ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ মিনিট আগে
শিরোনাম

নির্বাচনী সহিংসতা

আদিত্যের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়া হলো না

  ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৩ ডিসেম্বর ২০২১, ১০:৪৬

আদিত্যের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়া হলো না
ছবি: প্রতিনিধি

লেখাপড়া করে মানুষের মতো মানুষ হবে। বাবা-মা’র মুখ উজ্জ্বল করবে। সমাজে অবদান রাখবে। দেশসেবায় নিজেকে আত্মনিয়োগ করবে- এমন বুক ভরা আশা নিয়ে ছেলে আদিত্য বর্মণকে লেখা-পড়া করাচ্ছিলেন তার পিতা অবিনাশ রায়। অনেক কষ্ট করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার গণ্ডি পার করিয়ে ছেলেকে ভর্তি করান কলেজে।

আদিত্যেরও স্বপ্ন ছিলো লেখা-পড়া করে দেশমাতৃকার সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করতে সেনাবাহিনীর গর্বিত সদস্য হবে। সেভাবে নিজেকে প্রস্তুতও করে সে।

২ ডিসেম্বর শুরু হওয়া এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার কথা ছিল আদিত্যের। কিন্ত সে অংশ নিতে পারল না। পরীক্ষার তিনদিন আগে নির্বাচনী সহিংসতায় বিজিবির বুলেটে মৃত্যু হয় অত্যন্ত হাসি খুশি ও মেধাবী শিক্ষার্থী আদিত্য বর্মণের। নিমিষেই চুরমার হয়ে যায় আদিত্য ও তার বাবার স্বপ্ন।

আদিত্যের বাড়ি ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার খনগাঁও ইউনিয়নের ঘিডোব গ্রামে। নিন্মবিত্ত পরিবারের সন্তান সে। ঘিডোব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করে ভর্তি হয় উজ্জ্বলকোঠা উচ্চবিদ্যালয়ে। সেখান থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে জেএসসি এবং এসএসসি পাস করার পর লোহাগাড়া ডিগ্রি কলেজে এইচএসসি মানবিক শাখায় ভর্তি হয় আদিত্য।

এবারের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিল সে। ভালো ফল করতে প্রস্তুতিও নেয় আদিত্য। সব কিছুই ঠিক ঠাক ছিল। কিন্তু ২৮ নভেম্বর তৃতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ঘিডোব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোটের ফলাফলকে কেন্দ্র করে জনতার সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষ বাধলে বিজিবির গুলিতে প্রাণ হারায় আদিত্যসহ তিনজন। পণ্ড হয়ে যায় সবকিছু।

আদিত্যের পিতা অবিনাশ জানান, গোলাগুলির সময় তার ছেলে আদিত্য বাড়িতে ভাত খাচ্ছিল। গুলির শব্দ শুনে বাড়ি থেকে বের হয়ে স্কুলের দিকে যেতেই তার মাথায় গুলি লাগে। গুরুতর অবস্থায় রংপুরে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যায় সে।

আদিত্যর মা পার্বতী রানী রায় জানান, তার ছেলের স্বপ্ন ছিল- লেখাপড়া করে দেশমাতৃকার সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করতে সেনাবাহিনীর গর্বিত সদস্য হবে। তারাও আশায় বুক বেঁধেছিলেন ছেলে লেখাপড়া করে দেশের কাজে লাগবে। বাবা-মার মুখ উজ্জ্বল করবে। সে আশা নিরাশায় পরিণত হলো।

আদিত্যের একমাত্র ছোট ভাই নবম শ্রেণির স্কুলছাত্র উপাচার্য বর্মণ জানান, ভাইয়ের এমন মৃত্যুতে সে মানসিক শক্তি হারিয়ে ফেলেছে।

লোহাগাড়া ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক বলেন, অত্যন্ত হাসি-খুশি ও মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল আদিত্য বর্মণ। চলতি বছর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার কথা ছিল তার, কিন্তু সেটা আর হলো না। আদিত্যের জন্য আমরা সবাই শোকাহত।

বাংলাদেশ জার্নাল/ওএফ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত