বৃদ্ধ বাবাকে লাথি মেরে কারাগারে শিক্ষক ছেলে
পাবনা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০২১, ১৯:২৩
পাবনার চাটমোহরে শিক্ষক ছেলে মজনুর রহমান (৪৬) তার বৃদ্ধ বাবা আতাউর রহমানকে লাথি মেরে লাঞ্ছিত করেছেন।
এ ঘটনায় বুধবার দুপুরে বাবা আতাউর রহমান থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। তবে পুলিশ অভিযুক্ত ছেলে মজনুর রহমানকে মামলার আগেই আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে।
এর আগে মঙ্গলবার চাটমোহর উপজেলার মহেলা বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। বাবার করা মামলায় সেই ছেলে এখন পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা, প্রত্যক্ষদর্শী ও মামলার অভিযোগে জানা গেছে, উপজেলার মহেলাবাজার পোস্ট অফিসে সাব পোস্ট মাস্টার হিসেবে চাকরি করেন বৃদ্ধ ওই বাবা। তার ছেলে মজনুর রহমান চাটমোহর সরকারি আরসিএন অ্যান্ড বিএসএন মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ভোকেশনাল শাখার ট্রেড ইন্সট্রাক্টর পদে কর্মরত। তাদের মধ্যে জমি নিয়ে পারিবারিক বিরোধ ছিল।
জানা গেছে, মঙ্গলবার সকালে বাবা আতাউর রহমানের চাকরিস্থল মহেলা ডাকঘরে যান মজনুর। ডাকঘরে ঢুকে বাবাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন তিনি। এক পর্যায়ে অফিসের কাগজপত্র তছনছ করে ডাকঘরের মোবাইল ফোনটি বাবার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেন। পরে মোবাইল ফোনটি নিয়ে মোটরসাইকেলে উঠতে চাইলে বাধা দেন বাবা। বাধা দেয়ায় বাবাকে লাথি মারেন তিনি।
এ সময় বাবার সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি ও ধস্তাধস্তিও করেন ছেলে মজনুর। পরে আশপাশের লোকজন এসে মজনুরকে নিবৃত করে পিটুনি দিয়ে তাড়িয়ে দেন। ঘটনার পর আতাউর রহমানকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে ভাইরাল হলে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
মঙ্গলবার দুপুরের পর বিষয়টি চাটমোহর থানায় প্রথমে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী বাবা। পরে পুলিশ মজনুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় নিয়ে যায়। বুধবার দুপুরে বাবার দায়েরকৃত মামলার পর ছেলেকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
ঘটনার পর স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে অভিযুক্ত মজনুর রহমান বলেন, অভিযোগ সত্য নয়। তার ভাগ্নে পরিকল্পনা করে ভিডিওটি করেছেন।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী বাবা বলেন, ছেলের কাছ থেকে এমন আচরণ তিনি আশা করেননি। মানসিকভাবে কষ্ট পেয়েছেন তিনি। সে কারণে আইনের আশ্রয় নিয়েছেন। এ ঘটনায় বিচার দাবি করেন তিনি।
চাটমোহর সরকারি আরসিএন অ্যান্ড বিএসএন উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুস ছালাম বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক ও লজ্জাজনক। একজন শিক্ষকের কাছ থেকে বাবার প্রতি এমন আচরণ কাম্য নয়। বিষয়টি আমি ইউএনও স্যারকে জানিয়েছি।
পাবনার বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ পাবনা কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ আলহাজ্ব মাহাতাব উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, এর চেয়ে লজ্জাকর বিষয় হতে পারে না। এমন কুলাঙ্গার ছেলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করি।
চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, বাবা বাদী হয়ে বুধবার দুপুরে মামলা করেছেন তার ছেলেকে অভিযুক্ত করে। মামলা নং ১৪। মামলার পরপরই ছেলে মজনুর রহমানকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে পাবনা জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
চাটমোহর সরকারি আরসিএন অ্যান্ড বিএসএন উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈকত ইসলাম বলেন, শুনলাম বাবা ছেলের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। আমি মামলার কপি চেয়েছি। কপি হাতে পাওয়ার পর কমিটির সদস্যরা বসে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে
