ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২২ মিনিট আগে
শিরোনাম

বাউল শিল্পীর মাথা ন্যাড়া করায় শিক্ষকসহ গ্রেপ্তার ৩

  বগুড়া প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৬:১১

বাউল শিল্পীর মাথা ন্যাড়া করায় শিক্ষকসহ গ্রেপ্তার ৩
ছবি: প্রতিনিধি

বগুড়ার শিবগঞ্জের পল্লী অঞ্চলে মেহেদী হাসান (১৬) নামের এক বাউল শিল্পীকে নির্যাতন করে মাথা ন্যাড়া করার অভিযোগে তিন গ্রাম্য মাতব্বরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

মঙ্গলবার দিবাগত রাতে উপজেলার জুড়ি মাঝপাড়া গ্রাম থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- উপজেলার গুজিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জুড়ি মাঝপাড়ার গ্রামের মেজবাউল ইসলাম (৫২), শফিউল ইসলাম খোকন (৫৫) ও তারেক রহমান (২০)। ভুক্তভোগী বাউল শিল্পী মেহেদী হাসান জুড়ি মাঝপাড়ার বেলাল হোসেনের ছেলে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, মেহেদী হাসান গুজিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে আর্থিক অভাব অনটনের কারণে আর পড়াশুনা করতে পারেননি। এরপর পার্শ্ববর্তী ধাওয়াগীর মিল্কীপুর গ্রামের বাউল শিল্পী মতিয়ার রহমান মতিনের সঙ্গে চলাফেরা শুরু করেন। মেহেদী হাসান গত কয়েক বছর ধরে বাউল শিল্পী মতিনের সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গেয়ে উপার্জিত টাকায় জীবন জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন। বাউল শিল্পী হওয়ার কারণে মেহেদী হাসান সাদা লুঙ্গি, সাদা ফতুয়া এবং সাদা গামছা ব্যবহার করতেন। পাশাপাশি বাউলরীতি অনুযায়ী মাথায় লম্বা চুল রাখেন।

গ্রাম্য মাতব্বরেরা বাউল শিল্পী মেহেদী হাসানের পরনের পোশাক এবং মাথার চুল নিয়ে বিভিন্ন সময় অশালীন মন্তব্য ও কটাক্ষ করতেন। কটাক্ষের প্রতিবাদ করায় গত শনিবার দিবাগত রাত ১০টায় গ্রামের পাঁচ মাতব্বর শাফিউল ইসলাম (খোকন), মেজবাউল ইসলাম (মেজবা), আবু তাহের মন্ডল, তারেক রহমান ও ফজলু মিয়া বাউল শিল্পী মেহেদীর বাড়িতে যান। তারা মেহেদীকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে জোর করে চুল কাটার মেশিন দিয়ে মাথা ন্যাড়া করে দেন।

বাউল শিল্পী মেহেদী তার মাথার চুল কাটতে বাধা দিলে নির্যাতন করা হয়। শুধু চুল কেটে ও নির্যাতন করেই ক্ষান্ত হননি, গ্রাম্য মাতব্বরেরা বাউল গান ছেড়ে না দিলে এবং মাথার চুল আবার বড় করলে তাকে গ্রামছাড়া করার হুমকি দেন।

এ ঘটনার পর থেকে লজ্জা ও ভয়ে কয়েকদিন বাড়ির বাইরে যাননি বাউল শিল্পী মেহেদী। পরে তার আত্বীয়-স্বজন ও বাউল ওস্তাদদের সাথে আলোচনা করে শিবগঞ্জ থানায় পাঁচ গ্রাম্য মাতব্বরদের নামে এজাহার দায়ের করেন। শিবগঞ্জ থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে তিন গ্রাম্য মাতব্বরকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যহত রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

শিবগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমির বাউল শিল্পী মতিয়ার রহমান মতিন বলেন, বাউল শিল্পী মেহেদী হাসান আমার শিষ্য। আমি তাকে নিয়ে বিভিন্ন বাউল গানের অনুষ্ঠানে গিয়ে বাউল গান করি। আমরা গান করে যে অর্থ পাই তা দিয়ে জীবন জীবিকা নির্বাহ করি। কিন্তু বর্তমানে কিছু অতি উৎসাহী গ্রাম্য মাতব্বরেরা বাউল শিল্পীদের সামাজিকভাবে হেয় করার জন্য এই ঘটনা ঘটিয়াছে। আমি প্রশাসনের কাছে এর সুষ্ঠু বিচার চাই।

শিবগঞ্জ থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম বলেন, বাউল শিল্পীর মাথা ন্যাড়া করে দেয়ার ঘটনাটি অত্যন্ত অমানবিক। থানায় মামলা হয়েছে। তিন গ্রাম্য মাতব্বরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যহত রয়েছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত