত থাকতে হয়। অথচ সেই অনুযায়ী গত দশ বছর আগেও লক্ষ্মীপুর পৌরসভার তেমন কোনো মান ছিলো না। দশ বছর আগের পরিস্থিতিতে লক্ষ্মীপুরকে সিটি কর্পোরেশন উন্নীত হওয়ার মতো যোগ্যতার মান সৃষ্টি করা কল্পনাতীত ছিল। অথচ সেই অবাস্তব স্বপ্নটাকে বাস্তবে রূপ দিতেই আমরা দৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। এ পথচলায় অনেক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। তা সত্বেও আমরা অনেকদূর এগিয়ে এসেছি।

বিরোধীপক্ষ বিরোধিতা করবে, সমালোচকরা সমালোচনা করবে, এটাই তাদের বৈশিষ্ট্য। এসব অল্পকিছু মানুষ নিজেদের ব্যক্তি স্বার্থ পূরণে সাধারণ মানুষকে ভুল তথ্য পরিবেশন করে বিভ্রান্ত করে থাকে। এ কারণেও বেশিরভাগ প্রতিবন্ধকতা হয়েছে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে। সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত হওয়ার যোগ্যতা সম্পন্ন হতে হলে এখানকার নাগরিকদের প্রদেয় কর অবশ্যই হার অনুযায়ী একটা নির্ধারিত মানের হতে হবে। সেজন্য অংকের হিসেবে এখানে নাগরিক কর একটু বৃদ্ধি করতেই হয়েছে। অথচ পৌরবাসী যদি সঠিক বুঝে থাকে সিটি কর্পোরেশনের বাসিন্দা হতে পারলে তাদের নাগরিক সুবিধা কোন জায়গায় গিয়ে দাঁড়াবে, তাহলে তারা কখনোই সমালোচকদের কথায় বিভ্রান্ত হওয়ার কথা নয়। সিটি কর্পোরেশনের সুবিধাপ্রাপ্তির বিষয়টা কত ব্যাপ্তির হয়তো পৌরবাসী এখন পর্যন্ত সেই বিষয়ে পরিষ্কার ধারনা রাখতে পারছে না। সত্যি হয়তো তা তাদের সাধারণ কল্পনায় বোধগম্য বা উপলব্ধ নয়। তবে যেদিন লক্ষ্মীপুর পৌরসভা বাস্তবিক সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত হবে সেই দিন এখানকার মানুষ উন্নত জীবনমানের সুবিধাপ্রাপ্ত হয়ে আশ্চর্যজনক উৎফুল্ল হবেই। আর সিটি কর্পোরেশনের সেই স্বাপ্নিক প্রচেষ্টা অচিরেই স্বপ্নের খোলস মুক্ত হয়ে বাস্তবতা পাবে। কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই এ ব্যাপারে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত ডায়েরীতে তিনি এটিকে নোট করে রেখেছেন। আর গুরুত্বসহকারে নির্ধারিত প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে নির্দেশনা দিয়েছেন। সুতরাং এ ব্যাপারে নেতিবাচক ধারনার কোন কারণই নেই। অথবা হতাশা পোষণের দরকার নেই। আমরা সত্যি সেই লক্ষ্য পূরণে সকল বাধা উৎরিয়ে দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়ে আছি আজ।’

তিনি আরো বলেন, ‘নাগরিকদের মধ্যে যারা পিছিয়ে থাকা বাস্তুহারা ও নিম্নতম আয়ের, তারা এলাকায় বিক্ষিপ্ত বসবাস করলে একটা সিটি কর্পোরেশনের মানসম্পন্ন যোগ্যতার থাকে না ওই পৌরসভা। তাই আমরা লক্ষ্মীপুরের ৭টি ওয়ার্ডে সুপরিকল্পিত ৭টি বস্তি এলাকা গড়ে তুলেছি ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে। এসবে পৃথক ডিপ টিউবওয়েল, উন্নত পায়খানাসহ বাসযোগ্য ঘর তৈরি করে দেয়া হয়েছে। এসবের সুবিধাভোগ করবে প্রায় ৪০ পরিবারের ৩ হাজার মানুষ।

তাছাড়া সর্বসাধারণের প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী লাভে আধুনিক মানের বিপনিবিতান থাকার দরকার। আমরা গত কয়েকবছরে লক্ষ্মীপুর পৌর বিপনীবিতান নামের দু’টি মার্কেট, মসজিদ মার্কেটসহ কয়েকটি আধুনিক মানের মার্কেট গড়েছি। এছাড়া আরো কয়েকটি আধুনিক বিপনীবিতান গড়ে উঠতে সহযোগিতা দিয়েছি। লক্ষ্মীপুর পৌর হকার্স মার্কেটকে আধুনিক মানের করে গড়তে মোটা অংকের ব্যয় নির্ধারণ করে অনেকদূর কাজ এগিয়ে এনেছি। মামলা জটিলতায় যা এখন সাময়িক থমকে আছে। আশা রাখি অল্পদিনেই সেই জটিলতা কেটে যাবে।

এখানে নিরবচ্ছিন্ন পানি সরবরাহে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন ফুরাতে আমরা প্রায় ২৬ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করেছি। যার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এসবের মধ্যে ওভারহেড ট্যাংক, ট্রিটমেন্ট পল্যান্ট, প্রোডাকশন টিউবওয়েল ও পাইপলাইন স্থাপনের কাজ রয়েছে।

পৌরসভার নিজস্ব তহবিল ও এডিবি তহবিল থেকে এখানে প্রতি অর্থবছরে প্রায় অর্ধশত সড়ক উন্নয়নে প্রয়োজন মোতাবেক বরাদ্দ দিয়ে সড়কগুলোতে যেকোনো ধরণের চলাচলের টেকসই উপযোগী করে তুলেছি। পৌর এলাকার পানি নিষ্কাশনে প্রায় ১০টি মানসম্পন্ন বক্স ড্র্রেন তৈরি করেছি। এসব কাজে প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এছাড়া উন্নত বর্জ্য ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনায় আমরা ডাম্পিং প্রকল্প গ্রহণ করেছি। যা বাস্তবায়ন কাজ প্রক্রিয়াধীন।

উন্নত আবাসন সুবিধার জন্য তন্তুবায় সমিতির মাধ্যমে দুটি আধুনিক ভবন বাস্তবায়ন প্রকল্প গ্রহণ করেছি। যার একটি অনেক আগে থেকেই বাসযোগ্য রয়েছে। আর দ্বিতীয়টির কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়া ব্যক্তি উদ্যোগের একাধিক আবাসিক ভবন নির্মাণে আমরা সহযোগিতা দিয়ে বাস্তবায়ন কাজ এগিয়ে দিয়েছি। প্রক্রিয়াধীন রয়েছে আরো কয়েকটি।

কেবলমাত্র বিগত পাঁচ বছরের হিসেবে পৌর এলাকার যাবতীয় অবকাঠামো উন্নয়নে প্রায় একশত তিয়াত্তর কোটি টাকার বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

নিজের কিছু অসফলতাও তিনি নিজে ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘এখন বাকি মাত্র কিছু মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন কাজ মাঝপথে থেমে আছে স্থান জটিলতার কারণে। অথচ বরাদ্দ লাভ হয়েছে এ কাজে। শেষ পর্যন্ত মজু চৌধুরীর হাট এলাকায় জায়গা অধিগ্রহণ এর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। তা হলেই এ কাজটি দ্রুত বাস্তবায়নে এগিয়ে চলবে। লক্ষ্মীপুর মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়নের কাজটিও একই বাস্তবতার সাথে রয়েছে। মেঘনা নদীর মজু চৌধুরীর ঘাট এলাকায় লঞ্চঘাট স্থাপনের কাজ, লক্ষ্মীপুর রেললাইন স্থাপনের কাজ বাস্তবতার আলো পেতে আর কিছু দূর রয়েছে। লক্ষ্মীপুর শহরের আইডিয়াল কলেজ এবং পৌর শহীদ স্মৃতি স্কুল সরকারীকরণে কাজও অনেকদূর এগিয়ে রয়েছে।

এসব কাজগুলো বাস্তবায়নে স্থানীয় সাংসদ একেএম শাহজাহান কামাল এর সাথে সমন্বয় করে একটু একটু করে এগিয়ে নেয়া চলছে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত