ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

উত্তপ্ত ভোটের মাঠ

  কিরণ শেখ

প্রকাশ : ১৫ জানুয়ারি ২০২১, ০৮:৪৭

উত্তপ্ত ভোটের মাঠ
চলছে পৌরসভা নির্বাচন। ছবি সংগৃহীত

আগামী ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় ধাপে ৬০টি পৌরসভায় মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই উত্তেজনা বিরাজ করছে। নির্বাচনী এলাকাগুলোতে প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা, সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ, গাড়ি ভাঙ্চুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।

আর এসব ঘটনার কারণে নির্বাচনী এলাকাগুলোতে উত্তাপ চলছে। অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এসব পৌরসভার নির্বাচনী এলাকাগুলো থেকে বাংলাদেশ জার্নালের প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জার একটি বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। তিনি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী।

ওই ভিডিওতে আবদুল কাদের মির্জা নির্বাচন ও দলীয় এমপিদের সমালোচনা করে বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তিন-চারটা আসন বাদে আমাদের এমপিরা পালানোর পথ খুঁজে পাবে না। নোয়াখালীর স্থানীয় রাজনীতি সম্পর্কে তিনি সেসব কথা বলেছেন বলেও জানিয়েছেন। আওয়ামী লীগ থেকে তার এই বক্তব্যকে স্থানীয় রাজনৈতিক বিরোধ হিসাবে দেখা হচ্ছে।

এদিকে গত মঙ্গলবার নারায়ণঞ্জের তারাব পৌরসভা নির্বাচনে দুই কাউন্সিলর পদপ্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এই সংঘর্ষ চলাকালে দু’পক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ, গাড়ি ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। আর এতে দুই গ্রুপের ১৫ থেকে ২০ জন আহত হয়েছে বলে তারা দাবি করছে।

সংঘর্ষের বিষয়ে রূপগঞ্জ থানার ওসি মাহমুদুল হাসান বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী আনোয়ার হোসেন এবং রুহুল আমিনের সমর্থকের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসময় এলাকায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।’

এ বিষয়ে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান জানান, দুই কাউন্সিলর পদপ্রার্থীকে ডাকা হয়েছে। শুনানি করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত ১০ জানুয়ারি গাজীপুরের শ্রীপুরেও হামলা, পাল্টা-হামলা এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনার পর শ্রীপুর থানায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। দুই মামলার একটি করেছেন বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী শ্রীপুর পৌর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট কাজী খান। আরেকটি করেছেন, শ্রীপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম মোল্লা।

এই দুই মামলায় শ্রীপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং শ্রীপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতিসহ ১৩৭ জনের নাম উল্লেখ করে ৫শ’জনকে আসামি করা হয়েছে।

অন্যদিকে ঝিনাইদহের শৈলকুপা পৌর নির্বাচনের প্রচার ও প্রচারণা নিয়ে সংঘাতে কাউন্সিলর প্রার্থী শওকত হোসেনের ছোট ভাই লিয়াকত হোসেন বল্টু নিহত হয়েছে। শওকত ও তার ভাই আওয়ামী লীগ নেতা লিয়াকত বুধবার রাতে কবিরপুরের ভূইমালী পাড়াতে প্রচারণা করতে গেলে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আলমগীর খান বাবুর সমর্থকরা তাকে ছুরিকাঘাত করে। এই হামলায় শওকত হোসেনও আহত হন। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় বল্টুকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

বল্টুর মৃত্যুর ৫ ঘণ্টা পরে রাত ২টায় শৈলকুপার কুমার নদ থেকে একই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী আলমগীর খান বাবুর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। তবে, কীভাবে তার মৃত্যু হয়েছে সে বিষয়টি এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ।

এই দুই মৃত্যুর ঘটনায় শৈলকুপা পৌরসভার ভোটারদের মধ্যে চরম উদ্বেগ ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তবে পরবর্তী সংঘর্ষ এড়াতে নির্বাচনী এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে শৈলকুপা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আরিফুল ইসলাম বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘শওকত হোসেন ও তার ছোটভাই আওয়ামী লীগ নেতা লিয়াকত হোসেন বল্টু রাতে পৌর এলাকার কবিরপুরের ভূইমালী পাড়াতে প্রচারণা চালাতে গিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী পাঞ্জাবি মার্কার আলমগীর খান বাবুর সমর্থকরা তাকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। এই হামলায় শওকত হোসেনও আহত হন। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় বল্টুকে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।’

এ দিকে বুধবার রাতে শেরপুর পৌরসভার নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত প্রার্থীর সমর্থকেরা দোকানপাট ভাঙচুর করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, শেরপুর পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের দলীয় বর্তমান মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া। এই সংবাদ পেয়ে মনোনয়নবঞ্চিত আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সমর্থকরা লাঠি, লোহার রড ও হকিস্টিক দিয়ে শহরের মুন্সিবাজার ও রঘুনাথ বাজারের দোকানপাট ভাঙচুর করে। আর এই হামলায় তিন জন আহত হয়েছে।

এ বিষয়ে শেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘এই ঘটনায় সন্দেহে দুজনকে আটক করা হয়েছে। আর বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’

প্রসঙ্গত, আগামী শনিবার দ্বিতীয় ধাপের ৬০টি পৌরসভায় সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এসব পৌরসভার ২৮টি এলাকায় ইভিএমে এবং বাকিগুলোতে ব্যালট পেপারে ভোট নেয়া হবে।

দ্বিতীয় ধাপের জন্য ইসি প্রথমে ৬১টি পৌরসভার তফসিল ঘোষণা করলেও নীলফামারীর সৈয়দপুরের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। অংশগ্রহণকারী একজন মেয়র প্রার্থীর মৃত্যুতে ওই পদে ভোট স্থগিত করা হয়েছে।

ইসির জনসংযোগ পরিচালক যুগ্মসচিব এস এম আসাদুজ্জামান বলেন, ‘সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য এবং ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন করা হয়েছে।’

‘ভোটকেন্দ্র ছাড়াও নির্বাচনী এলাকাসমূহে বিজিবি, পুলিশ, আনসার মোতায়েন করা হচ্ছে। এছাড়া মোবাইল টিম এলাকায় টহল দেবে এবং স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন থাকবে। নির্বাচনী এলাকাসমূহে যানবাহন চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।’

দ্বিতীয় ধাপের ভোট তথ্য

৬০টি পৌরসভায় মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর মিলিয়ে তিন পদে প্রার্থী ৩২৮৬ জন।

মেয়র পদে ২২১, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদে ৭৪৫ জন এবং সাধারণ আসনের কাউন্সিলর পদে ২৩২০ জন প্রতিদ্বন্দ্বী।

১০৮০টি ভোট কেন্দ্রে ভোট কক্ষ ৬৫০৮টি।

ভোটার ২২ লাখ ৪০ হাজার ২২৬ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ১১,০৮,৪৩১ এবং নারী ১১,৩১,৮৩১।

দ্বিতীয় ধাপে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত চার মেয়র

মেয়র পদে সিরাজগঞ্জের কাজিপুর, পাবনার ভাঙ্গুরা, পিরোজপুর সদর এবং নারায়ণগঞ্জের তারাব পৌরসভায় মেয়র পদে একক প্রার্থী হওয়ায় তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। সাতজন সাধারণ কাউন্সিলরও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

যেসব পৌরসভায় ভোট

ইভিএমে ভোট- দিনাজপুরের বীরগঞ্জ, বগুড়ার সারিয়াকান্দি ও সান্তাহার, নওগাঁর নজিপুর, রাজশাহীর কাঁকনহাট ও আড়ানী, নাটোরের নলডাঙ্গা, সিরাজগঞ্জের কাজীপুর, পাবনার ফরিদপুর, মেহেরপুরের গাংনী, কুষ্টিয়ার কুমারখালী, ঝিনাইদহের শৈলকুপা, বাগেরহাটের মোংলা, মাগুরা সদর, পিরোজপুর সদর, টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী, ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া, নেত্রকোনার কেন্দুয়া, কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর, ঢাকার সাভার, নরসিংদীর মনোহরদী, নারায়ণগঞ্জের তারাবো, শরীয়তপুর সদর, সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর, কুমিল্লার চান্দিনা, ফেনীর দাগনভূঞা, নোয়াখালীর বসুরহাট, খাগড়াছড়ি সদর ও গাজীপুরের শ্রীপুর।

ব্যালট পেপারে ভোট- চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ, নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ, কুষ্টিয়া সদর, কুষ্টিয়ার মিরপুর, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, দিনাজপুর সদর, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা, গাইবান্ধা সদর, দিনাজপুরের বিরামপুর, পাবনার ভাঙ্গুড়া, সাঁথিয়া, সুজানগর, সুনামগঞ্জ সদর, হবিগঞ্জের মাধবপুর, নবীগঞ্জ, ফরিদপুরের বোয়ালমারী, পাবনার ঈশ্বরদী, বগুড়ার শেরপুর, রাজশাহীর ভবানীগঞ্জ, সিরাজগঞ্জের বেলকুচি, উল্লাপাড়া, সুনামগঞ্জের ছাতক, নাটোরের গোপালপুর, গুরুদাসপুর, বান্দরবানের লামা, সিরাজগঞ্জ সদর, রায়গঞ্জ, কিশোরগঞ্জ সদর, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা।

দেশের পৌরসভা রয়েছে মোট ৩২৯টি। প্রথম ধাপের তফসিলের ২৪টি পৌরসভায় ইভিএমে ভোট হয় ২৮ ডিসেম্বর। এছাড়া আর তৃতীয় ধাপে ৬৪টি পৌরসভায় ৩০ জানুয়ারি এবং চতুর্থ ধাপে ৫৬টি পৌরসভায় ১৪ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

আরো পড়ুন

৩য় ধাপের পৌর নির্বাচন ৩০ জানুয়ারি​

পোস্টারে ছেয়ে গেছে পৌরসভা, চলছে ভোট প্রার্থনা​

বাংলাদেশ জার্নাল/ওয়াইএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত