ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

শ্বশুরের অপমানের বদলা নিতে শ্যালককে হত্যা

  যশোর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৭ জুলাই ২০২১, ১৬:৩০

শ্বশুরের অপমানের বদলা নিতে শ্যালককে হত্যা
ছবি- প্রতিনিধি

শ্বশুরের অপমানের প্রতিশোধ হিসাবে পরিকল্পিতভাবে শ্যালক মাহমুদ রাতুলকে (১৮) ঝিনাইদহের মহেশপুর থেকে যশোরের চৌগাছায় ডেকে নিয়ে হত্যা করে ভগ্নিপতি শিশির আহমেদ (১৯)। হত্যাকাণ্ডের আগে কোমল পানীয়র সঙ্গে চেতনানাশক মিশিয়ে পান করিয়ে অচেতন করে নেয়া হয়।

যশোর ডিবি পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর শিশির এই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে বর্ণনা দেয়। একইসঙ্গে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত স্কচটেপ, নিহত রাতুলের মোবাইল ফোনসেট ও পরিহিত কাপড় উদ্ধার করা হয়েছে। শিশির ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার কাশিপুর গ্রামের হায়দার আলী মন্ডলের ছেলে।

শনিবার যশোর ডিবি কার্যালয়ে একটি প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানানো হয়। প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন, যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) জাহাঙ্গীর আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক সার্কেল) বেলাল হোসাইন, ডিবি পুলিশের ওসি রুপন কুমারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।

ব্রিফিংয়ে এ জানানো হয়, বছর খানেক আগে ফেসবুকের মাধ্যমে শিশিরের সঙ্গে পরিচয় হয় নিহত রাতুলের বোনের। এরপর তারা নিজেরাই বিয়ে করেন। বিয়ের পর শিশিরের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় রাতুলের পরিবারের লোকজন। শিশির স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় বসবাস করতো এবং একটি সিকিউরিটি কোম্পানিতে চাকরি করতো।

মাস ছয়েক আগে রাতুলের বাবা মহিউদ্দিন বাড়িতে ডেকে পাঠান শিশির ও তার মেয়েকে। সেখানে শিশিরকে নানা কটু কথা বলেন মহিউদ্দিন। এতে শিশির অপমানিত হয়। সে ওইদিনই প্রতিশোধ নেয়ার চিন্তা করে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় শিশির কোটচাঁদপুরের বাড়িতে ফেরে। গত ১২ জুলাই শিশির তার স্ত্রীর মোবাইল ফোন ব্যবহার করে রাতুলকে ডেকে চৌগাছার লষ্করপুরে যেতে বলে। রাতুল ফোন পেয়ে লষ্করপুরে যায়। আর শিশিরও কোটচাঁদপুর থেকে লস্করপুরে যায়।

সেখানকার একটি পাটক্ষেতের পাশে শিশির ও রাতুল দুজনে গাঁজা সেবন করে। এরপর কোমল পানীয়র বোতলে শিশির কৌশলে চেতনানাশক মিশিয়ে দেয়। ওই পানীয় পান করে রাতুল অচেতন হয়ে পড়ে। পরে পাটক্ষেতের মধ্যে নিয়ে গিয়ে রাতুলের শরীর থেকে কাপড় খুলে হাতে ও মুখে স্কসটেপ দিয়ে বাঁধা হয়। পরে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয় রাতুলকে। পরিকল্পিতভাবে এই কাজ করার আগে শিশির হ্যান্ডগ্লাভস পরে নেয়।

হত্যাকাণ্ডের পর শিশির কাপড়গুলো অন্য একটি পাটক্ষেতে ফেলে রেখে যায়। রাতুলের মোবাইল ফোন থেকে সিমকার্ড খুলে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ইটের নিচে পুঁতে রাখে। পরে সে তার বাবার সাথে ট্রাকে করে চট্টগ্রামে চলে যায়।

ব্রিফিংয়ে বলা হয়, শিশিরের বাবা হায়দার আলী বিজিবির সাবেক সদস্য ছিলেন। বিডিআর বিদ্রোহের পর তিনি অভিযুক্ত হয়ে চাকরিচ্যুত হন। পরে তিনি ট্রাক চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। মামলাটি হাতে পাওয়ার পর যশোর ডিবি পুলিশ তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে হত্যাকারীর সন্ধান করতে থাকেন। নিহতের পরিবারের আগেই সন্দেহ হয়েছিল শিশিরের ওপর। পুলিশ চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় গিয়ে গত শুক্রবার শিশিরকে আটক করে যশোরে নিয়ে আসে।

শিশির হত্যার কথা স্বীকার করে এবং তার দেখানো মতো নিহত রাতুলের পরিহত কাপড়, মোবাইল ফোনসেট এবং সিমকার্ড উদ্ধার করে। প্রেস ব্রিফিংয়েও আটক শিশির সাংবাদকর্মীদের সামনে হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দেয়।

এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের এসআই শামীম হোসেন জানিয়েছেন, আসামি আটকের পরে শনিবার তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। তাকে আরো জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত নের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত