ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

তরুণ বেকারদের অনুপ্রেরণা!

  নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৬ ডিসেম্বর ২০২০, ০৬:৪৭

তরুণ বেকারদের অনুপ্রেরণা!
ছবি: প্রতিনিধি

একজন ভালো বন্ধু হলেই জীবন বদলে যায় আর সেখানে যদি ভালো বন্ধুত্বের ঐক্য হয় তাহলে যেকোন বাধাই আর বাধা মনে হয় না। তেমনি তিন বন্ধুর অসীম সাহস, বন্ধুত্বের দৃঢ় বন্ধন আর অক্লান্ত পরিশ্রমের শক্তি হঠাৎ করে কোনো অভিজ্ঞতা ছাড়াই শিক্ষার্থী থেকে উদ্যোক্তা করে তুলেছেন। তারাই এখন তরুণ বেকারদের অনুপ্রেরণার পথ।

এ তিন বন্ধু হলো নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লা পুলিশ লাইন্স এলাকার সাইদুর রহমান আরিয়ান, ২নং বাবুরাইল এলাকার সাইদ হোসেন সানি ও ১নং বাবুরাইল এলাকার মো. মোস্তাফিজুর রহমান সাজু। তিনজনই নারায়ণগঞ্জ কলেজের বিবিএস শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। মহামারি করোনায় কলেজ বন্ধ থাকায় পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি।

কথিত আছে ‘অলস মস্তিস্ক শয়তানের আখড়া’। তবে এ কথার যে ভিত্তি নেই সেটাই প্রমাণ করেছেন এ তিনবন্ধু। আড্ডায় নেওয়ার উদ্যোগ এখন তাদের ব্যবসায়ী হিসেবে গড়ে তুলেছে। নিজেদের জমানো টাকা দিয়ে শুরু করা ‘ফুড অ্যান্ড ফায়ার’ খাবার দোকান এখন নারায়ণগঞ্জে বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছাত্র থেকে শুরু করে তরুণদের কাছে।

সরেজমিনে শহরের জামতলা হাজী ব্রাদার্স রোডে ‘ফুড অ্যান্ড ফায়ার’ খাবার দোকানে গিয়ে দেখা গেছে, ‘ছোট পরিসরে খাবার দোকানে মাত্র ১০ থেকে ১২ জনেরই বসে খাবার ব্যবস্থা রয়েছে। আর তারপাশে দাঁড়িয়ে খাবার তৈরি করেন বাবুর্চি। আর তিন বন্ধু মিলেই খাবারের অর্ডার নেন ও খাবার পরিবেশন করে থাকেন। পরিসর যেহেতু ছোট আর জনপ্রিয়তা বেশি সেখানে ক্রেতাদের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকাটাই স্বাভাবিক। এর সঙ্গে পারর্সেলও দিয়ে যাচ্ছেন সমানভাবে।

ব্যবসার শুরু কিভাবে জানতে চাইলে সাইদুর রহমান আরিয়ান বলেন, তিনজনের বন্ধুত্ব হয় নারায়ণগঞ্জ কলেজে বিবিএস ভর্তি হওয়ার পর থেকেই। তখন থেকেই তিন বন্ধু গল্প আড্ডা আর ঘুরে ফিরে অলস সময় কাটাতাম। ২০১৯ সালের শেষ দিকে ৫নং খেয়াঘাট এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে আড্ডা দেওয়ার সময় আমরা বলছিলাম নিজেদের কিছু করার প্রয়োজন। তখন আমি কোচিং সেন্টারে পড়াই, সানি থান কাপড়ের ব্যবসা আর সাজু বাবার সুতার ব্যবসা শিখছে। আর তখনই মাথায় আসে একটা রেস্টুরেন্ট দিবো। এর থেকেই শুরু।

৯৯ টাকায় মানসম্মত খাবার? জবাবে আরিয়ান বলেন, আমাদের ইচ্ছা ছিল আমরা যে খাবার দোকান দিব সেখানে আমাদের মতো ছাত্রদের অগ্রাধিকার বেশি থাকবে। কম টাকায় যাতে শিক্ষার্থীরা স্বাদের খাবারটা খেতে পারে। আমরা এখনও ছাত্র। আমাদের পকেটে ১০০ টাকা আছে তার মানে অনেক টাকা। কিন্তু এ ১০০ টাকায় মান সম্মত ও পেট ভরার মতো খাবার কমই আছে। সবাই একটু স্বস্তায় ভালো খাবার চায়। সেই লক্ষ্য থেকে আমরা ৯৯ টাকায় স্টুডেন্ট প্ল্যাটার অফার দিয়ে দোকান শুরু করি। যা এখন বেশ জনপ্রিয়। এর পাশাপাশি অন্য খাবারগুলোতে ছাত্রদের জন্য ১০ শতকরা ছাড়ও আছে।

মোস্তাফিজুর রহমান সাজু বলেন, শুরুতে আমাদের কেউ সাপোর্ট করেনি। এমনকি পরিবার থেকেও এ ব্যবসার করার জন্য কোন রকম সহযোগিতা এমনকি সাপোর্টও করেনি। আমাদের খুব কষ্ট করতে হয়েছে। তবে এখন যখন নাম শুনে তখন তারা বেশ খুশি। তারাই এখন আমাদের উৎসাহ দেয় যাতে বড় দোকান নিয়ে কাজ করি। প্রয়োজনে সহযোগিতা করবে।

তিনি বলেন, আমরা ছোট থেকেই বড় হতে চাই। যার জন্যই আমরা ছোট পরিসরে এখানে দোকান নিয়েছি। ভবিষ্যতে যদি আমাদের নিজেদের সামর্থ হয় তাহলে অবশ্যই আরো বড় পরিসরে শুরু করবো। তবে যত বড় দোকানই হোক শিক্ষার্থীদের এখন যেমন সুযোগ সুবিধা দেয়া হয় তখনও এ সুযোগ সুবিধা থাকবে।

সাইদ হোসেন সানি বলেন, আমাদের মতো যারা শিক্ষার্থী আছে তাদেরকেও পড়ালেখার পাশাপাশি কোন কিছু করা প্রয়োজন। নিজে থেকে আত্মনির্ভরশীল হতে পারবে। চাকরি জন্য কারো উপর ভরসা করতে হবে না। নিজের পড়ালেখার খরচ চালিয়ে পরিবারের সহযোগিতাও করতে পারবে। এতে নিজের অবস্থান তৈরি হবে তেমনি আরো মানুষের কর্মসংস্থান হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এইচকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত